বাংলাবর্ষ তরুণ সমাজে লালন ও ধারণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
প্রকাশিত : ১৫:১৬, ১৪ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ১৫:১৮, ১৪ এপ্রিল ২০২২

"এসো হে বৈশাখ এসো এসো"- কবিগুরুর লেখা এই গানটির মতোই বাঙালির ডাকে সাড়া দিয়ে ধরণীতে বৈশাখ তার রূপ-রং ও সজীবতা নিয়ে হাজির হয়েছে। '১৪২৯' বঙ্গাব্দ যেন নতুন এক রং ও রূপ নিয়ে ধরা দিয়েছে বাঙালির হৃদয়ে। গত দু'বছরে অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে বছরের শুরুটা ঘরবন্দী কাটলেও বাঙালির জীবনে এবারের বৈশাখ যেন নতুন প্রেরণা উদ্দীপণার মন্ত্র হয়ে পূর্বের সকল গ্লানি মুছে দিতে এসেছে। বাঙালির ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতায় বাংলা বর্ষের এই দিনকে তরুণ সমাজে লালন ও ধারণ নিয়ে নানা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। লেখাটি তুলে ধরেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন সংবাদদাতা সাদিয়া তানজিলা -
পহেলা বৈশাখ আপন সাংস্কৃতিক চেতনা ও ঐতিহ্যের স্মারক।
আল মামুন সোহাগ
ফার্মেসি বিভাগ, ডিআইইউ।
বাংলা নববর্ষ উৎযাপন আজও ধর্ম এবং সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব শ্রেণির বাঙালির জাতীয় উৎসব। পহেলা বৈশাখ ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের দিন হিসেবে একেবারেই আমাদের মাটি আর মানুষ থেকে উৎসারিত। এটি আমাদের আপন সাংস্কৃতিক চেতনা ও ঐতিহ্যের স্মারক, আপন জাতিসত্তায় অনুপ্রাণিত হওয়ার উৎস, জাতীয় ঐক্যবোধে দীপ্ত হওয়ার উপলক্ষ, জাতির প্রতিচ্ছবি বাঙালির বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের প্রতিক পয়লা বৈশাখ। বাংলাদেশে এই দিনকে মানবতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে আয়োজিত করা হয়। এই উৎসব উদযাপনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও গত বছর থেকে করোনার অতিমারীর জন্য সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সারতে হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই। তরুণেরাই এখন এ উৎসবের প্রাণ। তরুণেরা এখন বিভিন্নভাবে এ উৎসবকে পুনরাবিস্কার করছেন। চৈত্র শেষ হতে না হতেই সব তরুণের মনে উৎসবের রঙ জমে। তারা এই উৎসবের রঙ ছড়ায় সবখানে, গান বাজায় প্রাণে প্রাণে। এ উৎসবের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষক সমাজ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পহেলা বৈশাখের সঠিক অর্থ শেখাতে হবে।
তামান্না সুলতানা
অর্থনীতি বিভাগ, ডিআইইউ।
একজন বাঙালীর কাছে বরাবরই পহেলা বৈশাখ প্রচন্ড আবেগের জায়গা। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালী জাতির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ।বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই মঙ্গল শোভাযাত্রা, বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় পালন ছাড়া বর্ষবরণের অনেক রীতিনীতি দিনকে দিন আধুনিক বাঙালীতে লোপ পাচ্ছে। আধুনিক পহেলা বৈশাখ বলতে বছরের বাকিগুলো দিন ইংরেজি সংস্কৃতি এবং পশ্চিমা সভ্যতা অনুসরণ করে বৈশাখের প্রথম দিন বাঙালী জামাকাপড় পরা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া, ছবি তোলা এবং সোশ্যাল-মিডিয়ায় আপলোড দেওয়া পর্যন্তই আমাদের বাঙালীয়ানার পরিচয়। নিয়ম করে বর্ষবরণ করা হলেও এতে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। এ যেন উদ্যম বৈশাখে সদ্য বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধের অভাব। আমরা ক্রমশই মন থেকে বাঙালীয়ানা হারিয়ে ফেলছি। শুধু বাংলা বর্ষবরণের দিন নয়, বছরের প্রতিটা দিনই আমরা বাঙালী এবং আমাদের কিছু নিজস্ব ঐতিহ্য আছে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে তবেই পহেলা বৈশাখের এই বর্ণাঢ্য আয়োজন স্বার্থক হবে। এবং একইসাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পহেলা বৈশাখের সঠিক অর্থ শেখাতে হবে, নয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলার গৌরবান্বিত ঐতিহ্য।
বাংলার শরৎচন্দ্র কিংবা রবীন্দ্রনাথের বইয়েই যেন বাঙালির সংস্কৃতি নিহিত।
অনন্যা ইসলাম
আইন বিভাগ, ডিআইইউ।
পহেলা বৈশাখ বলতেই চোখের সামনে ভাসে স্কুলের শোভাযাত্রা, লাইনে দাঁড়িয়ে পান্তা ভাত, ইলিশ ভাজা আর ভর্তা নেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন। নতুন সময়, নতুন দিন, নতুন মাস বাঙালি তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যময় খাবার মাছ ভাত দিয়ে শুরু করে। যাকে বলে মাছে ভাতে বাঙালি। তাছাড়াও পহেলা বৈশাখে পুরাতন সকল গ্লানি, হতাশা, ব্যর্থতা, দুঃখ সব কিছু পেছনে ফেলে নতুন করে আবার নতুম উদ্যোমে নতুন বছর শুরু করি। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও কোথাও যেন একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের বাংলা নিয়ে ধারণা প্রচন্ড কম। তারা বাংলার ইতিহাস জানতে নারাজ। তারা বাংলা কবিতা পড়ে না, সাহিত্য পড়ে না। বর্তমানে বিদেশী সংস্কৃতির প্রতিই তাদের আগ্রহ বেশি। তারা উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এর বই পড়াকে আধুনিক মনে করে, আর বাংলার শরৎচন্দ্র কিংবা রবীন্দ্রনাথের বইকে মনে করে সেকেলে। অথচ এখানেই আমাদের বাঙালির সংস্কৃতি নিহিত। অনেক তরুণ বাংলা তারিখ জানে না। আমাদের দেশে বাংলা তারিখ দেখার প্রচলন এক প্রকার উঠেই গিয়েছে বলা যায়। তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেন তার সংস্কৃতিকে ভুলে না গিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে সে চেষ্টা করতে হবে।
বাঙালি এই দিনটিকে খুব ভালোভাবে জানবে এবং স্মরণ করবে।
সুমন সরকার
পলিটিকাল সাইন্স, ডিআইইউ।
মহামারীর কারণে গত দু'বছর ধরে আমরা কোনো নববর্ষ উদযাপন করতে পারিনি। তাই এবারের উদযাপন করার আনন্দ যেন একটু বেশিই। এই দিনটিকে ঘিরে বাঙালির পরিকল্পনা কোনো কমতি নেই। তারুণ্যের মাঝে যেন নতুন এক সজীবতা বয়ে আনে পহেলা বৈশাখ। দিনটিকে ঘিরে বেশ কিছু পরিকল্পনা আমার নিজেরও রয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠা গোসল করে ঐতিহ্যবাহি বৈশাখী পোশাক পরা এবং পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ দিয়ে খাওয়া, বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘুরতে বের হওয়া। আমি মনে করি, বাঙালি এই দিনটিকে খুব ভালোভাবে জানবে এবং স্মরণ করবে। সেইসাথে বাঙালির এই ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
এনএস//
আরও পড়ুন