জাবির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত, স্বর্ণপদক পেলেন ১৬ শিক্ষার্থী
প্রকাশিত : ০৮:৫২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তনে ১৬ কৃতি শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ১৫ হাজার গ্র্যাজুয়েট এবং ৩ হাজার আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নূরুল আলম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
দুপুর সাড়ে তিনটায় চ্যান্সেলর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনের পূর্বে চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সমাবর্তন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।
এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। পরে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিন কর্তৃক গ্র্যাজুয়েটগণকে চ্যান্সেলর সমীপে উপস্থাপন এবং চ্যান্সেলর কর্তৃক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
এসময় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ১৬ শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
পদক প্রদান শেষে সমাবর্তন বক্তা বক্তব্য রাখেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো মনজুরুল হক। এরপর ক্রেস্ট বিনিময় এবং চ্যান্সেলরের ভাষণের মধ্য দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "তোমরাই দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ রাজনীতিবিদ হবে, কেউবা ব্যবসায়ী-শিল্পপতি হবে, আবার কেউবা আমলা হবে। মনে রাখবে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা একটি দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। এর ব্যাত্যয় দেশ ও জাতির জন্য বয়ে আনে চরম বিপদ।”
তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন। এখানে তাঁরা রাজনীতির অনুশীলন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেন। আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করার আহ্বান জানাই।”
সমাবর্তন বক্তা ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, “যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যত পরিবর্তন এসেছে, তার প্রায় সবগুলোর কারিগর ছিল তরুণ সমাজ। আমাদের এই মাতৃভূমিতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস, ঐক্য ও ইচ্ছা শক্তির অনুপম দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে ছাত্র সমাজ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের সশস্ত্র অংশগ্রহণ ও সক্রিয় ভূমিকা বিশ্বের বুকে আমাদের এনে দিয়েছে লাল সবুজের পতাকা। বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার নেতৃত্ব দিবে আজকের শিক্ষার্থিবৃন্দ।”
এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম গ্র্যাজুয়েটদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, এবারের সমাবর্তনে মোট ১৫ হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থী সনদ পেয়েছেন। সর্বোচ্চ ফলাফলের ভিত্তিতে স্নাতক ক্যাটাগরিতে ৮ জন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তানজিনা আক্তার ও মুমতারিন জান্নাত ঐশী, ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) রাতুল কুমার সাহা , বি এম মুহিত সাঈফ ও রাদিআহ হাসান, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ফারিহা আফসানা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের উম্মে মাহফুজা শাপলা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের জান্নাতুল হুসনা তুয়া ‘আসাদুল কবীর স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন।
স্নাতকোত্তর ক্যাটাগরিতে ৭ জন 'শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক’প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শরিফুল ইসলাম, মোছাঃ শামীমা খানম, বদরুন্নাহার দীপা, মুহাম্মদ খায়রুল আলম, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ঊর্মি দাস, অর্থনীতি বিভাগের ইসতিয়াক রায়হান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের কামরুন নাহার। এছাড়া স্নাতকোত্তরে দর্শন বিভাগের সর্বোচ্চ ফলাফলপ্রাপ্ত সাথী আক্তারকে ‘মোফাসসিল উদ্দিন আহমেদ ট্রাস্টফান্ড স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন