ঢাকা, সোমবার   ০৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

চলতি আর ভারপ্রাপ্ততেই গবি উপাচার্যের পূর্ণ মেয়াদ শেষ

গবি সংবাদদাতা: 

প্রকাশিত : ১৮:৪৫, ১৪ মার্চ ২০২১

Ekushey Television Ltd.

উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির যোগ্যতা নিয়ে আপত্তি থাকায় ইউজিসি ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পূর্ণ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ না পেয়ে কখনো ভারপ্রাপ্ত, কখনো চলতি দায়িত্ব পদে বহাল থেকেই মেয়াদের পুরো চার বছর সম্পন্ন করেছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ডাঃ লায়লা পারভীন বানু। রবিবার (১৪ মার্চ) অফিস করা শেষে তার মেয়াদ শেষ হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ ডা. লায়লা পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। একই বছরে উপাচার্য হিসেবে ডা. লায়লা পারভীন চলতি দায়িত্ব গ্রহণ করলে ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ইউজিসি এক চিঠিতে তাঁকে ওই পদে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখন হাইকোর্টে রিট করে। ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩১ ধারা অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অধ্যাপক ডাঃ লায়লা পারভীন বানুকে নিয়োগে সহায়তা দানের নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। তবে ইউজিসির পুনরায় আপিলে তা আবারো আটকে যায়, যা এখনো চলমান রয়েছে।

উপাচার্যের বৈধতা সংক্রান্ত জটিলতায় পুরো চার কোনো সমাবর্তন হয়নি। ইউজিসির ওয়েবসাইটে উপচার্যের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষার্থীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, যা এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঠেলে দেয়। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বৈধ উপাচার্যের দাবিতে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে লাগাতার ৬৮ দিন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে আন্দোলন বন্ধ করলেও মেয়াদকালের শেষ দিনেও কোনো সমাধান না আসায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা, ভোগান্তি আর বৈধ উপাচার্য না থাকায় সমাবর্তনসহ আরও অনেক কিছু আটকে আছে বলে মন্তব্য করেন বৈধ উপাচার্যের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠা সংগঠন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোঃ রনি আহম্মেদ। তিনি বলেন, 'ম্যাম চলতি বা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বৈধতা না থাকায় শিক্ষার্থীরা মূল সনদ পায়নি, বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সমাবর্তন পায়নি।' তিনি আরও বলেন, 'উনার বৈধতার জন্য যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলো, তখন বৈধতা না নিয়ে তিনি ক্যাম্পাসে আসবেনা বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বৈধতা ছাড়াই আবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চেয়ারে বসে আছেন। আমরা মনে করি, আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত এখন তার মেয়াদ শেষকালে অবসর নেওয়া উচিত। তিনি সহযোগিতা করে একজন নতুন বৈধ ভিসি এনে দিলে তার কাছে শিক্ষার্থীরা কৃতজ্ঞ থাকবে।'

পূর্ণাঙ্গ উপাচার্যের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করে ডাঃ লায়লা পারভীন সম্পর্কে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম রলিফ বলেন, 'ভিসি হিসেবে ম্যাম অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বাঁধার মুখোমুখি হয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈধ উপাচার্যের দাবিতে টানা ৬৮ দিন আন্দোলন করলো। উনার পদত্যাগ চাইলো। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, ব্যক্তি হিসেবেও তার কোনো ঝামেলা নেই। তবে আমরা চাই একজন পূর্ণাঙ্গ ভিসি। উনি পূর্ণাঙ্গ ভিসি হিসেবে আসলে শিক্ষার্থীরা উনাকেও খুব ভালোভাবে গ্রহণ করবে।'

চলতি বা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বে ডাঃ লায়লা পারভীন বানুর মেয়াদকাল কেমন ছিল, জানতে চাইলে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিদায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) মোঃ জুয়েল রানা বলেন, 'ম্যাম মানুষ হিসেবে সৎ। ছলচাতুরি বুঝে না, করেও না। তবে ক্যাম্পাসের সব কিছুতেই তার ভূমিকা ছিল খুবই ক্ষীণ! তাই উনার মেয়াদকালে শিক্ষার্থীরা বৈধ উপাচার্যের দাবিতে আন্দোলন করলো। দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাস, প্রশাসনিক কাজসহ প্রায় সব কিছুই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি শিক্ষার্থীদের একটা সেমিস্টারের প্রায় অর্ধেক সময় গ্যাপ হয়ে গেল! এতে কিন্তু ক্ষতিটা শিক্ষার্থীদেরই হলো। আগে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে যে আর্থিক সহযোগিতা পেত, তার সবই এই সময়ে প্রায় বাতিল হয়ে গেছে।'

তবে মেয়াদ শেষের বিষয়টি মানতে নারাজ উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ডা: লায়লা পারভীন বানু। তিনি বলেন, 'ভিসি হিসেবে আমার চার বছর হলো, এটা কোথায় তোমরা পেয়েছো? আমাকে অ্যাপয়েন্ট করেছে ট্রাস্টি বোর্ড। ট্রাস্টি ছাড়া ভিসি আসতে পারেনা। আমার নিয়োগ কিভাবে হলো, মেয়াদ শেষ হলো কি না, এটা তারা বলবে।'

মেয়াদ শেষের পরও ডা: লায়লা পারভীন চলতি দায়িত্বে বহাল থাকবেন কি না, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কেননা আপনি যেটা বললেন (মেয়াদ শেষ), সে বিষয়ে আমি জানিনা।'

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি