ইউরোপিয়ান গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের মেয়েদের ব্রোঞ্জ অর্জন
প্রকাশিত : ১৬:০৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথম্যাটিকাল অলিম্পিয়াড-২০২৪’এ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ব্রোঞ্জ ও সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন। চতুর্থবারের মত এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে আবারও নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এবারের আয়োজনে একটি ব্রোঞ্জ পদক ও তিনটি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে চার সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল।
গত ১১-১৭ এপ্রিল জর্জিয়ার স্কালতুবো শহরে অনুষ্ঠিত হয় ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথম্যাটিকাল অলিম্পিয়াডের ১৩তম আসর। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথম্যাটিকাল অলিম্পিয়াডই সবচেয়ে বৃহৎ ও মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন। এবছর এই প্রতিযোগিতার ১৩তম আসরে অংশ নেয় ৫৫টি দেশের ২১২ জন প্রতিযোগী।
এই আয়োজনে একটি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ‘নুজহাত আহমেদ দিশা’। এছাড়াও মনামি জামান (ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজ), আফসানা আকতার (হলি ক্রস কলেজ) এবং সানিভা রাকিব সোহা (মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ) সকলেই “সম্মানজনক স্বীকৃতি” অর্জন করে বাংলাদেশের মেয়েদের গণিতের দক্ষতাকে বিশ্বের দরবারে পুনরায় তুলে ধরেছে।
শুরুতে ভিসা জটিলতার সম্মুখীন হবার পরেও দলের সকলের সংকল্প ও অধ্যবসায়, একই সাথে দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার এবং গণিতকন্যা- বাংলাদেশ গার্লস ম্যাথমেটিকস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাদিয়া হামিদ কাজীর অক্লান্তকর প্রচেষ্টার মাধ্যমে দলটির অংশগ্রহণ এবং চূড়ান্ত সাফল্য নিশ্চিত হয়েছে।
সাদিয়া হামিদ কাজী দলটির সাফল্যে বলেছেন, “আমাদের বাংলাদেশের মেয়েরা যে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে, তা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও অনুপ্রেরণার। এই সাফল্য আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, দৃঢ় সংকল্প ও নিরন্তর প্রচেষ্টা দ্বারা আমরা যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে পারি।”
এই বছরের আয়োজনে বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রেখেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও রোজলিমন ক্রেডিট রিপোর্টস অ্যান্ড কালেকশন্স লিমিটেডের উদার পৃষ্ঠপোষকতা।
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ ইনোভেশন অফিসার ও ডিরেক্টর জেনারেল ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুন, এএমএল-এর সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এএসএম মাঈনউদ্দিন মোনেম এবং রোজলিমন ক্রেডিট রিপোর্টস অ্যান্ড কালেকশন্স লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ ও জেড রায়ানকে তাঁদের সহায়তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
গণিতকন্যাদের সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করেন “গণিতকন্যা বাংলাদেশ গার্লস ম্যাথমেটিক্স ফাউন্ডেশন”র সদস্য প্রফেসর ইয়াসমীন হক ও প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের মেয়েরা দেশের পতাকা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরছে, এটি আমাদের জন্যে অনেক গর্বের ও আনন্দের।”
গণিতকন্যাদের এমন সাফল্যে উপদলনেতা ঈপ্সিতা বহ্নি উপমা বলেছেন, “আমাদের মেয়েদের সাফল্যে আমি অনেক খুশি। বিশেষ করে এবারের প্রশ্নের ধরন গত কয়েক বছরের থেকে ভিন্ন ছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা নম্বর থিওরি, এলজেবরা বিষয়গুলোতে উন্নতি করেছে। পুরো ইভেন্ট জুড়ে তাদের অংশগ্রহণ ছিল প্রাণখোলা ও আনন্দময়। এটিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আয়োজিত প্রথম “জাতীয় গণিতকন্যা অলিম্পিয়াড”র মাধ্যমে শুরু হয় এবারের ইজিএমওতে অংশগ্রহণকারী দল বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের মধ্যে কয়েক ধাপে ট্রেনিং ও পরীক্ষার মাধ্যমে চার সদস্যের দল বাছাই সম্পন্ন হয়।
ভবিষ্যতে গণিতের প্রতি মেয়েদের দক্ষতাকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রতি “গণিতকন্যা—বাংলাদেশ গার্লস ম্যাথমেটিকস ফাউন্ডেশন” দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। ইজিএমওতে এই সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে অণুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়ার পথে সকলের সাহায্য এবং সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে।
এএইচ
আরও পড়ুন