‘প্রশ্ন ফাঁস রোধে আইন সংশোধন করা দরকার’
প্রকাশিত : ২৩:২১, ২৮ মার্চ ২০১৮
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ১৯৮১ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইন সংশোধন করে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলকে সচেতন হওয়াসহ মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহবান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) উপ-মহাপরিদর্শক শেখ নাজমুল আলম। আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এর উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল মিলনায়তনে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ আহবান জানান।
তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘কেউ কাউকে চেনে না, অথচ তার কাছ থেকেই সে প্রশ্ন কিনেছে।’ তিনি বলেন, ‘আদিকাল থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এখন ডিজিটালাইজ্ড হওয়ায় আমরা সকলে তা জানতে পারছি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করার বিষয়ে বিটিআরসি’র সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফেইসবুক মনিটরিং করার যন্ত্রও আমাদের নেই।’ এ সংক্রান্ত কয়েকটি মনিটরিং কমিটিতে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিজি প্রেস আধুনিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে প্রশ্নপত্র না ছাপানো সমিচিন নয়। পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র ছাপানোর পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।’ পাশাপাশি এ বিষয়ে অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘শুধু পাবলিক পরীক্ষাই নয়, ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মনিটরিংয়ের জন্য সরকারের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি থাকতে হবে। যারা এদের উপর খবরদারি, নজরদারি করবে।’
ক্র্যাব সভাপতি জনাব আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন ক্র্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম বাদশাহ্। বৈঠকে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ক্র্যাবের দপ্তর সম্পাদক জনাব রুদ্র রাসেল।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ মমতাজ লতিফ বলেন, ‘বিজি প্রেসে সিসি ক্যামেরা থাকতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশ্ন প্রিন্টিং পদ্ধতি পরিবর্তন করা না হয়।’
জনাব লায়ন এম কে বাশার বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে পারলে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে, জনশক্তিতে রূপ দেওয়া যাবে।’ তিনি একটি নিরাপদ প্রযুক্তিগত পদ্ধতি বর্ননা করেন। যাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একই সময় সকল শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র ওপেন হবে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, “সরকারের সদিচ্ছা থাকলে, আন্তরিকতা থাকলে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব”। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদ প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালেও শিক্ষামন্ত্রী কোন ব্যবস্থা নেন না।’ হঠাৎ এমসিকিইউ বাদ দিলে ফল বিপর্যয় ঘটারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ইনভেস্টিগেশন ও ক্র্যাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজান মালিক বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস রোধে নতুন আইন করতে হবে।’ তিনি বৈঠকের সুপারিশমালা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছানোর আহ্বান জানান।
অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীপা সুলতানা বলেন, ‘কোচিং নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে সৃজনশীল নামে যে পদ্ধতি চালু করা হয়েছে- তাতে শিক্ষকদের হাতে শিক্ষার্থীরা আরও জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
বৈঠকে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন চ্যানেল ২৪ এর ইনভেস্টিগেশন সেল এর প্রধান জিএম ফয়সাল আলম। এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ছাপাখানা থাকার পরও একটি খুপরি ঘরে প্রশ্নপত্র ছাপানোর কার্যক্রম চলতে দেখেছেন বলেও জানান তিনি।
গোল টেবিল বৈঠকে ক্র্যাবের অর্থ সম্পাদক আজিজুল হাকিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালিদ আহমেদ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক শাহরিয়ার আরিফ, নির্বাহী সদস্য খন্দকার হানিফ রাজা, ক্র্যাবের সিনিয়র সদস্য আনিস রহমান, ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাবৃন্দসহ ক্র্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
//এস এইচ এস//টিকে
আরও পড়ুন