ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কুড়িগ্রামের এক বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৪৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৫:৫৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

Ekushey Television Ltd.

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এর ফলে ওই বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। সচেতন মহলের দাবি দারিদ্র্যতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য এ উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার হু হু করে বেড়ে চলছে। 

সোমবার সকালে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা: মতিউর রহমান খন্দকার বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। 

বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ২ ছাত্রী, সপ্তম শ্রেণীর ১১, অষ্টম শ্রেণীর ১৭, নবম শ্রেণীর ২৮, দশম শ্রেণীর ১৪ জন। আর এই তালিকায় রয়েছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীর ১৩ জন। 

করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ হলেও এখন উপস্থিতি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ।

ওই প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুপুর, আশামনি, নাছিমা ও আতিকা খাতুনসহ অনেকেই জানান, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। অনেক দিন পর বিদ্যালয় খোলার আনন্দের চেয়ে তাদের মন খারাবই ছিল। 

একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমী আক্তার বলেন, অনেক পর স্কুল খুললো সব বান্ধবীর সঙ্গে মজা করবো, আনন্দ করবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। এসে দেখলাম আমাদের ২৮ জন বান্ধবী স্কুলে আর আসলো না। খুবই মন খারাপ হলো। পরে জানতে পারি আমার ২৮ বান্ধবীসহ স্কুলের ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি হবে।

বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যানচালক বাদশা মিয়া জানান, ‘বাহে আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা করি। জানেনতো গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভাল একনা আলাপ আসছে তাই মোর মেয়েটা বিয়ে দিছং বাহে।’

একই প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিয়ের শিকার নিলুফা ইয়াসমিনের বাবা সাইকেল মেকার বাবলু মিয়া জানান, ‘দেখতেছেন তো কোন রকম মানুষের সাইকেল ভাল করেই যা পাই তা দিয়েই কোন রকমেই চলে সংসার। দেশে করোনা আসিয়া আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগীতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তা একনা ভাল সমন্ধ পাওয়ায় আর দেড়ি করি নাই। সাথে সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। বাল্যবিয়ে দেওয়াটা আমরা ভুল করেছি।’

এ ব্যাপারে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা: মতিউর রহমান খন্দকার বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর উপস্থিতি কম থাকায় আমরা শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর শুরু করেছি। যেসব শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাদের বাড়িও যাচ্ছি। ওইসব শিক্ষার্থী যাতে স্কুলে আসে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের সচেতন করছি।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখি করার জন্য কাজ করছি, জানান প্রধান শিক্ষক। 

তিনি আরও জানান, করোনার আগে গত দেড় বছরে তার স্কুলের ২৫ থেকে ৩০ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। কিন্তু করোনাকালে খবর না পাওয়ায় গোপনে তার প্রতিষ্ঠানের ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খয়বর আলী বলেন, করোনার কারণে আমার ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে পাড়া-মহল্লায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মতবিনিময়সহ সচেতনমূলক প্রচার চালানো হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্যটি পেয়েছি। উপজেলার মোট ৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করে জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি শুনেছেন। বাল্যবিয়ে
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাছ শুরু করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিকে নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ গড়ে
তোলার আহ্বান জানান তিনি।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি