ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

কোটা বিলুপ্ত করলেও বেকারত্ব দূর হবে না : অধ্যাপক আমিনুল হক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৮, ২৮ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১৩, ২৯ মে ২০১৮

অধ্যাপক ড. আমিনুল হক

অধ্যাপক ড. আমিনুল হক

বিপুল কর্মক্ষম জনশ‌ক্তি‌কে কা‌জে লা‌গি‌য়ে অর্থ‌নৈ‌তিকভা‌বে সমৃদ্ধশালী হওয়ার অপার সম্ভাবনার দাঁড়প্রা‌ন্তে বাংলা‌দেশ। কিন্তু এ জনসংখ্যার সুফল পাওয়ার অন্যতম শর্ত হ‌চ্ছে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বি‌নি‌য়োগ এবং সুশাসন প্র‌তিষ্ঠা।  এর সঙ্গে রাজ‌নৈ‌তিক স্থিতিশীলতার বিষয়টিও জ‌ড়িত। এ চার‌টি য‌দি একসঙ্গে কাজ না হয় তাহ‌লে অতিরিক্ত জন‌গোষ্ঠী কোনো সুফল ব‌য়ে আন‌বে না। তাই ডে‌মোগ্রা‌ফিক ডি‌ভি‌ডেন্ড‌কে কা‌জে লাগা‌তে শর্তগু‌লো পূরণ করতে হবে। তেম‌নি চলমান অর্থনী‌তির গ‌তি ধ‌রে রাখার জন্য ধারাবা‌হিক রাজনৈ‌তিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই জরুরি। যেকোনো দে‌শে অর্থনী‌তির উন্ন‌য়নের অন্যতম পূর্বশর্ত ‘গুড গভর্নেন্স’ এবং এরসঙ্গে জ‌ড়িত রাজনী‌তিও।

সম্প্র‌তি বাংলাদেশের জন্য ডে‌মোগ্রা‌ফিক ডি‌ভি‌ডেন্টের (জনসংখ্যার বোনাসকাল) সুযোগ ও সম্ভাবনা নি‌য়ে একু‌শে টে‌লি‌ভিশন অনলাই‌ন মুখমু‌খি হ‌য় ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের পপু‌লেশন সাইন্স বিভা‌গের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক . আমিনুল হকের। তার কথায় উঠে আসে চলমান শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, কোটা সংস্কার ইস্যু, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা, গ্রাজুয়েশন শেষেও তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি না পাওয়াসহ নানা বিষয়। 

তিনি ব‌লেন, বর্ত‌মা‌নে বাংলা‌দে‌শে কর্মক্ষম লোক অনেক বে‌শি। প্র‌তি‌ বছর ২০ লাখ লোক কর্মক্ষম হ‌চ্ছে। স‌র্বোচ্চ ১০ লাখ লো‌কের কর্ম‌সংস্থান হচ্ছে। ১০ লাখ লো‌ক বেকার থেকেই যাচ্ছে। কোটা য‌দি উ‌ঠি‌য়ে দে‌ওয়াও হয় তবুও ১০ লাখ কর্ম‌হীন থে‌কে যা‌বে। কোটার সঙ্গে বেকার‌ত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। কোটা পদ্ধ‌টি বা‌তিল কর‌লে বেকারত্ব দূর হবে না। কোটার ইতিবাচক নেতিবাচক দুটি দিকই আছে।

অনগ্রসর জন‌গোষ্ঠী‌কে এগিয়ে নি‌য়ে যাওয়ার জন্য এ পদ্ধ‌টির প্রবর্তন হ‌য়ে ছিল। এখন য‌দি জা‌তি ম‌নে ক‌রেন এখন আর এটার প্র‌য়োজন নেই তাহ‌লে, বা‌তিল করার আগে অবশ্যই আলাপ-আ‌লোচনার মাধ্য‌মে একটা যৌক্তিক মাত্রায় গি‌য়ে পৌঁছাতে হ‌বে। তারপর প‌রিবর্তন করা যে‌তে পা‌রে। তার আগে নয়। সাক্ষাৎকার‌ নি‌য়ে‌ছেন মোহাম্মদ রু‌বেল। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

একু‌শে টিভি অনলাইন: বাংলা‌দে‌শে এখন জনশ‌ক্তির বোনাস কাল চল‌ছে। কর্মক্ষম মানুষ এখন বে‌শি। এ জনশ‌ক্তি‌কে কিভা‌বে দক্ষ ক‌রে ‌দে‌শে এবং বি‌দে‌শের শ্রমবাজা‌রে  কা‌জে লাগা‌নো যায়? 

অধ্যাপক আমিনুল হক: বাংলা‌দে‌শে এখন কর্মক্ষম জনগো‌ষ্ঠী বেশি। এ কর্মক্ষম জন‌গোষ্ঠীকে দক্ষ ক‌রে  তুলে দে‌শের কা‌জে লাগা‌তে হ‌বে। এ গোষ্ঠীকে চার‌ভা‌বে কা‌জে লাগা‌নো যে‌তে পা‌রে। যেমন- সরকারিভাবে, বেসরকারিভাবে ও নিজে ব্য‌ক্তিভা‌বে উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্য‌মে এবং ব‌র্হিবি‌শ্বে দক্ষ জনশ‌ক্তি পা‌ঠি‌য়ে।  

জনশক্তি নি‌য়ে, সরকা‌রে কা‌ছে সরকারি হিসাবটা খুবই সু‌র্নি‌দিষ্ট। কোন কোন সেক্ট‌রে, ‌কোন কোন ডিপার্ট‌মে‌ন্টে কতজন লোক লাগ‌বে, কত বছ‌রে সরকার তা নি‌তে পা‌রে সে হি‌সাবটা নির্ধা‌রিত। সেই হি‌সেবটা খুব বে‌শি নয় বছ‌রে মাত্র তিন থে‌কে চার লাখ। 

‌দ্বিতীয় খাত‌টি হ‌চ্ছে প্রাইভেট সেক্টর। এ সেক্ট‌রে দে‌শে অনেক ব্যাংক বীমা, ইন্স্যুরেন্সসহ বহু প্র‌তিষ্ঠান তৈরি  হ‌য়ে‌ছে এবং হ‌চ্ছে। ফ‌লে সেখা‌নে ক‌র্মের সু‌যোগ সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে। জনশ‌ক্তির একটা অংশ এ সেক্টরগু‌লো‌তে যা‌চ্ছে। 

তৃতীয়টি হ‌চ্ছে, নিজ উদ্যোগে উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্য‌মে এ কর্মক্ষম জনশক্তি‌কে কা‌জে লাগা‌নো। অনেকে তা কর‌ছে। নি‌জ উদ্যোগে মৎস্য প্রকল্প তৈরি ক‌রছে ,কৃ‌ষি প্রকল্প তৈরি ক‌রছে  এবং ছোট ছোট দোকান ক‌রে নি‌জে যেমন স্বাভলম্বি হ‌চ্ছে, আবার এসব উদ্যোগের ফলে অনে‌কের জন্য কর্মসংস্থা‌নের সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। 

চতুর্থ বিষয়‌টি হ‌চ্ছে,  বিশ্ববাজা‌রে  এই জনশ‌ক্তি‌কে ছ‌ড়ি‌য়ে দেওয়া।‌ কিন্তু বর্তমা‌নে যে জনশ‌ক্তি ‌বি‌দে‌শে যা‌চ্ছে,‌ সেখানে অদক্ষ জশ‌ক্তির মাত্রা খুবই বে‌শি। অপর‌দি‌কে শি‌ক্ষিত বা স্কিল জন‌গো‌ষ্ঠী যেটা যা‌চ্ছে। সেটা ছাত্ররা যা‌চ্ছে বি‌ভিন্ন ইউ‌নির্ভাসি‌টি থে‌কে স্কলারশিপ নি‌য়ে পড়‌তে যা‌চ্ছে অথবা নিজ খর‌চে যা‌চ্ছে। তারা পড়া‌শোনা শেষ ক‌রে বিশ্ব বাজা‌রে মেধা‌ভি‌ত্তিক পর্যা‌য়ে কাজ কর‌ছে।

মূল‌ বিষয়‌টি হ‌চ্ছে বর্তমা‌নে কর্মক্ষম এ বিপুল প‌রিমাণ জনগো‌ষ্ঠীকে এ চার‌টি খাতে কাজে লাগা‌তে হ‌বে। সে‌ক্ষে‌ত্রে মোট জন‌গো‌ষ্ঠী কি প‌রিমাণ আ‌ছে, তা বের কর‌তে হ‌বে। তারপর এ চার‌টি খাতে কি
প‌রিমাণ জনশ‌ক্তিকে কা‌জে লাগা‌নো যে‌তে পা‌রে। এখা‌নে আরও দু‌টি বিষ‌য়ের ম‌ধ্যে এক‌টি হ‌চ্ছে,‌ দে‌শে কতজন লাগ‌বে। আরেকটি হ‌চ্ছে বি‌দে‌শে কতজন যে‌তে পার‌বে। এ দু‌টি জি‌নিস সু‌র্নি‌দিষ্ট কর‌তে হ‌বে। এভা‌বে কর‌তে পার‌লে দেখা যা‌বে, প্র‌তিবছর চাকরির বাজারে ১৫ থে‌কে ৬৪ বছর বয়সী ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।  

একু‌শে‌ টি‌ভি অনলাইন: বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের স‌র্বোচ্চ ডি‌গ্রি অর্জ‌নের পরও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী চাকরি পা‌চ্ছে না কেন? ‌বেকার‌রো‌ধে এক‌টি  রা‌ষ্ট্রে কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধ‌তি দরকার?

অধ্যাপক আ‌মিনুল হক: এটা সুস্পষ্ট ক‌রে জা‌তি‌কে বল‌তে হবে যে, প্র‌তিবছর ২০ লাখ লোক লেভার ফোর্সে অর্থাৎ কর্মক্ষম লোক প্র‌বেশ কর‌ছে,  তা‌দের সবাই য‌দি এম এ পাশ কেন, পিএইচ‌ডি ডি‌গ্রি অর্জন ক‌রেও আসে তবুও তা‌দের  যোগ্যতা অনুযায়ী এক‌টি দেশ সবাইকে  চাকরি দি‌তে পার‌বে না। স‌রকর মাত্র তিন থে‌কে চার লাখ লোক‌কে চাকরি দি‌তে পা‌রে। আর বা‌কিরা বেসরকারি খাতে, আবার অনেকে বা‌হি‌রে চ‌লে যায়। সব মি‌লি‌য়ে ১০ লাখ লোক ক‌র্মের ম‌ধ্যে আছে। আর বা‌কি ১০ লাখ পু‌রোপু‌রি বেকার। এদের কোনো উপার্জন নাই। সুতরাং বিশ্ব‌বিদ্যালয়ের শিক্ষা মা‌নে এই  নয় যে সবাই‌কে চাকরি দেওয়া যা‌বে। সেই যায়গা থে‌কে রাষ্ট্র এবং প‌রিবার‌কে বের হ‌য়ে আস‌তে হ‌বে। এবং উচ্চ শিক্ষায় আসার আগে শিক্ষার্থী‌কে ভাব‌তে হবে এমএ পাশ করা মা‌নেই চাকরি নয়। রা‌ষ্ট্রের প‌ক্ষে, ব্য‌ক্তির পক্ষে সব শিক্ষার্থী‌কে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। এটা বাস্তব সম্মত। আমা‌দের বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষার্থী‌দের ক্লা‌শে তাই ব‌লি। উচ্চ শিক্ষা নি‌তে আস‌বে জ্ঞান অর্জ‌নের জন্য। মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য। শিক্ষা অর্জ‌নের জন্য। আর বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে আস‌তে হবে নিজ দায়ি‌ত্বে। চাকরির জন্য রাষ্ট্র‌কে চাপ দেওয়া যা‌বে না। রা‌ষ্ট্রের প‌ক্ষে ব্য‌ক্তির প‌ক্ষে সব শিক্ষার্থীকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। এই বাস্তব অবস্থা‌টি সুস্পষ্ট ক‌রে ব‌লে দি‌তে শিক্ষার্থী‌কে এবং পরিবার‌কে।

একু‌শে টি‌ভি অনলাইন: চলমান অর্থনী‌তির চাকার গ‌তি ধ‌রে রাখার জন্য ধারাবা‌হিক রাজনৈ‌তিক স্থীতিশীলতা বজায় রাখা কটতা গুরুত্বপূর্ণ? বর্তমান ধারাবা‌হিক স্থিতিশীলতা ধ‌রে না রাখ‌তে পার‌লে অর্থনী‌তির চাকা কি থম‌কে দাড়া‌বে?

অধ্যাপক আমিনুল হক: শুধু রাজ‌নৈ‌তিক বিষ‌য়ে নয়,
যে কোন দে‌শে, অর্থনী‌তির উন্ন‌য়নের অন্যতম পূর্বশর্ত গুড গভর্নেন্স অর্থাৎ সুশাসন প্র‌তিষ্ঠার বিষয়‌টি। তেম‌নি রাজনৈ‌তিক স্থি‌তিশীলতা খুবই জরুরি। কেন জরুরি? কারণ যখন রাজ‌নৈ‌তিক  দলগু‌লো ক্ষমতায় থাকে, তখন দেশ উন্নয়‌নের জন্য একজন রাষ্ট্রনায়ক অনেকগুলো পরিকল্পনা নি‌য়ে থা‌কে। তা বাস্তবায়‌নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ক‌রে থা‌কেন। এগু‌লো দ্রুত প‌রিবর্তন হ‌য়ে যাওয়াটা যেমন খারাপ। আবার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় য‌দি প্র‌তিনিয়ত দে‌শের আন্দোলন  এবং কোন্দল ঠেকা‌তে রাষ্ট্রনায়ককে  ব্যস্ত থাক‌তে হয়। ফ‌লে তার প্লানগু‌লো বাস্তবায়ন কর‌তে পা‌রে না। উন্নয়‌নের গ‌তিও ত্বরা‌ন্বিত হয় না। দেশও পি‌ছি‌য়ে যে‌তে থা‌কে। তাই অর্থনৈ‌তিক উন্ন‌য়ন এবং অর্থনৈ‌তিক অর্জন ধ‌রে রাখার অন্যতম অপ‌রিহার্য উপাদান হ‌চ্ছে ধারাবা‌হিকভা‌বে রাজ‌নৈ‌তিক স্থি‌তিশীলতা বজায় রাখা। রাজ‌নৈ‌তিক স্থি‌তিশীলতা বজায় রাখ‌তে না পার‌লে, 

প্লান বাস্তবায়ন করা যা‌য় না।
দেশেরও উন্নয়ন হয় না। ফ‌লে সা‌র্বিক সুফল জনগণকে দেওয়াও যা‌বে না।

একুশে‌ টি‌ভি অনলাই: তাহ‌লে‌ রাজনৈতি‌ক স্থি‌তিশীলতা বজায় রাখা জরুরি?

অধ্যাপক আমিনুল হক:  অবশ্যই, রা‌ষ্ট্রের প‌রিকল্পনা অনুসা‌রে প্লান বাস্তবায়‌নের মাধ্য‌মে, জনগণ‌কে সুফল দি‌তে হ‌লে ধারাবা‌হিক রাজ‌নৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই জরুরি।

একুশে‌ টি‌ভি অনলাই: বাংলা‌দেশ ডে‌মোগ্রা‌ফিক ডি‌ভি‌ডেন্ডে অবস্থা‌নের সময় অনেকটা পে‌রি‌য়ে‌ এ‌সে‌ছে। ‌কিন্তু এখনও এর সুফল‌টি ভোগ কর‌তে পার‌ছে না কেন? এর সীমাবদ্ধতা কোথায়? এ সু‌যোগ কা‌জে লাগা‌তে কি ধর‌ণের প‌রিকল্পনা দরকার?

অধ্যাপক আমিনুল হক: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বি‌নি‌য়োগ এবং সুশাসন প্র‌তিষ্ঠা এর সঙ্গে রাজ‌নৈ‌তিক স্থিতিশীলতার বিষয় জ‌ড়িত। এ চার‌টি য‌দি একসঙ্গে কাজ না হয়। তাহ‌লে অতিরিক্ত জন‌গোষ্ঠী কোন সুফল ব‌য়ে আন‌বে না। এ নি‌য়ে রাজনী‌তি‌বিদ এবং রাজ‌নৈ‌তিক বি‌শ্লেষকরা ভা‌লো বল‌তে পার‌বে। ত‌বে আমরা যে ধারাবা‌হিকতা দেখ‌ছি, সেই ধারাবা‌হিকতায় সুশাসন এবং জবাব‌দি‌হিতা একটা বড় বিষয়। এটা যেমন যে কোন রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর ম‌ধ্যে থাকা দরকার তেম‌নি সরকা‌রে প্র‌ত্যেক‌টি সেক্ট‌রের মধ্যে দরকার। একইভা‌বে প্রাই‌ভেট সেক্টরগু‌লোতেও থাকা দরকার। এ বিষয়গু‌লো প্র‌তিষ্ঠার জন্য সরকার চেষ্টা কর‌ছে। যেমন আমরা শিক্ষা খা‌তের বিষ‌য়ে য‌দি ব‌লি, একটা সময় ছিল কোন স্কু‌লে কি হ‌চ্ছে তা বুঝা যেত না। এখন ডিজিটা‌ল যু‌গে তথ্যপ্রযু‌ক্তির মাধ্য‌মে  ডি‌জি ইচ্ছে কর‌লে দেখ‌তে পা‌চ্ছেন কোন স্বু‌লে কতজন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উপ‌স্থিত আছেন এবং শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠানগু‌লোর সা‌র্বিক অবস্থান কি তা জান‌তে পারছেন। সর্বত্রই ম‌নিট‌রিং এর মাধ্য‌মে জবাবদি‌হিতার সুযোগ তৈরি হ‌য়ে‌ছে। এসব অর্জন আবার এসবই  সীমাবদ্ধতা। 

দ্বিতীয়ত, অর্থ উপার্জ‌নের সঙ্গে দক্ষ জন‌গোষ্ঠী এক‌টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দক্ষ জন‌গোষ্ঠীর না হ‌লে উৎপাদন এবং অর্থ উপার্জন আশা করা যায় না। কারণ একজন ব্য‌ক্তি দক্ষ না থাকার ফ‌লে সে কর্মক্ষমতা হাড়া‌চ্ছে। ফ‌লে সে নি‌জেও টাকা উপার্জন কর‌তে পার‌ছে না, প‌রিবারকে সাহায্য কর‌তে পার‌ছে না, সমাজ ও দেশকে কিছু দি‌তে পার‌ছে না। বরং তার অসুস্থতার জন্য তার পেছ‌নে অর্থ খরচ হচ্ছে।

তৃতীয় এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় হ‌চ্ছে অর্থনী‌তি‌তে বি‌নি‌য়োগ। এটা এক‌ দি‌নে সম্ভব নয়। এ নি‌য়ে আস্তে আস্তে আমরা অগ্রসর হ‌চ্ছি। একজন কর্মক্ষম মানুষ যা‌তে সময় মত সে উপার্জন কর‌তে পা‌রে, সীমাবদ্ধতার ম‌ধ্যে থে‌কে চেষ্টা ক‌রে যে‌তে হবে। তা করছেও স‌কার।

চতুর্থ, ডে‌মোগ্রা‌ফিক ডি‌ভি‌ডেন্ডের সুফল ভোগ কর‌তে হ‌লে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ক‌রে। সাধারণত শিক্ষা বল‌তে বিএ, এমএ পাশ করা‌কে বুঝায়। কিন্তু এখা‌নে যে বিষয়‌টি তা হ‌চ্ছে, সমা‌জে সেবা প্রদান করার মত দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা অর্থাৎ কা‌রিগ‌রি ভি‌ত্তিক শিক্ষা। বর্তমা‌নে যেসব শিক্ষার্থী ‌বিভিন্ন বিশ্ব‌বিদ্যালয় থে‌কে পাশ করে সা‌র্টি‌ফি‌কেট নি‌য়ে বের হ‌চ্ছে। এরপর আমরা যখন তাদেরকে চাকরি দিতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না। কারণ তাদের একজ‌নেরও সমা‌জে সেবা প্রধান করার মত দক্ষতা নাই। অর্থাৎ সেবা ভি‌ত্তিক কারিগরি শিক্ষার অভাব। তা‌দের শুধু সা‌র্টি‌ফি‌কেট আছে। সুতরাং ওই শিক্ষাটা দি‌তে হ‌বে। আর যা‌দের‌কে এখন পর্যন্ত প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক শিক্ষা দেওয়া হয় নাই তা‌দের‌কে কা‌রিগরি শিক্ষা দি‌তে হ‌বে। সীমাবদ্ধতার ম‌ধ্যে থে‌কেও তা দেওয়ার চেষ্টা করা হ‌চ্ছে। 

একু‌শে ‌টি‌ভি অনলাইন: আরবান অ্যান্ড রুরাল এর আওতায় এ জনশ‌ক্তি‌কে কিভা‌বে কা‌জে লাগা‌নো যায়?

অধ্যাপক আমিনুল হক: এ বিষ‌য়ে যেটা বল‌তে চাই তা হ‌লো চাকরি নয়, এবার আমরা বাংলা‌দেশটা‌কে সেবা দেওয়ার চিন্তা ক‌রি। আমরা যদি আরবান

অ্যান্ড রুরাল এর  আওতায় এ কর্ম‌ক্ষম গো‌ষ্ঠীকে ক্লি‌ন করার কা‌জে যুক্ত করে বাংলা‌দেশ‌কেটাকে ক্লি‌নিং করার ব্যবস্থাটা য‌দি করা যায়। তাহ‌লে হাজার হাজার কো‌টি টাকার স্বাস্থ্য খরচ ক‌মে যা‌বে। ‌কিন্তু প্রশ্ন হ‌চ্ছে আমরা কেউ কি ক্লি‌নিং এর কাজটা কর‌ছি? কিন্তু বি‌দেশের দি‌কে য‌দি তাকাই তাহ‌লে কি দেখ‌তে পাই, তারা কিন্তু ক্লি‌নিং‌য়ের কাজটা কর‌ছে। সেটা  নি‌জের দি‌য়ে হোক, আর অন্য লোক দি‌য়ে হোক। যেখা‌নে যেটা করার সেটা কর‌ছে,‌ যেখা‌নে যে রাখা দরকার সেটা রে‌খে‌ছে। আমরা য‌দি আমা‌দের জন‌গোষ্ঠী‌কে ওই ধর‌নের সব জায়গায় রাখ‌তে পা‌রি, সাজা‌নো জায়গায় রাখ‌তে পা‌রি, তাহ‌লে স্বাস্থ্য ব‌লেন এবং প‌রি‌বেশ গত যে ক্ষ‌তিগুলো হ‌চ্ছে তা কম‌বে। জি‌ডি‌পির একটা বড় অংশ বেচে যাবে। এভাবেই বি‌ভিন্ন  যায়গায় এ জন‌গো‌ষ্ঠেী‌কে কা‌জে লাগা‌নো যেতে পারে। অতি‌রিক্ত জন‌গো‌ষ্ঠীর সুফলটা ভোগ করা যা‌বে।

একু‌শে‌ টি‌ভি অনলাইন: এ জনশ‌ক্তি‌কে দে‌শে এবং বি‌দে‌শের শ্রমবাজা‌রে কা‌রিগরি শিক্ষা কি ভূ‌মিকা রাখ‌তে পা‌রে? 

অধ্যাপক আমিনুল হক: দে‌শে বি‌দে‌শে শ্রমবাজা‌রে কা‌রিগ‌রি শিক্ষার গুরুত্ব র‌য়ে‌ছে। কা‌রিগ‌রির আবার অনেকগু‌লো খাত র‌য়ে‌ছে। সরকারি খা‌তে কতজন কা‌রিগ‌রি লোকের প্রয়োজন, একইভা‌বে প্রাই‌ভেট সেক্ট‌রে কতজন প্র‌য়োজন । যেমন এক‌টি বি‌ল্ডিং তৈরির কা‌রিগরি ক্ষে‌ত্রে  কতগু‌লো লোক জ‌ড়িত আছে। ইঞ্জিনিয়ার থে‌কে শুরু ক‌রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারসহ ৩০ থে‌কে ৩৫ জন কা‌রিগরী লো‌কের প্র‌য়োজন হয়। শুধু একটা বি‌ল্ডিং তৈরির ক্ষে‌ত্রেই এতগু‌লো লো‌কের প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য খাত থে‌কে শুরু ক‌রে গার্মেন্ট‌স এমন‌কি রাস্তায় পর্যন্ত  কা‌রিগরি লোক লা‌গে।

কিন্তু বাংলা‌দে‌শে সমস্যা হ‌চ্ছে এক‌টি স্কুল ও এক‌টি ক‌লেজ তৈরি কর‌তে কতজন লোক লাগবে, এক‌টি বি‌ল্ডিং তৈরি কর‌তে কতজন লোক লাগবে, এক‌টি হাউজ মেইন‌টে‌ন্সের জন্য কতজন লোক লাগ‌বে। বাংলা‌দে‌শে এই ধর‌নের বি‌ভিন্ন সেবাখাতগু‌লো‌কে এখনও চি‌হ্নিত করা হয়‌নি। ওই কা‌রিগরি  কাজগু‌লো করার জন্য বাংলা‌দে‌শে কতজন কারিগরি লো‌ক আছে। তা হি‌সেব ক‌রে বের কর‌তে হ‌বে। তারপর বলা যা‌বে কতজন কারিগরি লোক লাগ‌বে। যেমন বাংলা‌দে‌শে চা‌রে কো‌টি হাউজ হোল্ড আছে। য‌দি  ৮০ শতাংশ বাসায় টি‌ভি থাকে। তাহ‌লে তিন কো‌টি ২০ লাখ টি‌ভি আছে। এর ম‌ধ্যে য‌দি ১০ শতাংশ টি‌ভি য‌দি মেরাম‌তে থা‌কে। তাহ‌লে প্র‌তি‌দিন ৩২ লাখ টি‌ভি মেরাম‌ত করা দরকার। য‌দি ৫ শতাংশ হয় তাহ‌লে প্র‌তি‌দিন য‌দি  ১৬ লাখ টি‌ভি প্র‌তি‌দিন মেরাম‌তের দরকার হয়। তাহ‌লে  একজন ব্য‌ক্তি যদি প্র‌তি‌দিন ২০টি টি‌ভি মেরামত ক‌রে। এর হি‌সেব ক‌রে বলা যায় এক্ষেত্রে কত লাখ কা‌রিগরি লোক লাগ‌বে। এইভা‌বে খাত চি‌হ্নিত ক‌রে হি‌সেব করে বের কর‌তে হ‌বে কোনখা‌তে কতজন লোক লাগ‌বে‌। সরকার‌কেই ব‌লতে ‌হ‌বে কা‌রিগরির এই খাতগু‌লো‌তে এত লাখ লোক লাগ‌বে। সে‌ক্ষেত্রে কা‌রিগরি শিক্ষায় শিক্ষা থাক‌লে তা সার্ভাইব করা যা‌বে।  ভে‌ঙ্গে  ভে‌ঙ্গে য‌দি বলা যায়, আগামী‌তে বাংলা‌দে‌শে ২০২০ সালে, ২০২৫ সা‌লে এবং ২০৩০ সাল এবং ২০৪০পর্যন্ত কোন কোন সেবা খা‌তে  কতজন লোক লাগ‌বে। তাহ‌লেই  জনশ‌ক্তিকে দক্ষ ক‌রে গ‌ড়ে তু‌লে কা‌জে লাগা‌নো যা‌বে। এ বিষ‌য়ে আমরা বি‌বিএসকে ব‌লে‌ছি, প্লা‌নিং ক‌মিশন‌কেও ব‌লে‌ছি। আশা ক‌রি তারা এ কাজগু‌লো কর‌বেন।  

আরেক‌টি ‌বিষয় হ‌চ্ছে, বর্তমান ডে‌মোগ্রা‌ফি‌ক ডিভি‌ডে‌ন্ডের সুফল পে‌তে হ‌লে কাগ‌জে লি‌খিত নি‌য়োগপত্র ভি‌ত্তিক যে চাকরি তা ভু‌লে যে‌তে হ‌বে। অর্থাৎ সমা‌জে সেবা দেওয়ার ব্য‌ক্তির মধ্যে থাক‌তে হ‌বে, ব্য‌ক্তি সেই সেবার মাধ্য‌মে উপার্জনও কর‌বে। যেমন একজন ব্য‌ক্তি য‌দি ফ্রিজ মেরামত ক‌রে প্র‌তি ফ্রি‌জে ২০০ টাকা নেন, মা‌সে ২০টি ফ্রিজ মেরাম‌তের বি‌নিম‌য়ে তার ১০ হাজার টাকা উপার্জন। এভা‌বেউ কর্ম‌ক্ষেত্রে লে‌গে থাক‌তে হ‌বে। ওই গ্রেডভি‌ত্তিক চাকরির কথা ভু‌লে যে‌তে হ‌বে। কারণ  বাংলা‌দে‌শে যে প‌রিমাণ কর্মক্ষম জন‌গোষ্ঠী আছে পৃথিবীর কোন দে‌শের পক্ষেই এত লো‌কের জন্য অফিসে চেয়ার-‌টে‌বি‌ল দেওয়া সম্ভব না। তাই ব্য‌ক্তি‌কে সেবাখা‌তের মাধ্যমে উপার্জ‌নের বিষয়‌টি ভা‌বতে হ‌বে।  

একু‌শে‌ টি‌ভি অনলাইন: কর্মক্ষম শ‌ক্তি‌কে কা‌জে লা‌গি‌য়ে অর্থ‌নৈতিকভা‌বে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠ‌নে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধ‌টিতে কি ধর‌নের প‌রিবতর্ন প্রয়োজন? 

অধ্যাপক আমিনুল হক:  এক্ষে‌ত্রে ২০২০ সাল‌ ২০২৫ সাল ২০৩০ পর্যন্ত বাংলাদে‌শের সেবাখাতগু‌লো কি ‌কি তা চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। অর্থাৎ  নির্ধারণ ক‌রে য‌দি বলা যায় ২০২৫ সা‌লে রি‌ফ্রিজারেটর থাক‌বে এক কো‌টি। এই এক কো‌টি রিফ্রিজারেটর মেরামত করতে এক লাখ লোকবল দরকার ।
এইভা‌বে সেবাখাতগু‌লো‌কে য‌দি চি‌হ্নিত ক‌রে বলা যায়। তাহ‌লে শিক্ষা খাত‌কে বলা যা‌বে এই ধরণের কারিগরী শিক্ষায় শি‌ক্ষিত লোক দরকার। যখনই নীট বলা যা‌বে, তখন স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা কা‌রিকুলাম তৈরি হ‌য়ে যা‌বে।  অর্থাৎ শিক্ষা খাতকে উৎপাদন মু‌খী কর‌তে চাই। তাই  উৎপাদনের ক্ষেত্রগু‌লি আগেই  সৃষ্টি করা যায়, তাহ‌লে মানুষ স্বাভাবিকভাবে ওই দি‌কে চ‌লে যা‌বে। আরেকটি বিষয় হ‌চ্ছে সরকার‌কে নি‌র্দিষ্ট ক‌রে সেবাখাতগু‌লোর বিষ‌য়ে বলে দি‌তে হ‌বে। সে‌ক্ষে‌ত্রে সরকার চেষ্টা কর‌বে দক্ষ লোকবল তৈরির জন্য নি‌জে প্র‌তিষ্ঠান  করার। অথবা প্রাই‌ভেট সেক্টর‌কে নি‌র্দিষ্ট ক‌রে বল‌তে পা‌রে, আমা‌কে বছরে পাঁচ লাখ ইলেকট্রেশিয়ান তৈরি ক‌রে দি‌তে। এতে কত টাকা বি‌নি‌য়োগ কর‌তে হ‌বে? অর্থাৎ কর্মক্ষম জন‌গোষ্ঠী‌কে কর্মক্ষেত্র ক‌রে তুল‌তে হ‌লে সেবাখাতগু‌লো‌কে চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। আ‌র এভা‌বেই কর্মমূ‌খী শিক্ষার্থী‌দের জন্য কর্মমূখী কা‌রিকুলাম তৈরি কর‌তে হ‌বে। 

একুশে‌ টিভি অনলাইন:‌ দক্ষ জনশ‌ক্তি গ‌ড়ে তোল‌তে শিক্ষাখা‌তে কেমন বি‌নি‌য়োগ প্র‌য়োজন?

অধ্যাপক আমিনুল হক: বর্তমা‌নে উচ্চ শিক্ষার জন্য, উচ্চ মাধ্য‌মি‌কের জন্য, হাই স্কু‌লের জন্য এবং গবেষক তৈরির জন্য যেভা‌বে বি‌নি‌য়োগ করা হয়, এই অবস্থা থে‌কে বের হ‌য়ে আসতে হ‌বে আমা‌দের। অর্থাৎ শিক্ষাখা‌তে বি‌নি‌য়োগ করার আগে সেবাখাতগু‌লো‌কে চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। কোন খা‌তে কতজন লোক লাগ‌বে তার ওপর ভি‌ত্তি ক‌রে দক্ষজনশ‌ক্তি  তৈরির জন্য বি‌নি‌য়োগ‌ কর‌তে হ‌বে। যেমন- উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন লোক তৈরি কর‌তে ট্রে‌নিং এর জন্য বি‌দে‌শে পাঠ‌তে হ‌বে। এক্ষেত্রে কতজনকে পাঠা‌নো হ‌বে, ওই হিসাবটা ক‌রে বি‌নি‌য়োগ কর‌তে হ‌বে। একইভা‌বে কা‌রিগ‌রি শিক্ষায়ও বি‌নি‌য়োগের পূ‌র্বে ভাব‌তে হ‌বে, টেক‌নিক্যাল এবং ভো‌কেশনাল কো‌র্সের মেয়াদ কত‌দি‌নের হ‌বে। অর্থাৎ কাউকে য‌দি টি‌ভি মেকা‌নিক্স হি‌সে‌বে গ‌ড়ে তোলতে হয়, সেখা‌নে বি‌নি‌য়োগ কর‌তে হ‌বে কো‌র্সের মেয়া‌দ কত দি‌নের, তার ওপর নির্ভর ক‌রে। আবার আরেকটি বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র য‌দি ম‌নে ক‌রে তার প‌লিসি মেকার এবং দক্ষ গ‌বেষক দরকার। তাহ‌লে আগে নির্ধারণ কর‌তে হ‌বে কতজন লোক দরকার। তা‌দের তৈরির জন্য ট্রে‌নিংয়ের ব্যবস্থা দে‌শেও করা যে‌তে পা‌রে আবার দে‌শের বা‌হিরেও করা যে‌তে পা‌রে। য‌দি দে‌শে করা‌নো হয় তাহ‌লে  ভাব‌তে হ‌বে কতজন শিক্ষার্থীর জন্য কতজন শিক্ষক লাগবে, কোর্স কা‌রিকুলাম এবং ‌কো‌র্সের মেয়াদ কত‌দিনের হ‌বে, য‌দি বা‌হি‌রে পাঠা‌নো হয়, তাহ‌লেও চিন্তা কর‌তে হ‌বে কতজন‌কে পাঠা‌নো হবে ওই হিসাবটা ক‌রে শিক্ষাখা‌তে বিনি‌য়োগ কর‌তে হ‌বে। এভাবেই  সেবা খাতগু‌লে চি‌হ্নিত করে, কি প‌রিমাণ দক্ষ‌লোক লাগ‌বে তার ওপর ভি‌ত্তি ক‌রে দক্ষ জনশক্তি গ‌ড়ে তুল‌তে শিক্ষাখা‌তে বি‌নি‌য়োগ করা যা‌বে। একটা দেশ যেহেতু জা‌নে তার কতজন লোক লাগ‌বে। সুতরাং সেবাখাতগু‌লো চি‌হ্নিত কর‌তে পার‌লে কোর্স কা‌রিকুলাম এবং কতজন শিক্ষ‌কের ওপর কি প‌রিমাণ খরচ হ‌বে তা নির্ধারণ করা যা‌বে।

একু‌শে‌ টি‌ভি অনলাইন: চলমান কোটা পদ্ধ‌তি বা‌তিল করলেই কি এই বেকার সমস্য সমাধান হ‌য়ে যা‌বে? কোটা ব্যবস্থা পদ্ধতি কেমন হওয়া উ‌চিৎ ব‌লে আপ‌নি ম‌নে ক‌রেন?

অধ্যাপক আমিনুল হক: বর্তা‌মা‌নে বাংলা‌দে‌শে কর্মক্ষম লোক অনেক বে‌শি। প্র‌তি ‌নিয়ত ২০ লাখ লোক কর্মক্ষম হ‌চ্ছে। স‌র্বোচ্চ ১০ লাখ লো‌কে কর্ম‌ ক্ষে‌ত্রে যেতে পার‌ছে।  তারপরও ১০ লাখ লো‌কের পার্থক্যটা থে‌কেই যায়। কোটা য‌দি উঠিয়ে দে‌ওয়াও হয়। তবুও ১০ লাখ লো‌কের চাকরি  দেওয়া সম্ভব হবে না। কোটার সঙ্গে বেকার‌ত্বের কোনো সম্পর্ক নাই। আন্দোলনকারীরা হয়‌তো ভাব‌ছে বর্তমান কোটা পদ্ধ‌তির কার‌ণে চাকরিতে তারা বাধাগ্রস্ত হ‌চ্ছে। কোটা না থাক‌লে বাধাগ্রস্ত হতো না তা‌দের এই আক্ষেপটা আছে। তারা পরীক্ষার মাধ্য‌মে প্র‌তি‌যোগীতায় যে‌তে চা‌চ্ছে। মেধার প্রাতিযোগীতায় যে‌য়ে য‌দি তারা না টি‌কে বেকারও থা‌কে, তাহ‌লে হয়‌তো তা‌দের আক্ষেপ থাক‌বে না এটা ধারণা থে‌কে বল‌ছি। কিন্তু বাস্তবতা হ‌লো  কোটা পদ্ধ‌টির সঙ্গে বেকার‌ত্বের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ২০ লাখ কর্মক্ষম লো‌কের ম‌ধ্যে ১০ লাখ লো‌কের চাকরি দেওয়া সম্ভব না। সুতরাং ১০ লাখ বেকারতো র‌য়েই গে‌লো। তাহ‌লে কোটা পদ্ধ‌তি বা‌তিল ক‌রে লাভ কি? 

একু‌শে টি‌ভি অনলাইন: বর্তমান কোটা পদ্ধ‌তি‌তে কি যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা সম্ভব?

অধ্যাপক আমিনুল হক: যোগ্যতার দু‌টি দিক আছে। এক‌টি হ‌চ্ছে সমা‌জের মধ্যে অসমকে সমতায় আনতে চাওয়া আরেকটি বিষয় হ‌চ্ছে,অনগ্রসর ব্য‌ক্তি‌দের সাম‌নের দি‌কে এগিয়ে নি‌য়ে যাওয়া। কোটা পদ্ধ‌টির প্রচলনতা শুরু হ‌য়ে‌ছিল সেই যায়গা থে‌কেই। অর্থাৎ সমা‌জের কিছু কিছু গোষ্ঠী‌কে এগিয়ে নি‌য়ে যাওয়ার জন্য। এই ধরণের বাস্তব যু‌ক্তিকতা থে‌কেই কোটা পদ্ধ‌টির প্রচলন করা হ‌য়ে ছিল। ‌কিন্তু এখন য‌দি জা‌তি ম‌নে ক‌রে একটা লে‌ভেল পর্যন্ত কোটা পদ্ধ‌টির প্র‌য়োজন ছিল, এখন আর প্র‌য়োজন নাই। তাহ‌লে কোটা প‌রিবর্তন কর‌তেই পা‌রে। কিন্তু তা করার আগে অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্য‌মে একটা যো‌ক্তিক মাত্রায় গি‌য়ে পৌঁছাতে হ‌বে, তারপর প‌রিবর্তন করা যে‌তে পা‌রে। তার আগে নয়।  

একু‌শে ‌টি‌ভি অনলাইন: কোটা সংস্কা‌রের কি কোন প্র‌য়োজনীয়তা নেই?

অধ্যাপক আমিনুল হক:  যে‌কোন সময় যে কোন বিষ‌য়ে সংস্কার হ‌তেই পা‌রে। সুতরাং কোটারও সংস্কার হ‌তে পা‌রে। সংস্কারের ক্ষে‌ত্রে কোন দ্বিমত নেই। আন্দোলনকারীরা একটা বিষয় নি‌য়ে চিন্তা ক‌রে আন্দোলন কর‌তেই পা‌রে। কিন্তু স‌রকারকে এ নি‌য়ে নানাভা‌বে ভাব‌তে হয়। এ নি‌য়ে রাষ্ট্র যন্ত্র‌কে চিন্তা ক‌রে ক‌মি‌টি ক‌রে তার নে‌গে‌টিভ,‌ প‌জে‌টিভ, দে‌শের কল্যাণ ব‌য়ে আন‌বে না‌কি  অকল্যান ব‌য়ে আন‌বে তা চিন্তা ক‌রে সংস্কারের সিদ্ধান্তে আস‌তে হ‌বে। 

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি