কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নোবিপ্রবি কাওছারের সফলতা
প্রকাশিত : ২৩:৫২, ২৭ জুলাই ২০২০
ছোট বেলা থেকে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর বারবার এই স্বপ্নের পরিবর্তন আসে। কখনো লেখক হওয়ার, কখনো ওয়েব ডেভেলপার, আবার কখনো এন্ড্রয়েড ডেভেলপার। ভালো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় আলাদা ভালো লাগা কাজ করলেও এ নিয়ে তেমন কিছু করা হয়ে ওঠেনি। একসময় উদ্ভাবনের নেশা দারুণভাবে গ্রাস করে আমাকে। অংশ নিতাম অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে। এভাবেই তার শুরুটা বলেন কাওছার।
উপকূলীয় অক্সফোর্ডখ্যাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের পঞ্চম আবর্তনের শিক্ষার্থী আহমেদ কাওছার। গত বছর শেষ করেন স্নাতকের পাঠ। স্কুল জীবন থেকেই খুঁজে বেড়াতেন উদ্ভাবনের সুযোগ। আর সেই সুযোগ আসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। নামের পাশে যোগ করেন বেশ কয়েকটি অর্জন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এই পর্যন্ত মোট ছয়টি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেন আহমেদ কাওছার। কম্পিউটার ভিশনের ওপর শ্রেষ্ঠ গবেষণা অ্যাওয়ার্ড দিয়ে পথ চলা শুরু করেন কাওছার। কম্পিউটার ভিশন এবং অটোমেটেড প্রসেসের ওপর গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেটি ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারের কাজ করবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদ আয়োজিত আইইই সম্মেলনে এই অ্যাওয়ার্ডটি অর্জন করেন। এর পর তিনি বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ টুল কিট ডেভেলপ করেন, যা দ্বারা খুব সহজে বাংলা ভাষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব কাজ করা যাবে। এ ডিভাইস বাংলা বুঝবে। রোবট বাংলায় কথা বলবে। এটি দিয়ে রবি আর ডেঞ্জার ২.০-তে বিজয়ী এওয়ার্ড পান।
ভারতের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে আউটস্ট্যান্ডিং রিসার্চের জন্য বেস্ট রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক ও অপটিমিজমথের ওপর নতুন অ্যালগরিদম (গাণিতিক পরিভাষা) নিয়ে করা রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করেন। এরপর তিনি এবং তার টিম বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড সংলাপ নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলা চ্যাটবট অ্যাওয়ার্ড পান। তার এই চ্যাটবটটি বাংলায় কথা বলবে, বুঝবে এবং গান শোনাবে। এ ছাড়া কম্পিটিশন অ্যানালাইসিস করার জন্য কম্পিটেটিভ অ্যালগরিদম আবিস্কার করেন, যেটি দিয়ে বিজনেস বা ইকোনমিক্সের কম্পিটিশন অ্যানালাইসিস করা যাবে।
স্পিজনার অ্যান্ড স্কোপাসের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্সে বেস্ট রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ।তার গবেষণাটি ছিল মেশিন লার্নিং অ্যান্ড ডিপ লার্নিং ব্যবহার করে একজন গর্ভবতী নারীর ডেলিভারি মোড প্রিডেকশন করা। একজন ডেলিভারি রোগীকে কি সিজার করা লাগবে নাকি নরমাল ডেলিভারিতে হবে সেটি এলগরিদম বলে দিবে।
সাম্প্রতিক ইম্পেক্ট লার্নিং নামে নতুন একটি গানিতিক সুত্র বা এলগিরদম ডেভালোপ করেছেন। কাওছার জানান, তার এই আবিষ্কার দিয়ে মেশিং লার্নিং, ডেটা সায়েন্স , আর্টিফিশিয়াল ইন্টিল্যাজেন্স , পরিসংখ্যান কিংবা মেথমেটিকস এর লিনিয়ার সেপারেশনের রিগ্রেশন ও ক্লাসিফিকেশন এর সমস্যা সমাধান করা যাবে। সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কম্পিউটার এন্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট ২০২০ এর ভার্সুয়াল কনফারেন্স শেষে তাকে শ্রেষ্ঠ গবেষণা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
এ পর্যন্ত কাওছার ২৪টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। স্নাতক শেষ করে আমেরিকা ভিত্তিক এনকেসফট এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিল্যাজেন্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি 'হিসাব' এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিল্যাজেন্স সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
কাওছার বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা অনেক কঠিন কাজ সহজ করে ফেলা যায়। আমি এটি নিয়ে কাজ করতে চাই। এসব গবেষণার মাধ্যমে নিজের দেশ ও বিশ্বকে প্রযুক্তিতে আরও এগিয়ে নিতে কাজ করে যাব। প্রথমে দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা থেকেই বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ টুল কিট ডেভেলপ করি।
আরকে//
আরও পড়ুন