আমরা কি আর ক্লাসে ফিরতে পারব?
প্রকাশিত : ১৩:৫৫, ১৪ নভেম্বর ২০২০
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। পারিবারিক হাজারো সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে একরাশ স্বপ্ন পূরণে তারা ছুটে চলে অবিরাম। এই ছুটে চলায় মেধার সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হাজারো শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নিজেকে একধাপ এগিয়ে ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে, ঘুমে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি সময়ই কাঁটে তাদের হিসেব কষার মধ্যদিয়ে।
ক্লাস, ক্লাস টেস্ট, এসাইনমেন্ট সাবমিট, প্রেজেন্টেশন। এরপর পরিবার এবং নিজের তিন বেলার আহার জোগাড়ে পরিশ্রান্ত এবং ক্লান্ত শরীর নিয়ে তারা ছুটে চলে টিউশনে। সেখান থেকে বাসায় ফিরে আবার একাডেমিক এবং চাকরির পড়াশোনা। এ যেন এক যান্ত্রিক মেশিন। সব কিছুর পরেও তারা দিন-রাত স্বপ্ন দেখে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের, তারা স্বপ্ন দেখে পরিবারের হাল ধরার। এইভাবে কেটে যায় তাদের শিক্ষা জীবন।
কিন্তু এই স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর জীবনে এখন স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে সেশনজটসহ নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে সম্মতি জানান। পরবর্তীতে ৩০ জুন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর বিভিন্ন বিভাগে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলতে শুরু করলেও গত ১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু থাকলেও গত দেড় মাস ধরে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি ১৪টি বিভাগের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ৯টি বিভাগের ইতিমধ্যে অনার্সের সকল একাডেমিক কার্যক্রম ও চূড়ান্ত ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বিভাগের মাস্টার্সের ক্লাসের ১ম সেমিস্টারও প্রায় শেষের পথে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বর্ষের শিক্ষার্থী হয়েও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যস্থাপনা বিভাগ, ইংরেজী বিভাগ, অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জীন প্রকৌশল এই ৫টি বিভাগের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি।
করোনা ভাইরাসের মধ্যে অনেক বিভাগ অনলাইনে ডিফেন্স, ভাইবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের চুড়ান্ত ফলাফল দিয়েছে। সেখানে এই ৫টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা হতাশা এবং অনিশ্চয়তা দিন পার করছে। এই বিষয়ে বিভাগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারো কি কোন জবাবদিহিতা নেই?
এ সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানেও না তারা কবে পরীক্ষায় বসতে পারবে, আর কবেই বা চুড়ান্ত ফলাফল হাতে পাবে। এদিকে ১ বছরের জুনিয়র হওয়ার পরও শিক্ষাবর্ষ ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ একই সেমিস্টারে অবস্থান করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ বর্ষের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা আটকা পড়ে আছে।
কোন কোন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল বাকি কোন কোন বিভাগের প্রজেক্ট, থিসিসের ডিফেন্স বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও চলমান এমন দ্বিমুখী সমস্যায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।
একদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্যদিকে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ। এ যেন মরার উপর খাড়ার গা। এই সমস্যার সমাধান কবে নাগাদ হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা শিক্ষার্থীদের কারোই সঠিক জানা নেই।
এদিকে পারিবারিক চাপ ও মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় কি করণীয় এর উত্তরও জানেন না অনেকেই। সকল শিক্ষার্থীদের একটাই প্রশ্ন আমরা কি আর ক্লাসে ফিরতে পারবো, নাকি এভাবেই থেমে যাবে আমাদের শিক্ষা জীবন!
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এআই//
আরও পড়ুন