অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম: পক্ষে-বিপক্ষে যবিপ্রবি ছাত্রনেতারা
প্রকাশিত : ১৮:১৮, ৩০ জুন ২০২০
বর্তমান বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনা (কোভিড-১৯) মহামারিতে আক্রান্ত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে চলছে কঠোর লক-ডাউন, বাংলাদেশেও ব্যতিক্রম নয়, তিনটে জোনে ভাগ করে চলছে নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা। দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই বর্তমানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা, শিক্ষাখাতও এর ব্যতিক্রম নয়। কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে।
এ অবস্থায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সবকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার তাগিদ দিয়েছেন। যদিও তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি।
সংকটকালীন এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম নিয়ে ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় নিজেদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্রনেতারা।
অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে কথা বলেন যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ-সম্পাদক সোহেল রানা। তিনি বলেন, সংকটকালীন এই সময়ে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। গ্রামাঞ্চলে নেটওয়ার্ক সমস্যা ও অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের পক্ষে অনলাইনে সরাসরি ক্লাসে সবসময় উপস্থিত থাকা সম্ভব না হলেও শিক্ষকেরা যদি তাদের ক্লাসসমূহ জুম বা অন্য অ্যাপস ব্যবহার করে ক্লাস রেকর্ডিং করে দেন তাহলেই শিক্ষার্থীরা সুবিধা পাবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সদিচ্ছার প্রয়োজন আছে। করোনা'র প্রাদুর্ভাব কতদিন থাকবে সে বিষয়ে যেহেতু কোনও নিশ্চয়তা নেই, সেহেতু শিক্ষার্থীদের এই অপূরনীয় ক্ষতি সামাল দিতে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব।
যবিপ্রবি শহীদ মসিয়ূর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শান্ত দে বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সেশনজটে পড়ে যেতে হবে। যশোর বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল শহর এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দীর্ঘ এই সেশনজট এড়াতে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিত। অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনাতে শুরুর দিকে কিছুটা সমস্যা দেখা দেবে। তার মূল কারণ সবার ল্যাপটপ, স্মার্টফোন না থাকা ও গ্রামাঞ্চলের নেটওয়ার্ক সমস্যা। তবে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম একবার শুরু করা গেলে এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তিনি অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে থেকে আরও বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে উত্তরণের জন্য নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন এখনও বের হয়নি। এমন অবস্থা কতদিন থাকবে সেটা অনিশ্চিত। এজন্য সামগ্রিক কিছু সমস্যা থেকে গেলেও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সেশনজট থেকে মুক্তি পেতে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।
এদিকে, অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রমের অসুবিধাসমূহ তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফিকুর রহমান অয়ন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঠিক তার উল্টো। এখানে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানই বেশি, যাদের অধিকাংশেরই ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় স্মার্টফোন নেই। আবার ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার সামর্থ থাকলেও কেবল শহরাঞ্চলে ব্রড ব্যান্ড সুবিধা ও ফোর-জি কভারেজ থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সে সুবিধা অনেকটাই কম। সেক্ষেত্রে সবার জন্য অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রমটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় নেট প্যাকেজ কিনতে বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেটা শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি স্বরূপ। এজন্য অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম না চালিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হলে সামনাসামনি ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়াটাই ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক মো. ইলিয়াছ হোসেন অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রমের পক্ষে থেকে বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কতদিন পর্যন্ত থাকবে তার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সেক্ষেত্রে যদি অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু হয়, তাহলে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে।
অসচ্ছল পরিবারের সন্তান ও গ্রামাঞ্চলে নেট স্পিড অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও এগুলো অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে তবুও শিক্ষার্থীদের যেনো সেশনজটে না পড়তে হয় বা পুরো বছরটাই যেন গ্যাপ না যায়, সেজন্য অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।
ফিশারীজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকরামুল কবির বলেন, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ গ্রামের মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করেন এবং পরিবারকে সাহায্য করেন। আবার করোনা মহামারিতে অনেক পরিবারের অসহায়ভাবে জীবন জীবিকা পরিচালনা প্রতীয়মান হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে আবার অনলাইনে ক্লাসটা অনেকের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো। মনে রাখতে হবে, আমাদের সবার স্মার্ট ফোন ও ল্যাপটপ নেই, এমনকি সারা দেশে ইন্টারনেট গতি ও সুবিধা সমান না। আমরা চাই, সকলে এক সাথে শিক্ষাগ্রহণ করতে কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এতে আমি মনে করি, সবাই সমান শিক্ষা পাবে না।
ইকরামুল কবির বলেন, আমি মনে করি, যদি সবার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন এবং বিনামূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়াটা যুক্তিযুক্ত হবে, না হলে এই কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে না। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ছাত্রছাত্রীর পড়াশুনার বিষয়ে আগে যেভাবে সাহায্য করে এসেছেন, এবারও তিনি সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
এনএস/
আরও পড়ুন