সিলেটে করোনা ভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচন করলো শাবি
প্রকাশিত : ১৯:০২, ৫ জানুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ১৯:০৩, ৫ জানুয়ারি ২০২১
সিলেট অঞ্চলের করোনা ভাইরাসের জিন বিন্যাস (জিনোম সিকুয়েন্স) উন্মোচন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিন বিন্যাস থেকে ১০টি নমুনা নিয়ে এ ভাইরাসের মিউটেশনের গতি, প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল ও বৈচিত্র সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রেস ব্রিফিং এ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক জি.এম নূরনবী আজাদ জুুয়েল বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের মিউটেশনের গতি, প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল ও বৈচিত্র্য জানতে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে জিন বিন্যাস (জিনোম সিকুয়েন্স) উন্মোচন করা হয়েছে। উন্মেচিত জিন বিন্যাস থেকে ১০টি (সুনামগঞ্জ-৫টি ও হবিগঞ্জ-৫টি) নমুনার জিন বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেইজে (জিআইএসএআডি) জমা দেওয়া হয়, যা ৩১/১২/২০২০ ইং তারিখে প্রকাশিত হয়। যা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ধরণ জানতে ও ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির অধিকতর গবেষণায় কাজে আসবে।
তিনি আরও বলেন, উন্মোচিত জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করে ভাইরাসের জিনোম কাঠামোতে মোট ৭৯টি মিউটেশন পাওয়া যায়। প্রোটিন লেভেলে এ ৪৭টি মিউটেশন পাওয়া যায়, এর মধ্যে ৬টি মিউটেশন এর আগে পৃথিবীর কোন দেশে পাওয়া যায় নি। এছাড়া, ২৪টি অন্যান্য দেশে পাওয়া গেলেও তা বাংলাদেশের জন্য নতুন, ১৭টি মিউটেশন বাংলাদেশে ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। উক্ত নমুনার মধ্যে কোন ইউকে মিউটেন্ট (P681H) পাওয়া যায়নি তবে একই পজিশন ভিন্ন মিউটেশনে (P681R) পাওয়া যায়। জিনোম কাঠামোতে Spike M1233I মিউটেশনটি একেবারেই নতুন, যা আগে কোথাও পাওয়া যায় নি।
জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সাথে ইতালি, ইউকে, ইউএসএ, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পূর্বে পাওয়া করোনা ভাইরাসের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. মো. শামছুল হক প্রধান বলেন, ‘আমাদের গবেষনার অংশ হিসেবে আমরা এসব মিউটেশনসমূহ বের করতে সমর্থ হয়েছি। ভবিষ্যতে এই মিউটেশনসহ অন্যান্য পরিবর্তনগুলো গবেষণা করে বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি ও বৈচিত্র সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া সিলেট বিভাগের অন্য ২টি জেলার করোনা ভাইরাসের পরিপূর্ণ জীবনরহস্য উৎঘাটনের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলমান আছে, এর মাধ্যমে সমগ্র সিলেট বিভাগের ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি নির্নয় করা সম্ভব হবে।’
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের এ গবেষণায় আমরা গর্বিত। করোনা ভাইরাসে সংক্রমনের শুরু থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের মানুষের পাশে ছিল এবং আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে। করোনা সনাক্তকরণ কার্যক্রমের যাতে ব্যঘাত না হয় সেজন্য আরো একটি মেশিন ক্রয় করা হয়েছে এবং জিনোম সিকুয়েন্সের জন্য নতুন মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, নোবেল করোনা ভাইরাস নির্ণয় করার জন্য করোনাকালীন সময়ের প্রথম দিকেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে লাইফ সায়েন্স অনুষদের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয় ল্যাব স্থাপন করা হয়। এই ল্যাবে এখন পর্যন্ত ২৫জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি এই দলটি ভাইরাস নিয়ে শাবি গবেষণা কেন্দ্রের অর্থায়নে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার অংশ হিসেবে সিলেট অঞ্চলের করোনা ভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচন করতে সমর্থ হলেন তারা। যা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ধরন জানতে ও ভাইসের ভ্যাকসিন তৈরিসহ অধিকতর গবেষণায় কাজে আসবে।
এসি
আরও পড়ুন