বশেমুরবিপ্রবিতে স্বপদে বহাল আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া
প্রকাশিত : ২২:০৬, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া- যিনি একাধারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্প পরিচালক, মানবিক অনুষদের ডিন, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান, বিএনসিসি'র প্লাটুন কমান্ডার। ছিলেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগকৃত সাবেক উপাচার্য খন্দকার নাসিরউদ্দিন এর ডানহাত বলে পরিচিত বশেমুরবিপ্রবির তৎকালীন প্রক্টর। এতসব পরিচয়ের বাইরে তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ কেলেঙ্কারি, একাধিক গবেষণা কার্যক্রম বাবদ অর্থ আদায় করেও তা সম্পন্ন না করা, বিধিবহির্ভূতভাবে জাহজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতে দেয়াসহ নানান অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিষয়ক অডিট অধিদপ্তর। এমনকি প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম সম্পর্কে অবগত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদক। কিন্তু এতসব অভিযোগের পরও প্রকল্প পরিচালক পদে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১৯ এর ১৭ জুলাই আশিকুজ্জামান ভুঁইয়াকে বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু এরপরই এই প্রকল্পে ঘটে একের পর এক নিয়ম। আর চাঞ্চল্যকর এসকল অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিষয়ক অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিষয়ক অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া প্রকল্প পরিচালকে দায়িত্ব গ্রহনের পর তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে খুলনা শিপইয়ার্ডকে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ সর্বমোট ২৮ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৯ টাকা অগ্রীম প্রদান করেন। এসকল পণ্যের একটি বড় অংশের চাহিদা না থাকায় বর্তমানে অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া, গত বছরের ২৪ জুলাই নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে ১ কোটি ৪৪ লাখ ১৯ হাজার সরিয়ে নেন আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে সেই টাকা ১৪ নভেম্বর আবার আগের অ্যাকাউন্টে ফেরতও দেন তিনি। এরপর সেই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কোন নিয়মই মানেনি প্রকল্প পরিচালক। তার এমন অনিয়ম এর কারণে প্রকল্পে লভ্যাংশ ক্ষতি হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এটি নিয়ম বহির্ভূত ও অনিয়ম বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণা কাজের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিগত পাচঁ অর্থবছরে বশেমুরবিপ্রবিতে গবেষণা খাতে মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো এবং এই গবেষণা প্রকল্পগুলোর সাথে ১৪৭ জন শিক্ষক সংশ্লিষ্ট ছিলেন । এদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আশিকুজ্জামান ভুঁইয়া। তিনি ৫ বছরে মোট ৮ টি গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, যার মধ্যে ৬ টিতে ছিলেন প্রধান গবেষক। এসকল গবেষণায় মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই শিক্ষকের প্রোফাইলে কোনো পাবলিকেশন্সের তথ্য পাওয়া যায় নি। এমনকি গুগল অনুসন্ধানেও কোনো পাবলিকেশন্সের তথ্য মেলেনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আশিকুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, “গবেষণা প্রকল্পগুলোর একটির কাজ শেষ হয়েছে, আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে এবং বাকিগুলোর কাজ এখনও চলছে।" অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিজে ভিন্ন একাউন্টে নেওয়াসহ নানান অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে আশিকুজ্জামান ভুঁইয়া কথা বলতে রাজি হননি।
তবে এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপ-পরিচালক (হিসাব) শেখ সুজাউদ্দিন বলেন, "এতে আমাদের কোনো পরামর্শ ও নেওয়া হয়নি। আমাদের কাছে কোনো ফাইল ও আসেনি। পরিকল্পনা, প্লানিং ও ওয়ার্কস অফিস তাদের নিজ দায়িত্বে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করেছে।
আর উপ-পরিচালক (প্লানিং) তুহিন মাহমুদ বলেন, "সহকারী পরিচালক (হিসাব) আমার রুমে এসে বলেছিলান একটি একাউন্ট খোলা লাগবে যৌথ একাউন্টে সিগনেচার দেওয়ার কথা। পিডি ওদের কথায় আমি সিগনেচার দিয়ে দিয়েছি।"
এদিকে; বশেমুরবিপ্রবি অগ্রনী ব্যাংক শাখার তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র মন্ডল বলেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডি'র লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়েছে কি না; সেটা তিনি বলতে পারবেন।
অন্যদিকে আশিকুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ উঠার পরও স্বপদে বহাল থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, "ভুরি ভুরি অভিযোগের পরও আশিকুজ্জামান ভূঁইয়ার স্বপদে বহাল থাকা দুঃখজনক ও আশ্চর্যেরও বটে। এভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে অভিযুক্তরা আরো বেশি অনিয়ম করার সুযোগ পাবে। তাই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সঠিক তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।"
এদিকে আশিকুজ্জামান ভূঁইয়ার এসকল অনিয়মের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব বলেন, "অনিয়মের এই বিষয়টি ইউজিসি জানে, দুদক জানে,সরকার জানে সুতরাং আমার বিশেষ কিছু করার নেই। বিষয়টা উপর মহল অবগত না থাকলে আমি তাদের অবগত করতাম।"
আরকে//
আরও পড়ুন