আবাসিক সংকটে ববি শিক্ষার্থীরা, ৬০% ভাড়া মওকুফের দাবি
প্রকাশিত : ২২:০০, ১৭ জুন ২০২০
গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনটি হলে আবাসিক সুবিধা পান মাত্র ২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হয়। তবে এই সঙ্কটকালীন নানামূখী সমস্যায় পড়ে তারা পরিশোধ করতে পারছে না মেসের ভাড়া। মেস মালিকদের নিয়মিত চাপ প্রয়োগ, এমনকি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সম্পূর্ণ না হলেও অন্তত মূল ভাড়ার ৬০ শতাংশ মওকুফের ব্যবস্থা করলে কিছুটা সহনীয় হয়। এছাড়া এ বিষয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু প্রণোদনা দিলেও চাপ মুক্ত হবেন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সকলেই ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিন পার করছে৷ এই প্রতিকূল অবস্থায় ও মেসের ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে আমাদের৷ আমদের বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের৷ কৃষিকাজ বা দৈনন্দিন কাজ করে জীবন চালায়৷ খুব কষ্ট করে ছেলে-মেয়ের খরচ বহন করে৷ এখন সকল আয়ের পথও বন্ধ৷ কোনোরকম দিনাতিপাত করছে সবাই৷ এমতাবস্থায় মেস ভড়া দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৬০ শতাংশ ভাড়া মওকুফ করার দাবি জানাচ্ছি।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নমূখী। আমরা যারা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি তাদের মধ্যে সিংহভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই কর্মহীন অবস্থায় পরিবারের আহার জোগানো যেখানে কষ্টকর সেখানে বাড়িওয়ালাদের বাসা বাড়ার চাপ আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলিসা মুনতাজ বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস করোনা পরিস্থিতির দরুণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে আছে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। অনেকেই দীর্ঘ লকডাউনে হারিয়েছেন তাদের টিউশনি। এমনতাবস্থায় যারা মেসে থাকেন সেসব শিক্ষার্থীদের মেসের পুরো ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হচ্ছে- যেটা অনেকের জন্যে ভয়াবহ কষ্টের। অনেককে বাসা ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে, জিনিসপত্র ফেলে দেয়ার হুমকি অব্দি আসছে। এ অবস্থাকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘করোনাকালীন মেস ভাড়া সংকট নিরসনে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ চাই’ নাম দিয়ে ইভেন্ট খুলে আমরা ভার্চুয়ালি আমাদের দাবিদাওয়া জানিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি।
এদিকে বাড়ির মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন লিখিত নোটিশ তারা পাননি।
এই ব্যাপারে ববি প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়িওয়ালাদের মানবিক আচারণ করা উচিত। তিনি আরও জানান, কোন শিক্ষার্থী হুমকি বা চাপ প্রয়োগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। সংশ্লিষ্ট মেস ও বাড়ির মালিকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি মানবিক ও সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানাই।’
এনএস/
আরও পড়ুন