ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জাবি পরিবহন কার্যালয়ের বিরুদ্ধে গাড়ি ব্যবহার ও নিয়োগের অভিযোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

‘নিয়ম লঙ্ঘন’ করে ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার এবং নিয়োগে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পবিরহবন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আলী আজম তালুকদারের বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত গাড়ির জ্বালানি ও মেরামত খাতের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল হতে পরিশোধ করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম করা সত্তেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না  বলে অভিযোগ উঠেছে।     

নিয়ম অনুযায়ী, সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারে প্রাধিকার প্রাপ্ত হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয় ও কোষাধ্যক্ষ। কারণ তাদের গাড়ি ব্যবহারের বার্ষিক জ্বালানি ও মেরামত খরচের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বইয়ে নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু পরিবহন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারে প্রাধিকার প্রাপ্ত নন। তাই তিনি পরিবহনের কোন গাড়ি ব্যক্তিগতকাজে সার্বক্ষণিক ব্যবহার করতে পারেন না। এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই অধ্যাপক আজম দুটি গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। তার ব্যবহৃত গাড়িগুলোর জ্বালানি ও মেরামত খরচের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল হতে পরিশোধ করা হচ্ছে!  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি ঢাকা মেট্রো গ- ৩১-০০৫৫ এবং ঢাকা মেট্রো চ-৫৬-৩৩১৬ নম্বরের গাড়ি দুটি নিয়মিত ব্যবহার করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে চ-৫৬-৩৩১৬ গাড়িটি কেনার পরে পরিবহন পুলে যুক্ত না করেই তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। অধ্যাপক আজম ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক এসব গাড়ি দিয়ে ঘুরাফেরা করছেন। রাত দুইটা পর্যন্ত তার বাসার সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।   

পরিবহন কার্যালয় সূত্র জানায়, গাড়ি দুটি রিকুইজিশনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবহার করার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রিকুইজিশন দিয়েও পরিবহন সংকটের কারনে গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। সেখানে এই গাড়ি দুটি এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষককে রিকুইজিশন দেওয়া হয়নি। অথচ অধ্যাপক আজম এই দুটি গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। এছাড়া এই দুটি গাড়ি চালাতে মেকানিক হেলপার আশরাফুল ইসলাম রাসেলকে ড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পরিবহনের মেকানিক্যাল কাজে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।  

কয়েকটি ফিলিং স্টেশনের বিল সূত্রে জানা যায়, জুন মাসে ০০৫৫ নম্বর গাড়িতে জ্বালানিখাতে ২১ হাজার ৬৫৫ টাকা বিল আসে। একইভাবে জ্বালানিখাতে জুলাই মাসে ০০৫৫ নম্বর গাড়িতে ২১ হাজার ৪৮২ টাকা, আগস্টে ০০৫৫ নম্বর গাড়িতে ১৬ হাজার ৯৮২ টাকা এবং ৩৩১৬ নম্বর গাড়িতে ৪ হাজার ২৭২ টাকা,  সেপ্টেম্বরে ০০৫৫ নম্বর গাড়িতে ২২ হাজার ৮৪৯ টাকা এবং ৩৩১৬ নম্বর গাড়িতে ৪ হাজার ৯৮৪ টাকা, অক্টোবর মাসে ০০৫৫ নম্বর গাড়িতে  ৫ হাজার ৯০৭ টাকা বিল আসে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবহন কার্যালয়ে প্রথমে ৩টি ড্রাইভার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই তিনটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপেক্ষায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গাড়ি ক্রয় করায় নভেম্বরে তিনটি ড্রাইভার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।   

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বর আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ। অথচ বিজ্ঞাপন অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন না করেই মাস্টাররোলে ড্রাইভার পদে সুজন কুমার সরকার ও মো. উজ্জ্বল আলীকে নিয়োগ দেন অধ্যাপক আলী আজম।

নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট পদে বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে মাস্টার রোলে নিয়োগ প্রদান করা অবৈধ। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই মাস্টাররোলে নিয়ম দিচ্ছেন তিনি।   

এদিকে একটি শূন্য মেকানিক পদকে স্টোর কিপার পদে রুপান্তর করে মাস্টার রোলে মাসুল বিল্লাকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরিবহনের মেকানিক সংকট থাকা সত্তে¡ও মেকানিক হেলপার আশরাফুল ইসলাম রাসেলকে সার্বক্ষণিক ব্যক্তিকাজে ড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করছেন অধ্যাপক আলী আজম।

পরিবহন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল সকালে রাজধানীর শ্যামলী হতে ক্যাম্পাসমুখী শিক্ষকদের বাস ট্রিপ ফেল করায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। পরে পরিবহন কার্যালয় হতে নগদ ২ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করেন। যা নিয়ম বহির্ভূত। কেননা কোন বাস ট্রিপ ফেল করলে তার ব্যক্তিগতভাবে অর্থ পরিশোধ করার কথা।  

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, ‘গাড়ি দুইটার মধ্য একটা আমি রেগুলার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার করছি আর অন্যটা এখনো পরিবহনপুলে যুক্ত করা হয়নি। তবে যাতে নষ্ট না হয়ে যায় এই জন্য এবং মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ও রাষ্ট্রীয় কাজে চালানো হয়।’  

পরিবহন কার্যালয় থেকে নগদ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ির ট্রিপ মিস করলে বাইরের গাড়িতে আসা যায় এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তিন হাজার টাকা ভাড়া বাবদ দিয়ে থাকে। আমিতো এক্ষেত্রে আরও চারশত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাচিয়ে দিয়েছি।’

এ ছাড়া মাস্টার রোলে নিয়োগের ব্যাপারে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনপুলে লোকবলের অভাব থাকার কারণে ৬টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই ২জনকে মাস্টার রোলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন,‘আমি জানি না তিনি এভাবে গাড়ি ব্যাবহার করছেন কিনা। তবে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করার কোন নীতিমালা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘কোন শিক্ষক গাড়ির ট্রিপ মিস করলে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। কেউ যদি ক্ষমতা ব্যবহার করে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তিনি নিয়ম লঙ্খন করেছেন।’ 

কেআই/এসি  

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি