কুচকাওয়াজে ফের প্রথম কোয়ান্টাম স্কুল
প্রকাশিত : ১৫:৫৪, ২৬ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৬:৪৫, ২৬ মার্চ ২০১৯
জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশের কুচকাওয়াজে আবারো প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বান্দরবানের লামার কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের শিক্ষার্থীরা। জয়ের ধারাবাহিকতায় এ নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো প্রথম স্থান দখলে রেখেছে তারা।
আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ ২০১৯) ঢাকা জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিশু-কিশোর সমাবেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কুচকাওয়াজে এ বছর দ্বিতীয় স্থান লাভ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও তৃতীয় হয় সরকারি শিশু পরিবার।
কুচকাওয়াজ ইভেন্টে ২০১৫ সালে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই প্রথম হয়েছিল কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে ২০১৬ ও ২০১৭ এবং ২০১৮ সালেও নিজেদের প্রথম স্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয় কোয়ান্টারা।
বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চল লামার সরই উপজেলায় ২০০১ সালে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল। মাত্র ৭টি শিশু নিয়ে শুরু করা এ স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক।
এ বছর ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মোট ৪৮টি স্কুল ও শিশু সংগঠন মার্চপাস্টে অংশ নেয়। প্রথম হওয়া কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ৩২ জন শিক্ষার্থী কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে। কুচকাওয়াজের পাশাপাশি কসমো স্কুলের ১৭০ জনের বাদক দলের বিশেষ পরিবেশনা মুগ্ধ করে উপস্থিত সবাইকে। দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা, আত্মবিশ্বাসী দেহভঙ্গি এবং বাদ্যের তালে তালে কোয়ান্টাদের আকর্ষণীয় উপস্থাপনা নজর কাড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত সবার।
উল্লেখ্য, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে মাত্র ৭টি শিশুকে নিয়ে, ২০০১ সালে দুর্গম পহাড়ের নিরিবিলি পরিবেশে বাঁশের বেড়া আর টিনের চালের ঘরে যাত্রা শুরু করেছিল কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ সেখানে পড়ালেখা করছে প্রায় ২০০০ ছাত্র-ছাত্রী।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, এতিম, অনাথ ও অসহায় শিশুদের হাতে শিক্ষার আলোর মশাল তুলে দিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। স্কুলটির লক্ষ্য শুধু গতানুগতিক শিক্ষা দেওয়া নয় বরং অবহেলিত শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও মানবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এই স্কুলের ৩০টি ক্যাম্প আছে। তারা সমাজের বঞ্চিত ছেলে-মেয়েদের খুঁজে বের করে এখানে নিয়ে আসে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদেরকে এখানে পড়ালেখা করানো হয়। রয়েছে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা।
বর্তমানে ২০টি জাতিগোষ্ঠীর ৬টি ধর্মের ২০০০ ছেলে-মেয়ে এই স্কুলে পড়ালেখা করছে। এখানে ছেলেদের জন্য ৬টি ও মেয়েদের জন্য ২টি হল রয়েছে। স্কুলে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে মেডিটেশন, নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম, চারু ও কারুকলা, সংগীত, নৃত্যকলা, খেলাধূলা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসমূহের সংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রম প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন