রাবিতে শাখা খোলা নিয়ে দ্বন্দ্বে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই ব্যাংক!
প্রকাশিত : ১৩:১৩, ৯ জানুয়ারি ২০২১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে অগ্রণী ব্যাংক। জায়গা সংকট, কাউন্টার কম, কখনও সার্ভার সমস্যা, বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে ভোগান্তি-একমাত্র ব্যাংকে প্রতিদিনই এসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অগ্রণী ব্যাংকের এই শাখায় গ্রাহক অনুপাতে জায়গা অনেক কম হওয়ায় তারা সঠিক সেবা দিতে পারছে না। এ কারণে বহুদিন থেকেই ক্যাম্পাসে আরেকটি ব্যাংকের শাখা খোলার দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারেরও বেশি। রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৩শ’ শিক্ষক, ৪ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। অগ্রণী ব্যাংকের এই শাখাটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনেই স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু এখন পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনও সেখানে লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের একটি নতুন শাখা খোলার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু এ শাখা খোলা নিয়ে অগ্রণী ব্যাংক বিরোধিতা করেছে। এমনকি শাখা খোলার সিদ্ধান্ত বাতিলের সুপারিশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ শাসউল ইসলাম অর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আধা মাইলের মধ্যে কাজলা গেট এলাকায় মতিহার শাখা নামে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থাকা সত্ত্বেও তাদের আবেদনক্রমে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সোনালী ব্যাংককে একটি শাখা খোলার অনুমোদন দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সরকারি মালিকানাধীন দুটি ব্যাংকের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অশুভ প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। তাই নতুন শাখা খোলার সিদ্ধান্ত বাতিলের সুপারিশ করেন তিনি।
ক্যাম্পাসে সোনালী ব্যাংকের শাখা খোলার বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের এমন বিরোধিতা করায় বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম ফারুকী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম খান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
শিক্ষকরা বলছেন, ক্যাম্পাসে অগ্রণী ব্যাংকের সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাছাড়া পাসপোর্টের টাকা জমা, ট্রেজারি চালান, ভ্যাট ও ট্যাক্স চালান জমা এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কাজে তাদের সোনালী ব্যাংকের সাহেববাজার শাখায় যেতে হয়। যা বিড়ম্বনার ও সময়-ব্যয়সাপেক্ষ। আবার অগ্রণী ব্যাংকে এই সেবা পাওয়ার সুযোগও নেই। এসব বিবেচনায় রাবির শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে আরেকটি ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবির ফলে নতুন ব্যাংক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অনুমোদন পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিয়ম মেনে সমস্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সোনালী ব্যাংকের নতুন শাখা স্থাপনের বিষয়টি এগিয়ে গেছে। যখন সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে তখন তাদের (অগ্রণী ব্যাংকের) ‘শাখা বাতিলের সুপারিশ করে চিঠি প্রদান’ রাবি শিক্ষক সমিতি, সিন্ডিকেট ও রাবির সকল শিক্ষকের মতামতকে চরম অশ্রদ্ধা করার শামিল।
এদিকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামে গ্রুপে’ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিসারিজ বিভাগের শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘মাঝে-মাঝে অগ্রণী ব্যাংক রাবি শাখায় গেলে মনে হয় ভুলক্রমে অন্য এক স্থানে এসে পড়েছি! ৬০টিরও বেশি বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনের ৩৬ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী, ১ হাজার ২০০-এর মত শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাড়ে তিন হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল প্রয়োজনে ১টি মাত্র ব্যাংক! ব্যাংকটির ভিতর স্পেস এত কম যে পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে এসে ছাত্ররা দাঁড়াতেও পারে না!’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের ২য় তলায় উঠতে ছাত্রদের ঠেলে ঠেলে যেতে হয় আর ২য় তলায় উঠার সিড়ির কথা আর কি বলব ! ব্যাংকের ২-৪ জন স্টাফ ছাড়া সবাই ছাত্রদের সাথে কেমন আচরণ করেন তা ছাত্ররাই ভাল জানেন। আমি নিজেও পর্যবেক্ষণ করেছি যা সুখকর নয়!’
শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি রাবি কর্তৃপক্ষ রাবিতে সোনালী ব্যাংকের নতুন ১টি শাখা খোলার অনুমতি দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাইলে অনুমোদনও পেয়ে যায়! কিন্ত একচেটিয়া ব্যবসায় হাত পড়ায় বেহায়ার মতো বাধা হয়ে দাঁড়ায় অগ্রণী ব্যাংক! অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রাবিতে সোনালী ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার সরাসরি বিরোধিতা করে যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর!’
ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনে রাবি কর্তৃপক্ষ রাবিতে ১টি কেন ৩টি ব্যাংক খোলার অনুমতি দিতে পারেন! অগ্রণী ব্যাংকের এমন নির্লজ্জ দুঃসাহস দেখানোর সুযোগ রাবি কর্তৃপক্ষের দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না বলেও মনে করেন এই শিক্ষক।
অগ্রণী ব্যাংক অনধিকার চর্চা করছে বলে দাবি করে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘দুটো সরকারি ব্যাংক থাকা অযৌক্তিক বা অপ্রাসঙ্গিক কিছুনা। তবে যেহেতু অগ্রণী বহু সময় ধরে সার্ভিস (ভালো খারাপ বিবেচ্য নয়) দিয়ে আসছে সেহেতু তাদেরকে সরাসরি ল্যাং মারা কিছুটা দৃষ্টিকটু। এক্ষেত্রে সুষম বন্টন করে দুটি ব্যাংকের মধ্যে শিক্ষার্থী গ্রাহক সেবা চালু রাখা যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেরই শেয়ারবাজার -বিনিয়োগ খাতসহ অনেক সাইড বিজনেস আছে। তাদেরও ব্যাংকিং চাহিদা পূরণে একাধিক ব্যাংকের শাখা থাকা আবশ্যিক। অনেক গোপনীয় লেনদেন কিন্তু পিয়ন দিয়ে হয়না। ক্লাস করিয়ে আবার শহরে গিয়ে ব্যাংকে লেনদেনের জন্য সময় অপচয় তাদের জন্য কষ্টকর। সুতরাং, সার্বিক দিক বিবেচনায় অগ্রণী ব্যাংকের উচিত বাস্তবতা উপলব্ধি করে চুপ থাকা।’
এআই/এসএ/
আরও পড়ুন