ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

বেরোবিতে ঘুষ নেয়ার ভিডিও ফাঁস, তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন

বেরোবি সংবাদদাতা 

প্রকাশিত : ০৯:২৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) চাকরি দেয়ার নাম করে ১৩ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও টাকা গ্রহণ করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমনকি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। 
 
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে টাকা গুনতে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কাম কম্পিউটার অপারেটর শেরে জামান সম্রাট ও তার পাশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ ও মাস্টাররোলের কর্মচারী গুলশান আহমেদ শাওন।

সেকশন অফিসার পদে চাকরির জন্য ১৩ লাখ টাকা দিয়েও চাকরি পাননি বলে অভিযোগ করেন রুবেল সাদী। তার অভিযোগ, টাকা দেয়ার পর রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালের স্বাক্ষর করা একটি নিয়োগ পত্রের ফটোকপি তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। সেই নিয়োগপত্রটি ভুয়া বলে জানতে পারেন চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে।

এ ঘটনায় বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত অভিযুক্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান পলাশ, কর্মচারী সেরে জামান সম্রাট ও গুলশান আহমেদ শাওন চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত তিন জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সচেতন মহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মাসুদ-উল হাসানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। মাসুদ- উল হাসান বিজয় দিবসের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে মামলার আসামি হয়েছেন। এ জন্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাধারণত এক সদস্য বিশিষ্ট হয় কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং দায়সারা কমিটি।’

ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির প্রধান মাসুদ-উল হাসান বলেন বলেন, ‘প্রশাসন যেহেতু এক সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, সেখানে আমার কিছু বলার নাই।’

অভিযুক্তদের সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে না দিলে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে প্রভাব পড়বে- এমন সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি প্রশাসন ভালো বুঝবেন। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে চাকরি প্রত্যাশী রুবেল সাদী বলেন, ‘আমি মনিরুজ্জামান পলাশ এবং সেরে জামান সম্রাটকে বলি এভাবে নিয়োগ সার্কুলার, পরীক্ষা ছাড়া কখনো নিয়োগ হয় নাকি। তখন তারা আমাকে বলেন আমরা তো এই ক্যাম্পাসে চাকরি করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ এভাবেই হয়। সবাই এখানে টাকা পয়সা খায়।’ 

ভিডিও ভাইরালের পর মঙ্গলবার থেকে নিজের চেয়ারে পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশকে। তবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাকে পাওয়া গেলেও ডিন অফিস থেকে ঘুরে এসে কথা বলবেন বলে সটকে পড়েন তিনি। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

আর নিজের দপ্তরে পাওয়া গেলেও আইনজীবীর মাধ্যম ছাড়া কোনো কথা বলবেন না বলে জানান মাস্টাররোল কর্মচারী গুলশান আহমেদ শাওন।

তবে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে কথা বলেন অভিযুক্ত কম্পিউটার অপারেটর সেরে জামান সম্রাট। তিনি বলেন, ‘এগুলো আমার ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন। এসব লেনদেন সম্পন্ন করার সময় আমি দুজন স্বাক্ষী রেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রুবেল যেহেতু এমন অভিযোগ দিয়েছে সেহেতু আমিও সেটা আইনগতভাবে যা যা করণীয় সেটা করতে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল ও প্রক্টর আতিউর রহমানকে তাদের নিজ নিজ দফতরে পাওয়া যায়নি। ফোনে কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি।’
এআই/ এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি