হাবিপ্রবিতে অনলাইন লার্নিংয়ের নবযাত্রা
প্রকাশিত : ১১:০২, ২২ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৬:৩৯, ২২ নভেম্বর ২০২১
করোনার সময়ে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত, তখন উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা হার্ভার্ডের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় CS-50 কোর্সটি করেছে একদম বিনামূল্যে। শুধু তাই নয় এমআইটি, স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্বখ্যাত ২শ’টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজারের বেশি কোর্স সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করার সুযোগ পেয়েছেন। আর এটি সম্ভব হয়েছে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: জুয়েল আহমেদের নিরলস প্রচেষ্টায়।
করোনাকালে প্রায় ১০ হাজার মতো শিক্ষার্থী ৪০ হাজারেরও বেশি অনলাইন কোর্সে ফ্রিতে ভর্তি হয়। এই সময়ে ৭০ হাজারের মত পাঠ শেষ করেছে, ৫০ হাজার ঘন্টারও বেশি লেখাপড়া করে। এই পুরো ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুয়েল আহমেদ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সুবিধা পৌঁছে দিতে সহকারি অধ্যাপক জুয়েল আহমেদ Bangladesh Open Learning Society -নামে ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গড়ে তুলেন ফেসবুক গ্রুপ ভিত্তিক একটি লার্নিং কমিউনিটি। এই উন্মুক্ত শিক্ষার সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কারণে তারা দক্ষতা বৃদ্ধিতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারছে নানাভাবে।
তাঁর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারি অধ্যাপক জুয়েল আহমেদ বলেন, “চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণা আমরা কেবল বুঝতে শুরু করেছি এবং এর মধ্যেই অনেক শিল্পোন্নত দেশে চলছে পঞ্চম শিল্পবিপ্লব নিয়ে প্রস্তুতি। প্রযুক্তির পরিবর্তনের দ্রুত গতির সাথে সাথে আমাদের কর্মবাজারসহ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক ব্যাপক পরিবর্তিত হচ্ছে। এগিয়ে থাকতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বশেষ দক্ষতাগুলো থাকতে হবে নখদর্পণে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাপী এই দক্ষতাগুলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য হার্ভার্ড, এমআইটি’র মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ ভালো কিছু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। আমি শুধু ওইগুলোর সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছি। আর উত্তরের জনপদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান ছড়ানোর বাতিঘর হলো হাবিপ্রবি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত বৈষম্য (ডিজিটাল ডিভাইড) কমানোর ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দারুণ কিছু করে দেখাতে পারবে।”
করোনার আগে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই অনলাইন কোর্সের ব্যাপারটা এতো পরিচিত ছিলো না, বলেন তিনি।
এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অনলাইনে উন্মুক্ত শিক্ষায় কিভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রথমে ব্যাপারটা ছিলো খুব কঠিন। অনলাইনে কোর্স কি? আর এটি কিভাবে করা যায় এবং এই কোর্সগুলো কি কাজে লাগতে পারে এটি বুঝাতেই অনেক সময় লেগেছে। করোনার সময়টাতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আমাকে অনলাইনে থাকতে হয়েছে। ফেসবুক লাইভ, ওয়ার্কসপের মত নানা ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্মুক্ত শিক্ষার বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে বোঝাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন লার্নিং বিষয়েও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে হয়েছে।”
“এই পুরো কাজটি আমার পক্ষে একা করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না। আমি আমার সহকর্মীদের সহায়তা পেয়েছি এবং পাশাপাশি হাবিপ্রবির একঝাঁক শিক্ষার্থী পুরো ব্যাপারটিতে দারুণভাবে সহায়তা দিয়েছে। এমনও হয়েছে কোর্সে অন্তর্ভুক্তির শেষ তারিখে আমরা সারারাত জেগে অনলাইনে থেকে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছি। তবে এত কষ্টের পরেও আমি দারুণ খুশি। একটি সুযোগ পেলে যে আমাদের শিক্ষার্থীরা দারুণ কিছু করে দেখাতে পারে এই সময়ে বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি।”
অনলাইন কোর্স এবং উন্মুক্ত শিক্ষা নিয়ে তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আমাদের সামনে অবারিত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়তই শেখা; যেটাকে লাইফ লং লার্নিং বলা হয়ে থাকে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উন্মুক্ত শিক্ষার প্ল্যাটফর্মগুলোর বিকল্প নাই। আমার ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী; বিশেষত প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরকে এই সুযোগগুলোর সঙ্গে বেশি করে সম্পৃক্ত করা।”
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থী মাহবুব উল ইসলাম খান নিবিড় বলেন, “২০২০-এর শুরুতে একটি কোর্স চয়েজ করে আর করা হয়নি পেমেন্টের কারণে। তাই পরে অডিট করতে পারলেও পরীক্ষা দিতে পারতাম না। তারপর HSTU Coursera Campus এ যুক্ত হওয়ার পর হাবিপ্রবির মেম্বার হিসেবে প্রথম একটি কোর্স সম্পূর্ণ করি। যার উদ্যোক্তা ছিলেন জুয়েল স্যার। আমার মত হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে এই সুযোগ তৈরি করে দেয়ার কারিগর তিনি।”
উন্মুক্ত শিক্ষার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সুযোগ তৈরির পাশাপাশি এই লার্নিং কমিউনিটির সদস্যরা নিজেরাও পরিবেশ, ইতিহাস শেখার বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে সমন্বিত অধ্যায়নের কয়েকটি গ্রুপ পরিচালনা করছে। বর্তমানে তারা উচ্চশিক্ষা বিষয়ক লাইভ সিরিজ পরিচালনা করছে হাবিপ্রবি ও বাহিরের শিক্ষক এবং উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে অবস্থানরতদের নিয়ে।
এএইচ/
আরও পড়ুন