ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিতে পারেন রাশিয়া

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ১২:২৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৬:০৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি’র একটি ভবন- সংগৃহীত

মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি’র একটি ভবন- সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় যেতে চাই। শিক্ষায় উন্নত বলতে গবেষণা, চর্চা, পদ্ধতিগত দিক থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকা। বিশ্বের র‌্যাকিংয়ে এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কে না পড়তে চায়? একই সঙ্গে সবাই চায় একটি ভাল জীবনব্যবস্থা। বিশ্ব র‌্যাকিংয়ে এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে উন্নত দেশগুলো যে কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিককে অবারিত সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও উচ্চশিক্ষার জন্য পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গবেষণা সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে চলেছেন। এগিয়ে থাকা অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশিদের অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে ডিগ্রি অর্জন তুলনামূলক খরচ কম ও সহজলভ্য। 

বিশ্ব পরাশক্তিধর দেশসমূহের মাঝে একটি রাশিয়া। বিশ্বরাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা বিজ্ঞান অথবা সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে রাশিয়ার রয়েছে বিশেষ অবদান। আর এই রাশিয়াতেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন কম খরচে উচ্চশিক্ষা নেওয়া এবং স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে ডিগ্রি অর্জন দিন দিন বেশ কঠিন ও ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে এখন অনেকটা রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব পথ। ফলে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীরাই উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য রাশিয়াকেই বেছে নিচ্ছেন। 

উচ্চশিক্ষা নিয়ে আরও পড়তে পারেন-

উচ্চশিক্ষার জন্য বেলজিয়াম যেভাবে যাবেন

ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা

পিএইচডি’র জন্য বৃত্তি দিচ্ছে সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়

বৃত্তি নিয়ে কানাডায় উচ্চশিক্ষা

অনেকক্ষেত্রে রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভ করতে আইইএলটিএস বা টোফেল দরকার হয় না। বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী স্বল্প খরচে বিশ্বস্বীকৃত শিক্ষা লাভ করতে চান, তারা নিশ্চিন্তে রাশিয়াকে বেছে নিতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাশিয়া অনেক এগিয়ে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার দূরত্ব এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের দেশের মানুষ রাশিয়ার বিষয়ে অনেক কম আগ্রহী। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) মধ্যকার মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার্থে রাশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। িবাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নিতে রাশিয়ায় যেতে পারেন। 

সেন্ট পিটার্সবার্গে স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ হিউম্যানিটিস’র একটি ভবন- সংগৃহীত

রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য শাখার সব বিষয়ে পড়া সম্ভব। রাশিয়ার একাডেমিক শিক্ষাব্যবস্থা সাধারণত ইউনিভার্সিটি, একাডেমি, ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, টেকনিক্যাল কলেজ ও স্পেশালাইজড ইনস্টিটিউশন ইত্যাদি স্তরে দেওয়া হয়ে থাকে। রাশিয়ায় ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ ৪ বছর, মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ ২ বছর, স্পেশালাইজড ডিপ্লোমার মেয়াদ ৫/৬ বছর। এসব কোর্স শেষ করা শিক্ষার্থীরা রাশিয়ায় উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ পান। রাশিয়ার সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আপনি ১ বা ২ বছরের মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ পাবেন। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সব শিক্ষার আগেই এক বছরের বিশেষ রাশিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্স গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।

রাশিয়ান ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায়। ইংরেজি মাধ্যমের জন্য IELTS ৬.৫ পেতে হবে বা সমমানের TOFEL। তবে রাশিয়ান ভাষায় পড়াশুনা করাই বেশ উত্তম কেননা রাশিয়ারে সর্বত্র রাশিয়ান ভাষা বিদ্যমান। রাশিয়ানরা সাধারণত কোনভাবেই ইংরেজি বলতে চান না। 

সাইবেরিয়ান স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র একটি ভবন- সংগৃহীত

রাশিয়ার শিক্ষাবর্ষ দুই সেমিস্টারে বিভক্ত, প্রথমটি সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি ফেব্রুয়ারিতে। সেমিস্টার বিরতিতে রয়েছে ছুটি। জানুয়ারিতে দুই সপ্তাহ ও জুলাই-আগস্টে ছয় সপ্তাহ। এ সময় শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগও রয়েছে। এখানে পড়াশোনার খরচ বিজ্ঞান বিভাগের (স্নাতক) জন্য টিউশন ফি আড়াই হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার ডলার, কলা বিভাগের (স্নাতক) জন্য দুই হাজার ৮০০ থেকে আট হাজার ডলার এবং বাণিজ্য বিভাগের (স্নাতক) জন্য চার হাজার থেকে ছয় হাজার ২০০ ডলার। রাজধানী মস্কোর বাইরে টিউশন ফি আরও কম। নিজ খরচে রাশিয়ার খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য গড় নম্বর থাকতে হবে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে হোস্টেল-সুবিধা, যার জন্য ব্যয় হবে বছরে ৪৫০ থেকে আড়াই হাজার ডলার। ছাত্র অবস্থায় গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে অনুমতি ছাড়া চাকরি করতে পারবেন যদি আপনি নিজেই তার ব্যবস্থা করতে পারেন। আর তাছাড়া বছরের বাকি সময়  কাজ করতে চাইলে আপনাকে ফেডারেল মাইগ্রেশন থেকে অনুমতি নিতে হবে সেটি বড়ই কষ্টসার্ধ ব্যাপার। 

টিউশন ফি গ্রহণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক উদার। উদার বলতে আপনি চাইলে রাশিয়ায় গিয়েও এ ফি পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া বড় কথা হলো অন্যান্য দেশে উচ্চশিক্ষার আবেদনের যেমন অন্যতম হলো ব্যাংকের হিসাবে নির্দিষ্ট পরিমানের টাকা দেখাতে হয়, রাশিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি লাগবে না। কোন প্রকার ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হয় না। ব্লক অ্যাকাউন্ট বা অন্য কিছু প্রয়োজন নেই। বছরে চার ধাপে ফি দেওয়ার সুযোগ আছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাত খরচ বাবদ কিছু বৃত্তি প্রদান করা হয়। এতে পুরো লেখাপড়ার খরচ বহন করা না গেলেও থাকা ও খাওয়ার খরচ অনেকটাই চালিয়ে নেওয়া যায়। 

পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া’র ফটক- সংগৃহীত

দেশটিতে বিদেশী শিক্ষার্থীরা বেশ নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। মোদ্দা কথা হল, এখানে ইউরোপের চেয়ে নিরাপত্তা কোন অংশেই কম নয়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। তারা নিজ দেশের বাইরে গিয়ে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ে চিন্তা পড়বেন না। এখানে অনেক সম্মানও পাবেন তারা। 

রাশিয়া থেকে সফলভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করে সে দেশেই গ্রিন কার্ড পেতে পারেন এবং সেখানেই স্থায়ী হয়ে যেতে পারবেন। আপনার জন্য রয়েছে রাশিয়াতে লোভনীয় বেশ কিছু চাকরির সুযোগ। তাছাড়া রাশিয়া বিশ্বে বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য কিংবা রাজনীতিতে তাদের বিশেষ শক্তিশালী অবস্থায় থাকাতে আপনি রাশিয়ার যে কোনো শিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে বিশ্বের যে কোনো দেশে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে সফলভাবে আপনার ফলাফল যদি ভালো হয় তবে রাশিয়ান সরকার আপনাকে সে দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করবে। 

ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সবকিছু নিজে নিজে করা যায়। প্রথমে শিক্ষাবোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিগ্রি প্রত্যাশীকে তার সকল একাডেমিক সনদ ও নম্বরপত্র সত্যায়িত করতে হবে। তারপর তা অনুবাদ করতে হবে রাশিয়ান ভাষায়। অনুবাদ করা কপিগুলো রাশিয়ান দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হবে। পরবর্তী ধাপে আপনার পাসপোর্ট ও ইংরেজি জন্মসনদও রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। শেষ ধাপে সমস্ত কাগজপত্র ন্যূনতম চার সেট ফটোকপি করে রোটারি করতে হবে। এ ছাড়া মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন, যাতে আপনার এইচআইভি ও অন্যান্য জটিল কিছু রোগ ব্যাধি নেই প্রমাণের জন্য। এবার আপনার সমস্ত কাগজপত্র মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে।

কাজান স্টেট মেডিকেল ইনির্ভাসিটি- সংগৃহীত

এরপর আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করে পছন্দের বিষয় সম্পর্কে জেনে ইমেইল করবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের ডিনকে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন ডিন ও তার সহযোগী থাকেন। আপনি ইমেইলের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ইমেইল অ্যাড্রেস পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাডমিশন অপশন থেকে আন্তর্জাতিক বিভাগের ডিনের নাম, ফোন ও ইমেইল অ্যাড্রেস পেয়ে যাবেন। এখন ইমেইল করে নিজে নিজে সম্পন্ন করবেন ভর্তি প্রক্রিয়ার কাজটা। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার নামে একটি অফার লেটার প্রেরণ করবে। অফার লেটার পেতে ৪০-৬০ দিন সময় লাগতে পারে। অফার লেটার পাওয়ার পর রাশিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করবেন নিয়ম অনুসারে। 

রাশিয়ান ৮০০ ’র বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন কোর্স অফার করে। রাশিয়ার বেশির ভাগ ইউনিভার্সিটি পুরাতন ও এর মধ্যে বেশ কিছু বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটি রয়েছে। 

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়:

1.Lomonosov Moscow State University, 

2.Saint Petersburg  State University,

3. Novosibirsk State University,

4. Bauman Moscow State Technical University,

5. Moscow State Institute of International Relations,

6. Moscow Institute of Physics and Technology,

7. Peoples’ Friendship University of Russia,

8. National Research Nuclear University MEPhI,

9. Peter the Great St. Petersburg Polytechnic University,

10. National Research Tomsk State University

11. National Research University – Higher School of Economics

12. Federal State Autonomous Educational Institution of Higher Education "National Research Tomsk Polytechnic University

13. Kazan (Volga region) Federal University

14. Ural Federal University named after the first President of Russia B.N.Yeltsin

15. National Research Saratov State University 

রুশ সরকার প্রতিবছর বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে, যা বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব ঠিকানা ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে মার্চ মাসে জানানো হয়। রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রে রুশ ভাষা কোর্সে ভর্তি হয়েও রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রের মাধ্যমে বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে। এটা ঠিক যে, রাশিয়াতে খুব অল্প কিছু ইউনিভার্সিটি নিজস্ব স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। 

ঢাকার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রের মাধ্যমে রাশিয়ার যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে। ভর্তির বিষয়ে ফ্রি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় জানুয়ারি থেকে জুলাই প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে বিকেল চারটায় ঢাকার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রে।

প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট: 
(https://studyinrussia.ru/en/)
(https://future-in-russia.com)


এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি