ঢাকা, বুধবার   ০৫ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

২.৬৮ সিজিপিএ নিয়েও জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষার গল্প

আব্দুর রহিম, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২২:৪৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Ekushey Television Ltd.

‘‘স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে! স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’’ মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।

স্বপ্ন সাধারণত দুই রকমের হয়। যার একটি হলো স্বাভাবিক স্বপ্ন, যা আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি। আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে যা হলো বড় হওয়ার স্বপ্ন, জীবনে কিছু করার স্বপ্ন। এ স্বপ্নই আমাদের জীবনকে পরিচালিত করে।

বাইবেলে সুন্দর কথা আছে– যে বিশ্বাস করে সে–ই বেঁচে থাকে। যে বিশ্বাস করে তার স্বপ্ন পূরণ হবে এবং তার জন্য কাজ করে সে-ই তার লক্ষ্যে পৌঁছায়। আমরা অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখি, এই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে চেষ্টা করতে হয়। পরিশ্রম করতে হয়। উইলিয়াম ল্যাংলয়েড বলেছেন– “যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সাফল্যও নেই।” সুতরাং স্বপ্নকে লক্ষ্যে রুপ দিতে কিছু জিনিস মেনে চলতে হয়। 

তেমনি এক স্বপ্নসারথি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-২০১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী পিযুস কুরি। যিনি ২.৬৮ থাকা সত্ত্বেও ডয়েচল্যান্ডে দেশ জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষায় পাড়ি দিয়ে এর অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

এতো কম সিজিপিএ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে উচ্চ শিক্ষায় জার্মানি পাড়ি দিলেন পিযুস কুরি জানালেন তার অব্যক্ত কথাগুলো - বাংলাদেশে আমার ভার্সিটির রুমমেট চারজনের মধ্যে তিনজনই প্রায় একবছর আগে চলে আসে জার্মানি। মনে মনে ভাবতে থাকি আমাকেও যেতে হবে স্বপ্নের দেশ জার্মানি। কিন্তু অনার্সের ফল একটু খারাপ থাকায় মনের ভেতর হাল্কা একটু শঙ্কাও থেকেই যায়। তবে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসও ছিল! আমি পারবোই! নিরাশ না হয়ে কাজ করে যেতে থাকি। জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে যেমন : ডাড, ইউনিএসিস্ট, ফিন্টিবা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণাও নিতে থাকি।

ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর চলে আসি ঢাকায়। আইএলটিএস এর প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য। আমার ভার্সিটির বড় ভাইদের সবার রেজাল্ট অনেক ভালো অপর দিকে আমার রেজাল্ট মাত্র ২.৬৮! কোনোরকমে পাস করা যাকে বলে আরকি! এমন অবস্থায় আমার একটাই রাস্তা আইএলটিএস, এখানে ভালো করতেই হবে। অনেক পরিশ্রম করলাম, মাঝে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল। তাই আইএলটিএস এর শিডিউল পিছিয়ে দেই। যাক অনেক পরিশ্রমের পর রেজাল্ট আসে ৬.০০ (এল-৬, আর-৬, ডব্লিউ-৬.৫, এস-৬)

আবার একটা হতাশা চলে আসে, কেউ কেউ আবার আইএলটিএস এর জন্য বলতে থাকে। আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যা আছে তা দিয়েই চেষ্টা করবো। যদি না হয় এক বছর বিরতি নিয়ে নতুন করে শুরু করবো। অনেক কঠিন কাজ ছিলো ইউনিভার্সিটি সার্চ করা। আমাকে জার্মানি থেকে কিছু আইডিয়া দিচ্ছিল ভাইয়ারা, অপরদিকে আরেকজন ভাই আমার সাথে রাত জেগে জেগে ইউনিভার্সিটি খুঁজতে থাকেন।

বেশ কয়েকটা ইউনিভার্সিটিতে মেইল করি। আমার পড়ার ইচ্ছা জানাই, রেজাল্টের কথা জানাই। সব জায়গা থেকে নেগেটিভ রিপ্লাই আসে। এভাবে একদিন হুট করে daad.de-তে প্রথম ইউনিভার্সিটি পেয়ে যাই। যেখানে ব্যাচেলরের (অনার্সের) রেজাল্টের রিকোয়ারমেন্ট ছিলো না। সাথে সাথে এপ্লাই করতে বসি। টানা ২ দিন পর সব ডকুমেন্টস আপলোড দিয়ে এপ্লাই শেষ করি। কেন জানি মনে হচ্ছিলো এখান থেকে অফার লেটার পাবো কিন্তু যাওয়া হবে না। টিউশন ফি ছিলো প্রতি সেমিস্টারে ১৫০০ ইউরো!

আমি এপ্রিলে এপ্লাই করি, আর রেজাল্ট আসে জুনের ২ তারিখে এবং অফার লেটার পাই (কিছুক্ষণ হাসলেন)। প্রথম অফার লেটার! এই ফাঁকে খুঁজতে খুঁজতে আরও দুটো ইউনিভার্সিটি পাই, সেগুলোতে এপ্লাই শেষে বাড়িতে ফিরে আসি মে মাসে। হাতের সবগুলো কাজ শেষ, এখন সব ভগবানের ইচ্ছা।

ইউনিএসিস্ট অনেক দেরি করে মেইল দেয়, ডকুমেন্টস ফরওয়ার্ডের। যাক সেটার ২ সপ্তাহ পরে কাসেল থেকে অফার লেটার পাই। এবার আমার গন্তব্য নিশ্চিত। আগের অফার লেটার পাওয়া ইউনিভার্সিটির জন্য একটু খারাপ লাগে। তবে সেখানে আমার যাওয়া অনিশ্চিত। কেউ কেউ বলেছে, আমার জার্মানি আসা হবে না এই রেজাল্ট দিয়ে! অবশেষে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় চলে আসি ব্রেড আর বিয়ারের দেশ ডয়েচল্যান্ডে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি