ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনায় নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মানবিক যত উদ্যোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:৪০, ৯ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ০০:৪৩, ৯ আগস্ট ২০২০

করোনায় থমকে গেছে পুরো পৃথিবী। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনার এই মহামারিতে দেশ এবং জাতির প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জনসচেতনতা থেকে শুরু করে অসচ্ছল মানুষদের পাঁশে দাঁড়ানো, করোনা চিকিৎসা থেকে জাতীয় উদ্ভাবনেও অবদান রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। করোনা মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত নোবিপ্রবির সাফল্য, কৃতিত্ব ও ভূমিকা তুলে ধরা হলো।

১. উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক করোনা শনাক্তে রেপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবক টিমের অন্যতম সদস্য ছিলেন নোবিপ্রবির অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লাইড কেমেস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে এক গবেষণায় অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ও ড. ফিরোজ আহমেদ গোল্ড ন্যানো পার্টিকেল করোনা শনাক্তকরণের কিট তৈরি করতে সক্ষম হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের যন্ত্রাপাতি এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করেই তারা গোল্ড ন্যানো পার্টিকেল তৈরি করেন। এ কাজে তাদের সহায়তা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লাইড কেমেস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইদুল ইসলাম এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আমিনুল ইসলাম।

করোনা আক্রান্তদের সেবায়  ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষর্থী কাউছার আহমেদ ডা.আপা নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেন। যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় কথা বলে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিবে। এছাড়াও করোনা আল্যার্ট নামের আরেকটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেন ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ড. মুহাম্মদ শাহানুল ইসলাম যা করোনা বিষয়ক সব তথ্য সহজে জানান দিবে।

২. করোনা শনাক্তকরণ কেন্দ্র
৭ মে বৃহত্তর নোয়াখালীতে করোনা শনাক্তের জন্য নোবিপ্রবিতে করোনা পরীক্ষার ল্যাব উদ্বোধন করা হয় এবং ১১ মে থেকে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়। একাডেমিক ভবনের ৫ম তলায় অনুজীববিজ্ঞান বিভাগে এই ল্যাব স্থাপন করা হয়। ল্যাবটিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। এছাড়া ল্যাবটিতে বিনা পারিশ্রমিকে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।  উল্লেখ্য, এরপূর্বে ফার্মেসি বিভাগের পিসিআর মেশিনটি নোয়াখালী আব্দুল মালেক মেডিকেল কলেজকে করোনা শনাক্তে হস্তান্তর করা হয়।

৩. স্বাস্থ্যসেবায় নোবিপ্রবি
শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি টেলি সাস্থ্যসেবা চালু করেছে নোবিপ্রবি প্রশাসন। নোবিপ্রবি মেডিকেল সেন্টার থেকে এই সেবা দেওয়া । এর ফলে শিক্ষার্থীরা ফোন কলের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারে। এছাড়াও নোবিপ্রবির সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা ,কর্মচারীদের জন্য ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হয়। এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাব থেকে তৈরি ২ হাজার হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরি করে স্থানীয় জনগণের মাঝে বিতরণ করেন নোবিপ্রবি প্রশাসন।

৪. অনলাইন শিক্ষার প্রসার ও গবেষণা কার্যক্রম
৩০ জুন এক নোটিশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পরে সেলক্ষ্যে সকল প্রকার অনলাইন ক্লাস ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানায় নোবিপ্রবি প্রশাসন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোর্সেরা অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্মে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ফ্রিতে সকল প্রকার কোর্স করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

৫. মানবিক নোবিপ্রবি
দেশের এ ক্রান্তি লগ্নে সমাজের অসচ্ছল,শ্রমজীবী,সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ায় পুরো নোবিপ্রবি পরিবার। নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি তাঁদের এক দিনের বেতনের কিছু অংশ প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলে সহযোগী করেন বাকিগুলো নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন। এছাড়া নোবিপ্রবি অফিসার্স এসোসিয়েশন তাঁদের বেতনের একদিনের সমপরিমান অর্থ সমাজের অসচ্ছল মানুষদের ত্রান সামগ্রী প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা দেন। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নোবিপ্রবির ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফকে বাচাঁতে দেড় লক্ষ টাকা সহযোগিতা করেছে ( দুটো কিডনিই বিকল হয়ে যায়)  এবং অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়াঁন । 

এছাড়া দেশের এমন দুঃসময়ে নোবিপ্রবির বিভিন্ন সংগঠনগুলো একইসাথে সমাজ এবং নোবিপ্রবিয়ানদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ,নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, নোবিপ্রবি বিজনেস ক্লাব,রয়েল ইকোনোমিকস ক্লাব,চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন,নোবিপ্রবিলিওক্লাব,কেমিফিলিক, নোবিপ্রবি ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সমাজের অসহায় মানুষদের সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শুরু থেকেই জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করেছে। 

এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব সংগঠনসমূহ শিক্ষার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। "করোনা মোকাবেলায় নোবিপ্রবিয়ানদের পাশে নোবিপ্রবিয়ান" নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে নোবিপ্রবি শিক্ষক এবং প্রাক্তন ও বর্তমান সচ্ছল শিক্ষার্থীদের থেকে  প্রায় ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তনভীর মুরাদ বিভিন্ন প্রকার করোনা চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সামগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ল্যাব কর্মীদের জন্য প্রেরণ করেন।

মেস ভাড়া সমস্যা যেসব শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া দিতে পারছেনা তাদের জন্য নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষকদের এক দিন বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। এছাড়া নোবিপ্রবি প্রশাসন নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সাথে মেস ভাড়া সমস্যা সমাধানে অালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। জেলা প্রশাসক ইতিমধ্যে আশ্বস্ত করেছেন যে শিক্ষার্থী ও মেস মালিক উভয়ের সাথে সমন্বয় করে তিনি যত শিগগিরই সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

নোবিপ্রবি পরিবারের এমন সফলতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলকে মুগ্ধ। ভবিষ্যতেও নোবিপ্রবি পরিবার শিক্ষা,গবেষণা এবং দেশ ও জাতীয় উন্নয়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সবাই আশাবাদী।
কেআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি