ঢাকা, শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪

৪ বছরে ইবির মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৩৫, ৩ নভেম্বর ২০২২

সাড়ে ৪ বছর মেয়াদী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু চার বছর সময় অতিবাহিত হলেও সার্বিক কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। কচ্ছপ গতিতে চলছে উন্নয়ন কাজ। ফলে প্রকল্পভেদে মেয়াদ বাড়তে পারে আরও ২ বছর।

২০১৮ সালে মেগা প্রকল্পের জন্য ৫৩৭ কোটি টাকার বাজেট পায় ইবি। শিক্ষার্থীদের আবাসন ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নানাবিধ কারণে থমকে আছে প্রকল্পের অগ্রগতি।

প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার পায় এইচসিপিএল-এমসিপিএল (জেভি) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চুক্তিপত্র অনুসারে ২০২১ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ডিসেম্বরে। তবে এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ।

৫শ’ আসন বিশিষ্ট ১০ তলা শেখ রাসেল হলের বি-ব্লক নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছে টিবিইএএল-এমসিপিএল (জেভি)। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে সাড়ে একুশ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৩ শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হতে লাগবে আরও ২ বছর।

৫৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার পৃথক দুটি টেন্ডারে ১০ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল-১ ও ছাত্রী হল-২’র নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্ব পায় এমএস-এমআরটি (জেভি) নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রকল্পেরও মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ডিসেম্বরে। তবে দুটি হলের নির্মাণ কাজের এখনও ৯৫ শতাংশই বাকি।

১ হাজার আসন সংখ্যার ১০ তলা ছাত্র হল-১ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষের নির্ধারিত তারিখ এ বছরের ডিসেম্বর। কিন্তু কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ। ৫৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ করছে টিবিইএএল-এমসিপিএল (জেভি)। 

সমপরিমাণ অর্থে একই আসন সংখ্যা বিশিষ্ট ১০ তলা ছাত্র হল-২ এর টেন্ডার পেয়েছে এইচসিপিএল-এমসিপিএল (জেভি) নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে ২ মাস বাকি থাকলেও কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫ শতাংশ।

প্রকৌশল অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, হল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত মেয়াদে কোনভাবেই শেষ করা সম্ভব নয়। নতুন করে আরও ২ বছর বাড়ানো হবে।

এছাড়া, মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর। পরে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হলেও প্রকল্পটির কাজ এখনও শতভাগ শেষ হয়নি। এদিকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ কাজ শেষ হতেও আরও ৬ মাস লাগবে বলে জানা গেছে।

১ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ ক্রয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ম্যাক্সওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৫ শতাংশ। সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আরও ৬ মাস বাড়াতে হবে প্রকল্পের মেয়াদ। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি উন্নয়নের জন্য গ্যালাক্সি এসোসিয়েটের সঙ্গে ৬১ লাখ টাকার চুক্তি হলেও কাজ শুরু করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই চুক্তি বাতিল করতে হতে পারে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী সহিদ উদ্দীন মো: তারেক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ২টি ৫শ’ কেভি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন স্থাপনের চুক্তি হয়েছে মজিদ সন্স এন্ড কন্সট্রাকশনের সঙ্গে। ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের এই কাজের এখনও ৯০ শতাংশই বাকি। এদিকে সাবস্টেশন না থাকায় পরিত্যক্ত স্থানে প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মূল্যের দুটি জেনারেটর।

সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য সোলার ইলেকট্রো বিডির সঙ্গে চুক্তি করেছে ইবি। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২৮ ডিসেম্বর প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কাজ শতভাগ সম্পন্ন করতে আরও ৬ মাস লাগবে।

রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্লান্ট (উন্মুক্ত জলাশয়) তৈরির জন্য ২ কোটি ৭ লাখ টাকায় হাজী এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এই বছরের এপ্রিলে। কাজের বর্তমান অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ। কেবল এই প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়েদে শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী।

প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী সহিদ উদ্দীন মো: তারেক বলেন, “করোনার পর মেগা প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করতে গড়িমসি করছিল। আমরা ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাজ করাতে বাধ্য করেছি। মেগা প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হতে আরও ২ বছর সময় লাগবে।”

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. মো: নওয়াব আলী বলেন, “প্রথম দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কাজ করতে গড়িমসি করছিল ঠিকাদারা। তবে নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে তাদের কাজে ফিরিয়ে এনেছি। বর্তমান কাজের গতি নিয়ে আমরা আশাবাদী।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, “আইন অনুযায়ী প্রকল্পের সময় বাড়ানোর যে নিয়ম আছে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু একটি মহামারী ছিল তাই দেরীতে কাজ শুরু হয়েছে। তাদের যুক্তি আছে সময় বাড়িয়ে নেওয়ার।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি