ঢাকা, সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বেরোবির ১৬ বছর পদার্পণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

বেরোবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৫৩, ১১ অক্টোবর ২০২৩

আগামীকাল ১২ অক্টোবর বেগম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৬তম জন্মদিন, তথা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।  সেশনজটসহ চলমান অনেক সংকট মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষার বাতিঘর বেরোবি। উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে খ্যাতি পাচ্ছে বেরোবি। 

উত্তরের ‘বাতিঘর’ নামে খ্যাত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, উত্তর জনপদের আশা আকাঙ্ক্ষার ছায়ানীড়, মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর যাত্রা শুরু হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর শহরের ধাপ লালকুঠি এলাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। 

পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর শহরের লালবাগ ও মডার্ণ মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় ৭৫ একর জমিতে নির্মিত নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু।

১৬তম বছরে পা দেওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন একুশে টিভির বেরোবি প্রতিনিধি গাজী আজম হোসেন।


লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী যুথি রাণী 
‘সবুজ ক্যাম্পাস’ নামে পরিচিত আমাদের বেরোবি ক্যাম্পাস। যেকোনো শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণের একটি বড় কারণ এটি তবে অতীতে এই মনোরম সৌন্দর্যের সাথে শিক্ষার্থীদের কপালে ছিল সেশনজট নামক চিন্তার ভাজ। বর্তমান সময়ে মধ্যে সেই চিন্তার কালো মেঘ আর নেই। গবেষণায় সিমাগো র‍্যাংকিং এ সেরা অবস্থান, শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় ভয় সেশনজট শূন্যের কোটায়, বহুকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মূল ফটকের কাজ শুরু করা, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন কিংবা  খেলার মাঠ সংস্কারসহ সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য। 

অতীতের সকল সংকট কাটাতে বর্তমান প্রশাসন যেই দক্ষতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কিছু প্রত্যাশাও থেকে যায়, এই প্রত্যাশায় যুক্ত হবে ক্লাসরুম সংকট দূরীকরণ, স্বাধীনতা স্মারক, ওয়াজেদ মিয়া ইন্সটিটিউটের কাজ পুনরায় চালু করা এবং মেয়েদের হলের কাজ সম্পন্ন করে আবাসিক সংকট দূরীকরণ। 

আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্প সময়ে বেরোবিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রশাসন এই সকল সংকট খুব দ্রুত দূর করবে এবং আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাব।


কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিশাদ নূর

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অতীতে সেশনজট কিংবা ধীরগতির বিশ্ববিদ্যালয় বলা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি প্রশাসনের স্বদিচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেশনজট নিরসন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফলতা এই বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছে। সেই সাথে এই  বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছে  জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের অর্জন। অর্থাৎ এইটা প্রতীয়মান হয় যে এই বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ থেকে কোনো অংশে কম নন। 

তবে কিছু অপূর্ণতা রয়েই গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পরেও তাই এসে এই অপূর্ণতাগুলো বারবার পায়ে কাটার মত গেঁথে গিয়েছে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে অগ্রযাত্রার মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত নেই কোনো  অডিটোরিয়াম, নেই জিমনেশিয়াম, নেই পর্যাপ্ত হল সুবিধা এবং নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম। এই অপূর্ণতা পূরণের দাবি সকল শিক্ষার্থীর। 

আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুক্ত সংস্কৃতি চার্চা কতটা জরুরি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে  রয়েছে শতাধিক সংগঠন। যখন একটি সংগঠন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যায়। তাদের স্টেজেই ২০ হাজার টাকা চলে যায়। আর সকল সংগঠন শিক্ষার্থীদের টাকায় চলে। তাই চাইলেও বড় অনুষ্ঠান নিয়মিত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শুধু অর্থ নয়, একটা মুক্তমঞ্চ এই বার্তাও শিক্ষার্থীদের দেয় যে ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় কতটা সংস্কৃতিমনা, কতটা মুক্তচিন্তার সহায়ক’। 

অডিটরিয়াম বা মুক্তমঞ্চ না থাকার  ফলে শিক্ষার্থীদের মুক্ত সংস্কৃতি চর্চা অনেকটাই বাধাগ্রস্থ হয়ে রয়েছে। এটি উল্লেখ করা জরুরি যে, এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা দেশে বিতর্ক, কবিতা, গান, নৃত্য ইত্যাদিতে দেশ সেরা হয়ে আসছে।  তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তমঞ্চ বা অডিটোরিয়াম এর ব্যাবস্থা করলে এ সাফল্যের ধারা কতটা বেগমান হবে তা সহজেই অনুমেয়। একটা মুক্তমঞ্চ করতে খুব একটা খরচ বা সময় কোনটিই দরকার হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় এ জায়গার সংকুলান নিয়েও কোন  সমস্যা নেই। প্রশাসন অন্যান্য সমস্যার ন্যায় এই অংশে সু নজর দিলে রাতারাতি না হলেও এক মাসের মাঝে সমাধান হওয়া কখনোই আকাশ কুসুম চিন্তা হতে পারে না। 

সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান ভিসি মহোদয় "শিক্ষার্থী বান্ধব" পরিচয় দিয়ে আসছেন। আশা করি এ বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল শিক্ষার্থীদের এই প্রাণের দাবি তিনি খুব দ্রুতই পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মোঃ জাকের হোসেন পাশা

প্রথমত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। হাটি হাটি পা পা করে সাফল্যরূপে প্রাণের বিদ্যাপীঠ ১২ অক্টোবর ষোল বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। তবুও প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও কেন জানি মনের কোণে অপূর্ণতার ঢেউ নাড়া দেয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২টি বিষয়ে পাঠদান থাকলেও আরও কিছুসংখ্যক যুগোপযোগী বিষয় কর্তৃপক্ষ চালু করতে পারেনি যেমনঃ আইন বিভাগ, নাট্যকলা ও থিয়েটার, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অন্তর্ভুক্ত আরও যুগোপযোগী কিছু বিষয় যা প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি।

প্রতিষ্ঠার এত বছরেও নেই কোনো  অডিটোরিয়াম। সম্প্রতি কলা অনুষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স  আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়ায়। যার ফলে এধরনের বড় কোনো কনফারেন্স আয়োজন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যাপ্ত হল নেই যা আছে তা সংখ্যার অনুপাতে অপ্রতুল ফলে আবাসন সংকট চলছে। একাডেমিক ভবন কম হওয়ায় শিক্ষা পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ জরুরি। নামমাত্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট যেখানে বাসা বাঁধছে বৃষ্টি আর শেওলা! যার নির্মাণাধীন কাজ এখন স্থবির হয়ে আছে। শিক্ষক ও পরিবহন সংকটের কথা না বললেই নয়। প্রতিনিয়ত গাদাগাদি করে বাসে চলাচল করতে হয়। বাস সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা দরকার।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জিং সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বপ্নের সারথি, উত্তর জনপদের আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্তপ্রতীক প্রাণের ৭৫ একরকে পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই এখন সময়ের দাবি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী উত্তরাঞ্চলের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সুনজর রাখবেন। শত সংকটকে কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। এগিয়ে যাক সাফল্যের চূড়ায় এ প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের সোনার বাংলা,স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট নাগরিক বিনির্মাণে আগামী দিনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

গণিত বিভাগের মোঃ মুসতানসির মুয়াজ

সবুজে ঘেরা ৭৫ একরের ১৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সাক্ষী হতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শেখার জায়গা, জানার জায়গা, নিজেকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখার জায়গা সে বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বেঁচে থাকুক এবং ক্যাম্পাসের প্রতিটি ধূলিকণার স্পর্শ লাগুক সকল স্বপ্নবাজের পায়ে।

প্রত্যাশার পরিপূর্ণ পূরণ এখনও হয়নি। পর্যাপ্ত বাসের সংকট খুব ভোগান্তির মধ্যে ফেলে, গরমের সময় গাদাগাদি করে বাসে দীর্ঘ পথ যেতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান আসা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যে মহীয়সী নারীর নামে, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার মূ্্যরাল সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি । ক্লাসরুম সংকটে নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত জরুরি এবং গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে। প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে এক হাজারেরও কম শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পায়। এ আবাসন সংকট দূরীকরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। আশা করি, এই সংকটগুলো কাটিয়ে এগিয়ে যাবে বেরোবি। বেরোবির নাম ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশের বাহিরে।
 

মার্কেটিং বিভাগের মীর মোহতাসিম হোসেন সিয়াম

আমি গর্বিত উত্তরের বাতিঘর নামে খ্যাত এই চির সবুজে ঘেরা সুন্দর ক্যাম্পাসে পড়ার সুযোগ পেয়ে। প্রায় দুই বছরের সময়কালে আমি পেয়েছি বেশ কিছু অর্জন। সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস, র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস। মুক্ত জ্ঞান চর্চার জন্য পেয়েছি অনেকগুলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। 

এর পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কিছু সংকটও আছে। যেমন, কম্পিউটার ল্যাবে নেই পর্যাপ্ত কম্পিউটার, সেমিনার লাইব্রেরিতে নাই পর্যাপ্ত বই। এর মাঝেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিভার জানান দিচ্ছি আমরা। মুক্ত জ্ঞান চর্চায় বর্তমান প্রশাসন অনেক আন্তরিক। যেকোনো অনুষ্ঠান বা ইভেন্টের জন্য অনুমিত পাই। প্রশাসনও উৎসাহ দেয়। কিন্তু এই জ্ঞান চর্চায় বড় ধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য অডিটোরিয়াম নেই। সেই সংকট রয়ে গেল।  আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে। মুক্ত জ্ঞান চর্চায় আরও এগিয়ে যাব আমরা।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি