স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই
ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রকাশিত : ১০:৪০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
বারবার তাগিদ দেওয়ার পর স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় ১২ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এই ১২টিসহ ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করা হবে। শোকজের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এমন সিদ্ধান্তের জন্য ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের পাঠগ্রহণে কোনো ক্ষতি হবে না। তাদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকবে। ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়েই তারা লেখাপড়া করতে পারবে। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৫১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি ৩২টির মধ্যে ১২টি ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওইসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এর আগে তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও আইনের বিধান কেন তারা প্রতিপালন করেনি- এই মর্মে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু উল্লিখিত ১২টিই নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন না নেওয়া বা আইনের বিভিন্ন দিক লঙ্ঘন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে আইন এবং ইতোপূর্বে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকে পাঠানো পত্রে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া তথাকথিত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়কেও শোকজ করা হবে। সেই হিসাবে শোকজপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বাড়বে।
গত বছর জানুয়ারিতে আলটিমেটাম দেওয়া ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র সাতটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। বাকিগুলোর কোনোটি জমি কিনেছে, কোনোটি আংশিক কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় মার্কেট দখল করে এবং ডজনখানেক ভাড়াবাড়িতে কার্যক্রম চালানো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবি করলেও বেশিরভাগ কার্যক্রম ভাড়া বাড়িতেই চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম চালানোর কথা বলে অনুমতি নিয়ে তা ভাড়া বাড়িতে চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুধু এটিই নয়, আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একই ধরনের কাজ করছে।
ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের রাস্তায় নামিয়ে নিজেদের বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভয়ও দেখাচ্ছে। তাই মন্ত্রণালয়-ইউজিসি ওইসব অসৎ ব্যক্তির খারাপ উদ্দেশ্য মাথায় রেখে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে- যাতে তারা অসৎ কাজ করতে না পারে। ছাত্রছাত্রীর অভাবে একসময় বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এ পরিস্থিতি তৈরির আগে তাদের ‘ভালো’হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যকে বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যলয়ের হালনাগাদ অবস্থা আমাদের কাছে আছে। আমরা তা পর্যালোচনা করছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সবাইকে আইনের অধীনে আসতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিশ্চিতের পর কেউ ব্যবসা করলে করতে পারেন। কিন্তু বেপরোয়াভাবে কাউকে চলার সুযোগ দেওয়া হবে না। আমাদের উদ্দেশ্য- তারা (বিশ্ববিদ্যালয়) আইনের অধীনে চলবে। তাই তাদের তাগিদ দেওয়া হবে। পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন পর্যন্ত ছয় দফা আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ন্যূনতম সাত বছর পূর্ণ হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া আলটিমেটাম গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
/ এআর /
আরও পড়ুন