ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঈদ বাজার: স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৩, ১৬ মে ২০২০

করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতার অংশ হিসেবে পোশাক প্রদর্শনের পুতুলগুলোকেও পরানো হয়েছে মাস্ক- এএফপি

করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতার অংশ হিসেবে পোশাক প্রদর্শনের পুতুলগুলোকেও পরানো হয়েছে মাস্ক- এএফপি

করোনাকালের ঈদবাজারে ক্রেতা ও স্বাস্থ্যবিধি- এ দুয়েরই আকাল চলছে। করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমান ঈদ বাজারের অবস্থা অন্য সব বারের মতো নয়। সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলা হলেও জমেনি ঈদ বাজার। অধিকাংশ দোকানপাট-শপিংমলই বন্ধ। তবে যে কয়টি দোকান খুলেছে তাতেও নেই আমেজ। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশবাসীকে এ বছর কিছুটা ভিন্নভাবেই ঈদের দিনটি উদযাপন করতে হবে। তাই বেচাবিক্রি না থাকায় হতাশ বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেট, বিপণিবিতান ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।

করোনার বিস্তার রোধে অন্য সবকিছুর মতো গত ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট। ঈদ সামনে রেখে গত ১০ মে থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, একই সময়ে একাধিক ক্রেতার ভিড় এড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে যেসব দোকান খুলেছে, সেখানে এসব শর্ত মানা হচ্ছে না।

গতকাল ছিল রমজানের তৃতীয় শুক্রবার। অন্যান্য বছর রমজানের শুক্রবারে মার্কেটে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যায় না। মগবাজার, মৌচাক এলাকার বড় বিপণিবিতান না খুললেও খুলেছে সিদ্ধেশ্বরীর ‘আনারকলি’। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের সামনে খোলা জায়গায় যারা বাক্সে রেখে জামাকাপড় বিক্রি করছেন, তাদের এখানে ক্রেতাসমাগম মোটামুটি। কিশোরগঞ্জের মো. শাহজাহান ‘মায়ের দোয়া ফ্যাশন’র মালিক। তার দোকানটি ‘আনারকলি’র দ্বিতীয় তলায়। তিনি বিকেল সাড়ে ৪টায় জানালেন, ‘বউনি’ (বিক্রি শুরু করা) করতে পারেননি। সারাদিনে এক টাকার পণ্য বিক্রি হয়নি। অথচ গত বছর রোজার দিনগুলোতে দিনে ৩০-৩৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো। শুক্রবার ৫০ হাজার ছাড়াত। কিন্তু ভিন্ন চিত্র ‘আনারকলি’র সামনে রাস্তা ঘেঁষে দোকান ‘মনোলোভা’য়। সর্বোচ্চ ৫০ বর্গফুট আয়তনের দোকানটিতে তিনজন ক্রেতা ও দুই জন বিক্রেতা একই সময়ে জামাকাপড় ঘেঁটে দেখছিলেন। নিরাপদ কিংবা সামাজিক দূরত্ব তাদের মধ্যে ছিল না।

শুক্রবার বিকালে নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে মার্কেটটি বন্ধ থাকলেও তার আশপাশের ফুটপাতগুলোতে কিছু দোকানপাট বসেছে। তবে তাতে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। ডাকাডাকি করেও তেমন একটা ক্রেতা পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। তাদের আশা ঈদের দিন ঘনিয়ে আসলে ক্রেতা সাধারণের ভিড় কিছুটা বাড়বে।

বিকালে গাউছিয়া ও চাঁদনি চক মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ঈদের পোশাকের অন্যতম এ মার্কেটটি বন্ধ রয়েছে। আশপাশে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো দোকানপাট খুলেছে। এসব দোকানপাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন গত কয়েক দিনের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তেমন বেচাবিক্রি হচ্ছে না। আগামী দুই-একদিন ক্রেতাদের সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়বে।

জানতে চাইলে রিয়া ফ্যাশন হাউজের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও তেমন একটা বেচা-বিক্রি নেই। আমাদের দোকানের ক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। কিন্তু এখন তাদের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। তারা মার্কেট করতে কম আসছেন। সারা দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকারও বেচাকেনা হচ্ছে না।

গতকাল পুরান ঢাকার ইসলামপুর, ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজার, নয়াবাজার, সূত্রাপুর, বংশাল, টিকাটুলি ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের সপ্তাহখানেক যে ভিড় থাকে তার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা সামান্যই। কিন্তু পুরান ঢাকার সরু অলিগলি, ফুটপাতজুড়ে হকার এবং ছোট আয়তনের দোকানে কম ক্রেতা সমাগমেই করোনার ঝুঁকি রয়েছে। প্রায় সব এলাকায় দেখা গেছে, মানুষ একে অন্যের শরীর ঘেঁষেই কেনাকাটা করছেন। দোকানে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে না। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা চোখেই পড়েনি।

ইসলামপুরের মানসুরা এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী আবু নাঈম বলেন, '৮ ফুট বাই ১২ ফুট দোকানে ডেকোরেশনের পর আর কতটুকু বাকি থাকে। এর মধ্যে প্রত্যেকের মধ্যে তিন ফুটের সামাজিক দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখা সম্ভব। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দোকান বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আবার এখানে ক্রেতার ভিড় সামাল দেওয়ার মতোও ব্যবস্থা নেই। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে।

তাঁতীবাজার, ইংলিশ রোড, ধোলাইখাল, লক্ষ্মীবাজার হয়ে সূত্রাপুরের দিকে ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। বিভিন্ন সড়ক ঘিরে বিচ্ছিন্নভাবে আসবাবপত্র ও কাপড়ের দোকানে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। টিকাটুলী এলাকায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

আড়ংসহ যেসব বড় বড় শপিংমল খোলা রয়েছে সেসব মার্কেটে গ্রাহকদের উপস্থিতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করানোর দাবি করলেও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে নজরুল ইসলমা নামে এক ক্রেতা জানান, স্বাস্থ্যবিধি সবারই মানা উচিত। কিন্তু আমি একা মানতে চাইলে কী হবে। অন্যরাতো মানছেন না। দোকানপাটগুলোর অবস্থাও তো খারাপ। এর মধ্যেও তো কেনাকাটা করতে হবে। বছরে দুটি ঈদ আসে। তাতে যদি ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু কেনা না হয়, তাহলে তো ঈদটা পরিপূর্ণ হয় না।

ঘনবসতিপূর্ণ মিরপুরে সড়কের দু'পাশের অধিকাংশ দোকানপাট খুলেছে। গতকাল সেখানে অন্য দিনের তুলানায় ক্রেতার ভিড় বেশি ছিল। তবে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির প্রতি খেয়াল; ছিল না প্রশাসনের তদারকি। তবে মিরপুরের আড়ং, অ্যাপেক্স, বাটা ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ব্র্র্যান্ডের আউটলেটগুলোতে নিয়ম মেনে বেচাকেনা করতে দেখা যায়। ছিল জীবাণুমুক্ত করে ক্রেতাকে দোকানে প্রবেশ করতে দেওয়ার ব্যবস্থা। অনেক দোকানের সামনে বসানো হয়েছে জীবাণুমুক্ত করার টানেল।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি