ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মেধার মূল্যায়নে বন্ধ করতে হবে শিক্ষা বাণিজ্য: সিরাজুল ইসলাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৪৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থী, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর তিন থেকে চার বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। অনেকেই কোচিংও করেছেন। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদটা আসলে কোথায়? অন্যদিকে দেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের বা জনসংখ্যার বোনাস যুগ অতিবাহিত করছে। যেখানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষম। এই সুযোগটা কতটা কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অধ্যয়ন অনুষদের সাবেক ডিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও একই বিভাগের অধ্যাপক মো. সিরাজুল  ইসলামের

তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতিবছর শিক্ষিতের হার বাড়ছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্র তত বাড়ছে না। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আমাদের দেশে যখন এ বেকারত্মের সংখ্যা বাড়ছে। ঠিক তখন আবার বিদেশীরা আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিচ্ছেন। যা আমাদের চাকরির বাজারকে সঙ্কুচিত করছে। তবে এর জন্য আমাদের শিক্ষা বাণিজ্যও অনেকটা দায়ী। বাণিজ্যের আড়ালে আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া না করেই বছর শেষে সার্টিফিকেট পেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, জ্ঞান ও দক্ষতায় ঘাটতি থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েদের সে সার্টিফিকেট চাকরির পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কাজে আসছে না।তাই আমাদের ছেলে-মেয়েদের  প্রকৃত শিক্ষিত, জ্ঞানি ও দক্ষ করে তুলতে হলে, তাদের মেধার মূল্যায়ন করতে হলে, চাকরি  উপযোগি করতে হলে দরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান অসুস্থ্ বাণিজ্য।

দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির শেষ পর্ব আজ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে কোচিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাণিজ্যের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? 

সিরাজুল ইসলাম: আসলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোন একটি খাত গড়ে উঠলে প্রাথমিকভাবে সেখানে কিছু অনিয়ম হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা এদেশে বেশিদিন আগে হয়নি। বড়জোর ২০ বছর আগে থেকে এর প্রসার ঘটেছে। এখন সময় এসেছে এগুলোকে তদারকি করার। তারা কি পড়ায়, কি পরিমান টাকা তারা আয় করছে। সরকারের খাতায় কি পরিমাণ দিচ্ছে।তাদের আরোপিত বিভিন্ন ফি শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে কি না। 

আমাদের একটি ছেলে গ্রাজুয়েট পাসের পরও ভালো ইংরেজি বলতে পারে না। কিন্তু এই দেখুন পাশের দেশ ভারত।এখানকার সব ক্রিকেটার সহজেই ইংরেজি বলতে পারে। আর আমাদের অনেক ক্রিকেটার ইংরেজি ভালো বলতে পারে না। শিক্ষাঙ্গনে আমাদের ইংরেজিসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছু যোগ হয়নি। যার কারনে ক্রিড়াসহ যব মার্কেটেও আমরা পিছিয়ে পড়ি। আসলে আমরা যে ধরণের লেখা-পড়া করার দরকার সে ধরণের লেখা-পড়া করাচ্ছি না। সেই মানের লেখা-পড়া আমরা না করিয়ে বছর শেষে সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি। যে সার্টিফিকেট আসলে কোন কাজেই আসছে না।তাই শিক্ষা বাণিজ্যের যে অভিযোগ রয়েছে এটা অহেতুক নয়। এটা বন্ধে সরকার তথা রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করতে পারলে শিক্ষায় বস্তুনিষ্ঠতা আসবে। দেশে প্রকৃত শিক্ষিত, দক্ষ ও জ্ঞানি মানবসম্পদ গড়ে উঠবে।তখনই দেশে টেকসই উন্নয়ন হবে। জ্ঞানের ঘাটতি রেখে কেউ সার্টিফিকেট না পেলে আগামী প্রজন্ম প্রকৃত জ্ঞানি হয়ে উঠবে। কেননা তারা বুঝবে যে অধ্যায়ন বা শিক্ষা ছাড়া সার্টিফিকেট   মিলবে না। কাজেই আমাকে প্রকৃত অর্থে শিখতে হবে। জানতে হবে।

তখন আামদের গ্রাজুয়েটদের একটি মেইল লিখতে বা ইংরেজিতে কোন আবেদন করতে দূর্বলতা দেখা যাবে না। তারা অন্যান্য দেশের মতো শানিত মেধার অধিকারি হবে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার মেধার মূল্যায়ন হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষাকে কীভাবে নিরেট সেবায় রূপান্তর করা যায়?

সিরাজুল ইসলাম: আমাদের দেশের স্কুল ও কলেজগুলোতে লেখা-পড়া হয় কতদিন।বছরে তারা সময় পায় ১২ মাস। যার মধ্যে গৃষ্মের বন্ধসহ নানাবিধ বন্ধে বছরে সাড়ে তিন থেকে চার মাস বন্ধ থাকে। এর ভিতরে আবার প্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষা, অনার্স পরীক্ষা, মাস্টার্স পরীক্ষা হচ্ছে।এতোসব পররীক্ষার সময় ক্লাস হয় কম। এসবের  মধ্যে একজন শিক্ষক পড়ানোরই সুযোগ পায় না।আর শিক্ষকের পাঠদানের ঘাটতিতে ছাত্ররা কোচিংয়ের উপযোগীতা অনুভব করে।যার কারণে কোচিং প্রসার দিনের পর দিন বাড়ছে। কোচিংগুলো সবই খারাপ না। তারা কিছু জানে বা জানায়-শিখায়।

এখন কলেজ বা স্কুলে আমরা যদি ঠিকমতো পড়াতে না পারি।সময়টা ঠিকমতো না দেয়।স্বাভাবিকভাবে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।অভিভাবকরা চায় তার সন্তান যেন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এসে বিশ্ববিদ্যালযে ভর্তি হতে পারে।আগে স্কুল বা কলেজে এতো পরীক্ষাও ছিল না। আবার প্রতিযোগিতাও ছিল না।বিভিন্ন পরীক্ষার পাশাপাশি কলেজগুলোতে থাকে ক্লাস নেওয়া তাড়া। সবকিছুর ডামাডোলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।শিক্ষকরা মনে করি আমি গবেষণা বা ক্লাসের ফাঁকি দিয়ে বাইরে একটা ক্লাস করাই সেখানে লাভ বেশি।লাভের বিষয়টি সেখানে বড় হয়ে দেখা দেয়। যেটা সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করা উচিত। সরকারকেও ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।যেমন শিক্ষক যেন তার ক্লাস টাইম তথা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোন কোচিং বা প্রাইভেট না পড়াতে পারে সে জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে অনেকটাই সনদনির্ভর। দেশপ্রেম, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এগুলোর চর্চার অভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়?

সিরাজুল ইসলাম: আমরা শিক্ষক বা ছাত্র কেউই সমাজের বিচ্ছিন্ন অংশ নয়।যখন দেখা যায় পরিবারে কারো সঙ্গে কারো ভালো সম্পর্ক নেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।এটা আমার দলের না। সেটা আমার দলের। তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। তার সঙ্গে করো না।পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকট হয়েছে।যেখানে শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়েছে। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর।যার ফলে দেখা যায় শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ আগের তুলনায় কম।

এছাড়া মাদকের একটা ভয়াবহ রূপ আমাদের গ্রাস করেছে।এই মাদকের কারণে যে লোকটাকে আমরা উৎপাদনমুখী কাজে লাগাতে পারতাম।সেটা পারছি না।উল্টো তরুণ সমাজ এর ছোবলে নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে নানা অকারণে জড়িয়ে পড়ছে। খুব দ্রুত আমাদের দেশে মাদক ছড়িযে পড়ছে।কারণ একটা লোক দেখে উৎপাদনমুখী কাজে তার আয় হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। আর মাদকের কাজে গেলে তার আয় হচ্ছে ১০ লাখ টাকা।কাজেই মাদকগুলো বন্ধ করা এবং তাদের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করার উপর জোর দিতে হবে।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি