গৌরব-ঐতিহ্যে ১৮১ বছরে ঢাকা কলেজ
প্রকাশিত : ১০:০৭, ২০ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১০:১১, ২০ নভেম্বর ২০২১
দেশের সর্বপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঢাকা কলেজ। দেশের প্রথম আধুনিক ও সনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি ১৮১ বছরে পদার্পণ করল। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর পথচলা শুরু, এরপর থেকে গৌরব ও প্রাপ্তির দিক দিয়ে বারবার নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
দীর্ঘ পথচলায় দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সমাজনীতিক- সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে ঢাকা কলেজের গৌরব ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঢাকা কলেজের নাম।
শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ঢাকা কলেজ জন্ম দিয়েছে শত শত গুনী ও বুদ্ধিজীবীদের। ঢাকা কলেজ ছিল এই অঞ্চলের শিক্ষার কেন্দ্র বিন্দু। ঢাকা কলেজ প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
ঢাকা কলেজ মানে নতুন কিছুর সূচনা। যেখানে শিক্ষা ও নৈতিকতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সুদীর্ঘ ১৮০ বছর যাবৎ ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও হিন্দু কলেজের শিক্ষক জে. আয়ারল্যান্ডকে ঢাকা কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। তাকে প্রিন্সিপাল করে চালু করা হয় ঢাকা কলেজের পথচলা। এটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলার মানুষ পায় আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া।
১৯৫৫ সালে তার আপন গৃহের সন্ধান পায় ঢাকা কলেজ। স্থায়ী ঠিকানা হয় মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ঢাকা-১২০৫ এ। সে সময়ে ঢাকা কলেজের আয়তন ছিল ২৪ একর। তবে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের আমলে ঢাকা কলেজকে ৬ একর জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে ঢাকা কলেজের মোট জমির পরিমাণ ১৮ একর।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঢাকা কলেজ সব সময় অবদান রেখে আসছে। যে কোন আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা কলেজ যে অবদান রেখে আসছে তা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাত কলেজ কেন্দ্রিক সকল আন্দোলন ও দাবি আদায়ে ঢাকা কলেজ সব সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা কলেজে জমকালো আয়োজন ও আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যখনই দুর্যোগ আর অশান্তিতে আচ্ছন্ন করে আমাদের চারপাশ ঠিক তখনই ঢাকা কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ঝাপিয়ে পড়তেন। তাইতো ১৯৩৯-৪৫ সালের মহাযুদ্ধ, ১৯৪১ সালের দোল দাঙ্গা, ১৯৫২ সালে ‘রক্তে রাঙানো’ ভাষা আন্দোলনে, ১৯৫৩ সালের গোলযোগ, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন, ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা ছিল প্রতিশোধের খড়গহস্ত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজের ছাত্রদের ইস্পাত বাহুতে গর্জন করত ‘৭১-এর হাতিয়ার’।
ঢাকা কলেজকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রাজ্জাক ১৯৫৮ সালে এক রাজনৈতিক স্মৃতিচারণে লেখেন, ‘সামরিক শাসনের স্টিমরোলার থেকে কিভাবে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা যায় এ ব্যাপারে পথ বের করার জন্য কতদিন যে সন্ধ্যার পর ঢাকা কলেজের মাঠে বসে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে গোপনে শলাপরামর্শ করেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। সেদিন আমার সে বিদ্রোহী সত্তা পরবর্তীকালে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। বিদ্রোহের এ বীজ আমার মাঝে রোপিত হয়েছে ঢাকা কলেজেই।’
পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে এ কলেজে কাজ করছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী এবং সামাজিক সংগঠন। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা কলেজ আবৃত্তি সংসদ, ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, ঢাকা কলেজ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, মিউজিক স্কুল, সায়েন্স ক্লাবসহ প্রায় ৩০টি সংগঠন রয়েছে।
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা কলেজের ৮ জন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া এই ৮ বীরকে স্মরণে রাখতে মূল ভবনের প্রবেশদ্বারের বাম পাশে দেয়ালে পাথরখচিত স্মৃতিফলক রাখা আছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ আ ন ম নজীব উদ্দিন খান খুররম এর নামে ঢাকা কলেজের মূল অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে।
এসএ/
আরও পড়ুন