ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কোটার প্রজ্ঞাপনে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত : গীতি আরা নাসরীন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪২, ৪ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৭:০৪, ১০ জুন ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

প্রধানমন্ত্রী নিজে কোটা পদ্ধতির বিষয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটি আইন হয়ে গেছে। তাই কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে এভাবেই নিজের অভিমত তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন

সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার সময়ের দাবি। এর প্রতি আমারও সমর্থন আছে। তবে কোটার সংস্কারই একমাত্র সমাধান না। বরং রাষ্ট্র যেনো কাজের সুযোগ তৈরির বিষয়ে আরও মনোযোগী হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কাজের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, যে কাজের যোগ্য তাকে সেখানে প্রয়োগ করা- রাষ্ট্রের পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের তরুনদের বড় একটি অংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার। আপনার অভিমত কী?

গীতি আরা নাসরীন: আমাদের দেশে শিক্ষিত তরুণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তরুণদের সমস্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। ফলে সমস্যাগুলো প্রকট হতে হতে তরুনদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে। তাদের হতাশার জায়গাটা গভীর হচ্ছে। এদেশে শিক্ষিত বেকারের হার কম নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই এমন এর ফলে কিছু সার্টিফিকেট ধারী বা ডিগ্রিধারী তৈরি হয় বছর বছর। কিন্তু দক্ষ জনশক্তি তৈরী হয় না।

আমাদের দেশের চাকরির বাজার সীমিত। কিন্তু এর পরেও যে পরিমাণ কর্মদক্ষ লোকের চাহিদা আছে সে পরিমাণ কর্মদক্ষ লোক কিন্তু আমরা তৈরী করতে পারিনি। আবার এখানে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী লোকের সংখ্যা অনেক। এখন যারা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে, তারা যদি ভেবে থাকে যে, কোটা তুলে দিলে বা কোটা সংস্কার করলে সব সমস্যা মিটে যাবে তা ভুল। কারণ, কোটা শুধু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং আমাদের দেশে সরকারি চাকরির সংখ্যা খুব বেশি না। কথার কথা বলছি, যদি কোটা তুলে দেওয়া হয় বা এখন যেভাবে সংস্কারের কথা চলছে যদি সেভাবে সংস্কার হয় তাহলে কি বেকারত্ব মিটবে? মিটবে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি এক্ষেত্রে কি সুপারিশ করবেন?

গীতি আরা নাসরীন: যারা কোটা সংস্কারের দাবি তুলেছেন বা আন্দোলন করছেন তারা হয়তো নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে অবলোকন করছেন। কিন্তু যারা রাষ্ট্রীয় বিষয় পরিচালনা করছেন তাদের দৃষ্টি কোনো কিছু এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। কোটা সংস্কারের প্রতি আমারও সমর্থন আছে। তবে কোটা একমাত্র সমাধান না। বরং রাষ্ট্র যেনো কাজের সুযোগ তৈরির বিষয়ে আরো মনোযোগী হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। কাজের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাকে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করা, যে কাজের যোগ্য তাকে সেখানে প্রয়োগ করা- রাষ্ট্রের পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাওয়া উচিত। একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা সংস্কার আন্দোলন কি আপনি সমর্থন করছেন?

গীতি আরা নাসরীন: এখানে একটা বিষয় অনেকে গুলিয়ে ফেলছেন। সেটি হচ্ছে কোটা বাতিল ও সংস্কার। কোটা বাতিলের কথা কিন্তু কোথাও আসেনি। ছাত্ররা শুরু থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আমিও কোটা বাতিলের বিরুদ্বে। বরং কোটা সংস্কারটাই আজ সময়ের দাবি। আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যারা আছে তাদের সমান তালে নিয়ে আসার জন্য তাদের জীবন মান থেকে বৈষম্য দূর করার জন্যই কোটা প্রয়োজন। কিন্তু এতোদিন নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অধীনে কোটা পদ্ধতি নিয়ম মেনে চলেছে, এমনটা দাবি করা যাবে না। বরং পরিকল্পনাহীনভাবে যখন যেরকম চাওয়া হয়েছে সেরকম খুশি মতো কোটা পদ্ধতি চলেছে। কোটা প্রথায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাদান সংযুক্ত হয়েছে। ফলে এভাবে চলতে চলতে ৫৬% কোটা আমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে। এরফলে তরুণদের যে অংশটি কোটার সুবিধা বঞ্চিত তারা সংকটে পড়ছে। তারা উপলব্ধি করছে যে তারা বৈষম্যের স্বীকার। সেই জায়গা থেকে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। যার বহি:প্রকাশ ঘটছে রাজপথে। সেই বিবেচণায় আমি বলব, কোটা বাতিল নয়, সংস্কার-ই জরুরি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটার সংস্কার কীভাবে হতে পারে?

গীতি আরা নাসরীন: যেই কোটাই থাকুক না কেন সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকা উচিত। সেটা দশ বছর, বিশ বছর, পঁচিশ বছর হতে পারে। সেই নির্দিষ্ট সময় পর সেই কোটা কতটুকু কার্যকর হয়েছে বা তার কার্যকারীতা এখন কতোটুকু এসব বিবেচনায় আনা উচিত। সেই কোটা বহাল থাকবে কিনা, থাকলে কেন থাকবে, সেই কোটা কি প্রত্যাহার করা হবে নাকি বহাল থাকবে, কেন বহাল থাকবে বা কেন প্রত্যাহার হবে সব পর্যালোচনার দাবি রাখে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের সংসদে নারী সদস্যদের কোটা নিয়েও কিন্তু সংস্কার করা হয়…

গীতি আরা নাসরীন: রাইট। আমিও সেটাই বলছিলাম। সংসদে যেমন নির্দিষ্ট সময় পর পর পর্যালোচনা করা হয় তেমনি চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষত জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিয়োগের বেলায় কোটা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়া উচিত।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমরা কোটা সংস্কার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছিলাম?

গীতি আরা নাসরীন: একই পরিবারের সব সদস্য কোটার সুবিধা পাবে এটা যেমন কাম্য নয় তেমনি কোটার আওতায় থাকা সত্ত্বেও অনেকে কোটা বঞ্চিত হচ্ছে, এটাও প্রত্যাশিত নয়। আবার অনেকে পদে পদে কোটার সুবিধা ভোগ করে থাকে। দেখা গেল একজন একটি চাকরিতে নিয়োগ নিতে গিয়ে কোটার সুবিধা পেল। কিছুদিন পর সেই চাকরি তার ভাল লাগলো না। তখন সে আবার অন্য চাকরিতে নিয়োগ পেতে গেল। সেখানেও সে কোটার সুবিধা নিচ্ছে। এভাবে সব সময় সব জায়গায় একজন লোক বারবার কোটার সুবিধা পাওয়া কোনো অবস্থায়-ই ভালো কথা নয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা সংস্কার হলে কোন কোন ক্ষেত্রে কোটা রাখা যেতে পারে? গীতি আরা নাসরীন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী ও প্রতিবন্ধীদের কোটায় রাখার কথা বিবেচনা করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কত পার্সেন্ট রাখা হবে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। আমি মনে করি বিতর্কের কিছু নেই। সব মুক্তিযোদ্ধার অবস্থা এক রকম নয়। কারো কারো অবস্থা খু্বই খারাপ। দিন এনে দিন খায় এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। তারা কোটার আওতায় আসবেন না কেন? পক্ষান্তরে এমপি, মন্ত্রী ও শিল্পপতি পর্যায়েও অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তারা কেন কোটা সুবিধা নেবেন? অর্থাৎ যিনি কোটা সুবিধা নিচ্ছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিনা বড় কথা নয় বরং তার বর্তমান অর্থনৈতিক- সামাজিক অবস্থা কেমন সেটাই বড় কথা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সেক্ষেত্রে কত পার্সেন্ট কোটা রাখার পক্ষে আপনি?

গীতি আরা নাসরীন: আমি সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫- ২০পার্সেন্ট কোটা রাখার পক্ষপাতী। তবে এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করে রাখা দরকার। অনেকের মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তা হলো, যারা কোটায় নিয়োগ পায় তারা মেধাবী নয়। এটা ভুল ধারণা। কোটায় অনেক মেধাবীও নিয়োগ পায়। আমি নিজে তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার কোটা পাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোটা সুবিধা নেননি, এমনটাও কম নয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন কোটা বাতিল করা হবে। সেই আশ্বাসে ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করলো। কিন্তু এখনো প্রজ্ঞাপন আসেনি…

গীতি আরা নাসরীন: দেখুন, রাষ্ট্রীয় যেকোনো কাজেই সময় লাগে। তাছাড়া কোটা সংক্রান্ত বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের। আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দায় এড়াতে পারে না। সব মিলিয়ে কিছুটা সময় লাগতেই পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী নিজে যে বিষয়টি সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছেন সেটি আইন হয়ে গেছে। সরকারের প্রধান ও রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর সিদ্ধান্ত আইন। পাশাপাশি এটাও সত্য একটা আনুষ্ঠানিকতা সব ক্ষেত্রে দরকার। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের দরকার ছিল প্রজ্ঞাপন জারির ব্যাপারে আরও সক্রিয় হওয়া।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি