ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

আমদানিতে চীনের বিকল্প পাওয়া দুষ্কর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৪, ১৬ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত। ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনীতি। বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাণিজ্য। করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যে খাত বিপদে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চীনের পণ্য ব্যবহার করে না দেশে এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক সব ঘরেই ব্যবহার হয় চীন থেকে আনা পণ্য। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে স্থবির চীনের জনজীবন। বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন; আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

চীন ছাড়া অন্যকোন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চীন যে দামে পণ্য দেয় তা অন্যান্য দেশে তিন থেকে চারগুন বেশি দাম পড়ে। এতে ক্রেতারা বেশি দামে কিনতে আগ্রহী হবেন না। 

চীনে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করে গত ডিসেম্বর মাসে। ৩১ ডিসেম্বর চীন সরকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। শুরুটা হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে। সেখানে ২৩ জানুয়ারি থেকে সবকিছু বন্ধ করে দেয় চীন সরকার। বাংলাদেশ কতটুকু চীননির্ভর, তা দেখা যায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রাথমিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে। এটি তৈরি করেছেন কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৫ হাজার ৬০৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার ২৫ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। আপনি যদি মোট আমদানি থেকে জ্বালানি ও খাদ্য বাদ দেন, তাহলে দেখবেন শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, মধ্যবর্তী পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে ২৫ ধরনের পণ্য ও ২৫ ধরনের কাঁচামাল অথবা মধ্যবর্তী পণ্যের মোট আমদানি ও সেখানে চীনের অংশ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ নির্ভরতা চীনের ওপরে। যেমন তুলা থেকে উৎপাদিত সুতা ও সমজাতীয় পণ্যের (এইচএস কোড নম্বর ৫২) ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট আমদানি ৫২০ কোটি ডলার, যার ৫৪ শতাংশ আসে চীন থেকে। বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও সরঞ্জাম, ইস্পাতের বিভিন্ন উপকরণ, আসবাবের সরঞ্জাম, জুতা ও সমজাতীয় পণ্য, খেলনা ইত্যাদি ১৫টি পণ্যের বিকল্প বাজার কী হতে পারে, তা–ও দেখানো হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। যদিও সেসব বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা কম আমদানি করেন। যেমন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও সরঞ্জামের ৫৭ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। দ্বিতীয় বড় উৎস ভারত, হিস্যা মাত্র ৭ শতাংশ। জার্মানি ও ইতালি থেকেও আসে। কিন্তু ইউরোপীয় পণ্যের যে দাম পড়ে, তা কেনার সাধ্য সাধারণের নেই।

চীনের বিকল্প পাওয়া দুষ্কর বলে মনে করেন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীন থেকে ভোগ্যপণ্য কম আমদানি করে। বেশি আসে মধ্যবর্তী পণ্য ও কাঁচামাল, যা ছাড়া কারখানা চালানো যায় না। এ ক্ষেত্রে সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটলে বাংলাদেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হবে, সেটা রপ্তানিমুখী শিল্পের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী কারখানার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

এক দৈনিককে দেওয়া মতামতে তিনি বলেন, ‘চীনের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি খুব বেশি নয়। কিছু কিছু খাত হয়তো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না বলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব বেশি হতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। বিকল্প কোথায়। বিকল্প উৎস দেশও তো কাঁচামালের জন্য অনেকটা চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীনের মতো সক্ষমতা কারও নেই।’

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫২ জন এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ৬ হাজার ৫১৬ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এছাড়া ৭৭ হাজার ৭৫৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এখন পর্যন্ত ১৫৭টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনেই এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮৬০ এবং সেখানে মারা গেছে ৩ হাজার ২১৩ জন।

এমএস/এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি