১৭ মাস পর মুখর রাবি ক্যাম্পাস
প্রকাশিত : ১৭:২২, ১৭ অক্টোবর ২০২১
করোনা সংক্রমণজনিত কারণে দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়া হয়েছে। এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটে শিক্ষার্থীদের গোলাপ ফুল, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ক্যান্ডি উপহার দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানান। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর হলে প্রবেশ করতে পেরে উচ্ছাস প্রকাশ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৭টি হল। এর মধ্যে ১১টি ছেলেদের ও ৬টি মেয়েদের। আগামী ২০ আগস্ট থেকে শুরু হবে সশরীরে ক্লাস।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য প্রফেসর সুলতান-উল-ইসলাম, রেজিস্ট্রার প্রফেসর আবদুস সালাম, হল প্রাধ্যক্ষ ড. রওশন জাহিদ, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর প্রমুখ।
জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ড. আজিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থানের জন্য অন্তত এক ডোজ টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক হলে ও বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে আইসোলেশনের রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীর কোভিড-১৯ লক্ষণ দেখা দিলে তার নমুনা সংগ্রহ এবং টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হলে বা ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন শিক্ষার্থীদের সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করি, শিক্ষার্থীরা এখন তাদের ক্লাসগুলো শুরু করতে পারবে। তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং ন্যূনতম এক ডোজ টিকা নেয়। হলে যেন শিক্ষার্থীরা মাস্ক পড়ে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখে। আমরা আশা করছি, করোনা পরিস্থিতি আর খারাপের দিকে যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, হলে অবস্থানের জন্য হল কর্তৃপক্ষ আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এ ছাড়া সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হয়েছে। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ হাজার ৬০০ টিকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এদিকে, সকাল ১০টার আগে থেকেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে হলে যেতে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নূর আলম বলেন, তাঁর বিভাগের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তাই তিনি দিনাজপুর থেকে এসে রাজশাহীতে মেসে উঠে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় বাড়িতে থেকে পড়াশোনা সেভাবে করা সম্ভব হয় না। আর আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেককে দেখছি নানা দিকে ঝুঁকে পড়তে। ফলে এখন আবার হলে এসে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে পারলে ভালো লাগবে।’
এ যেন আরেক নবীনবরণ
শহীদ শামসোজ্জোহা হলের মূল ফটকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পরে দেখা হওয়ায় কুশল বিনিময় করছে একে অপরের সঙ্গে। প্রায় ১৭ মাস পরে হল প্রাঙ্গণে তাদের পদচারণা। কাগজপত্র জমা দিয়ে চিরচেনা হলে প্রবেশ করছে শিক্ষার্থীরা।
প্রবেশের সময় সবার হাতে হাতে দেওয়া হচ্ছে একটি করে লাল গোলাপ। গোলাপ ছাড়াও দেওয়া হচ্ছে একটি করে চকলেট এবং একটি মাস্ক। এ যেন আরেক নবীনবরণ। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কথা। এমনভাবেই বরণ করে নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সতেরটি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়েছে। হলের বৈধ শিক্ষার্থীরা আবাসিকতার কার্ড এবং করোনা টিকার প্রমাণপত্রের দুটি ফটোকপি জমা দিয়ে হলে প্রবেশ করেছে।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ হাসান বিজয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, বেশ আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের হল কর্তৃপক্ষ বরণ করে নিয়েছে। দীর্ঘদিন পরে চিরচেনা হলে ফিরতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কানিজ রাজিয়া কথা বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলে ফিরতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। হলের পরিচিত আপুদের সাথে দীর্ঘদিন পরে দেখা হচ্ছে। সবমিলিয়ে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।
বেগম রোকেয়া হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই হলে প্রবেশ করছে। শিক্ষার্থীরাই হলের প্রাণ। তারা হলে ফেরাতে আমাদের নিজেরও ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীদের রুম দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় ভিতরে ময়লা জমে থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি হলের আয়াদের বলে রাখছি শিক্ষার্থীদের রুম পরিষ্কারে সহযোগিতা করতে। এছাড়া যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমরা সচেষ্ট আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহবায়ক ড. জুলকার নায়েন বলেন, সকাল থেকেই বেশ আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করেছে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি হলে আইসোলেশন রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জোহা হলেও তিন শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন রুম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য হল ক্যান্টিন চালু হয়েছে। হল খোলার দ্বিতীয় দিন থেকে ডাইনিং চালু হবে।
কেআই//
আরও পড়ুন