ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

বিলুপ্তির দুই বছরেও কমিটি পায়নি জবি ছাত্রলীগ

সাগর হোসেন, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৯:১৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন,  ছাত্র আন্দোলনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে জগন্নাথ কলেজ। জগন্নাথ কলেজ থেকে মিছিল আসার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন বেগমান হতো। এবং আমাদের আন্দোলনের গতিকে ত্বরান্বিত করত। ভাষা আন্দোলন থেকে ছয়দফা,মুক্তিযুদ্ধ,স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সব আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের অবদান স্মরনীয়। কিন্তু যুগের তালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য হারিয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ বড় ইউনিটটির অবস্থা এখন ভঙ্গুর প্রায়।

জানা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ডাকা অবরোধে বাহাদুর শাহ পার্কের বিপরীতে দর্জি বিশ্বজিৎকে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের পর থেকেই জবি ছাত্রলীগের সুনাম, ঐতিহ্যে ও সাংগঠনিক অবস্থার ভাটা নামে। ছাত্রলীগের নেতাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আন্তকোন্দলে মারামারিতে বারবার খবরের শিরোমণি হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

২০১৩ সালের ৩০ জুলাই জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক  শরীফ-সিরাজের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পর আর এই ইউনিটটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির, শোভন-রাব্বানী ও সর্বশেষ জয় লেখকের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গৌরবান্বিত এই ইউনিটটির ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সম্মেলনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ শরীফ-সিরাজ কমিটির বিলুপ্তির ছয় মাস পর ১৭ অক্টোবর ৩৯ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করা হয়। নতুন কমিটি ঘোষনার প্রথম সপ্তাহে চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নেতাকর্মী বহিষ্কার হন।

২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়াারি ও ১৮ ফেব্রæয়ারি তরিকুল-রাসেল কমিটির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে সরাসরি ছাত্রলীগের প্যাডে না সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়া হবে এ সিদ্ধান্তে ছয় মাস অতিক্রম করে কেন্দ্রীয় নেতারা। ২০ জুলাই সম্মেলনের পর নতুন কমিটি দেয়ার আগে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিদায় ঘটে। শীর্ষ দুই নেতার বিদায়ের পর জবি ছাত্রলীগ কর্মীদের নিজের নামের পাশে পদবী লাগানোর ইচ্ছেতেও ধরে ভাঙন।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ভারমুক্তের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন অসংখ্য জাতীয় নেতার রাজনীতির আতুর ঘর জগন্নাথ ছাত্রলীগের কর্মীরা। কিন্তু ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকিতে ছাত্রলীগের সর্ব্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখক-জয়ের ভারমুক্ত করে দিলেও তারা গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটটির নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়নি। ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন নির্বাচনের অযুহাতে নতুন কমিটি গঠনে কালক্ষেপন করেন তারা।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ কোভিড-১৯ এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষনা ও ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে লকডাউন শুরু হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীদের নামের পাশে পদবী লাগানোর স্বপ্নেও লকডাউন চলে আসে।

হতাশায় কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীততে ইতি টানছেন, অনেকে স্থানীয় উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদের জন্য নতুন করে লবিং তদবির করছেন ও পদ গ্রহন করছেন। শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরা ক্যারিয়ারের দোলাচলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বাসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিন,ডাস ও শীর্ষ নেতার একাডেমিক বিভাগ ‘ল’ ফ্যাকাল্টিতে সালাম ঠুকছেন।

গত বছরের ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ছাত্রলীগের এক আলোচনা সভায় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিটের কমিটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেয়ার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে। কিন্তু ছাত্রলীগের কর্ণধার আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য সেই নির্দেশনারও ভ্রুক্ষেপ করেননি।

জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরীফুল ইসলাম বলেন, "বাংলাশের প্রেক্ষাপটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাস। নেতৃত্ব তৈরি করার অতীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। এখান থেকে ছাত্ররাজনীতি করে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একটা বৃহৎ সংগঠন এ ইউনিটের কমিটি নাই এটা ভাবা যায় না। আমরা সাবেক ছাত্রনেতা হিসাবে আমরা ভাবতে পারি না। আমাদের অনুরোধ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ জগন্নাথ ছাত্রলীগের দ্রুত কমিটি দিবে। যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে তারা জগন্নাথের ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাবে।"

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, "গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের তিন দিনের মধ্যে নতুন কমিটি দেয়া নৈতিক সিদ্ধান্ত। করোনার কারণে হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু সংঘটনটির সাংঘঠনিক অবস্থা সচল রাখতে জরুরী ভিত্তিতে একটি ‘এডহক’ কমিটি দেয়া যেতে পারে।"

এদিকে জবি ছাত্রলীগের কমিটি কবে এ প্রশ্নের উত্তর জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ লেখক ভট্টাচার্যেও সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি