ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্প চায় হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

হাবিপ্রবি সংবাদদাতা 

প্রকাশিত : ১৬:৪২, ৪ জুলাই ২০২০

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। অনলাইন ডিভাইস ও ইন্টারনেটের প্রতিবন্ধকতায় অনেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। এই সময়ে সরকারের ‘ওয়ান ল্যাপটপ ওয়ান স্টুডেন্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা পেলে সবাই অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার জানান, ‘ইতোমধ্যে অনলাইন ক্লাসের ওপর শিক্ষকদের নিয়ে একটা প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বেশ কিছু বিভাগ অনলাইনে ক্লাসও শুরু করেছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের হাতে হয়তো ছোট মোবাইল ফোন রয়েছে বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই। যে কারণে শতভাগ উপস্থিতি এবং সঠিকভাবে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যদি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা সরকার ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্প কোনভাবে শুরু করতে পারে তাহলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রাখা যাবে বলে আমি মনে করি।’

অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অঞ্জু রানী ঘোষ জানান, ‘অনলাইন ক্লাসের জন্য যা প্রয়োজন তার পর্যাপ্ত সুবিধা আমাদের আছে বলে মনে হয় না। অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি যে টেকনিক্যাল জ্ঞান দরকার তার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে ইন্টারনেট ও ডিভাইস সুবিধা পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সরকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ ’ প্রকল্প চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে মনে করছেন মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা। তিনি জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং গ্রাম থেকে উঠে আসা। সে কারণে অনেকের ভালো স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট খরচের ব্যয় বহনের সামর্থ্য নেই। অন্যদিকে, ইন্টারনেট খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ জানান, ‘অনলাইন ক্লাসের ধারণা আমার কাছে নতুন, তবে আমার সক্ষমতা আছে ক্লাস করবার মতো। আমি চাই সবাই মিলে অনলাইন ক্লাস করতে, যাদের অসুবিধা তাদের প্রশাসন সহযোগিতা করতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে একটা দাবি থাকবে যেকোন উপায়ে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্প চালু করার জন্য। শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ। শিক্ষার্থীর হাতে একটি ল্যাপটপ থাকলে তারা বিভিন্ন স্কিল শিখে নিজেকে ডেভলপ্ট করতে পারবে। শুধু এখন না পরবর্তীতেও যা তাদের কাজে আসবে।’

অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট প্রাপ্তি সহজলভ্য করে দেয়ার আহ্বান জানান কৃষি অনুষদের ছাত্রী সিরাজুম মুনিরা মোহনা। তিনি বলেন, ‘অনলাইন ক্লাস করার জন্য যা প্রয়োজন তার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। আমি যে গ্রামে থাকি সেখানে ইন্টারনেটের স্পিড খুবই দুর্বল। তাই অনলাইন ক্লাস করাটা আমার জন্য খুব দুষ্কর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে সকল শিক্ষার্থীকে যেন ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং ইন্টারনেট প্রাপ্তি সহজলভ্য করে দেয়া হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো: ফজলুল হক (মুক্তিযোদ্ধা) বলেন, ‘করোনার কারণে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সীমিত পরিসরে শুধুমাত্র অফিস চালছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন। বিদেশি কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কারো হলে থাকার সুযোগ নেই এ মুহূর্তে। করোনায় এই লম্বা ছুটিতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা জটে পড়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সেই জট কাটিয়ে উঠতে আমরা অনলাইনে কিছুটা শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সকল শিক্ষার্থীকে হয়তো অনলাইন ক্লাসে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের হয়তো ডিভাইস নেই কিংবা ইন্টারনেট সমস্যার মধ্যে আছে সেটা একটা কারণ হতে পারে। এই মুহূর্তে সকল শিক্ষার্থীকেও ইন্টারনেট বা ডিভাইস সুবিধার মধ্যে নিয়ে আসার সুযোগ আমাদের নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন  অথবা সরকার যদি চায় তাহলে আমরা সেটি করতে পারবো।’

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে ঘরে বসেই শিক্ষাগ্রহণের সুবিধা করতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ কর্মসূচি এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট নিয়ে যেতে ইডিসি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। 

এআই//আরকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি