কানাডার স্কলারশীপ পাওয়ার প্রক্রিয়া কী
প্রকাশিত : ১৮:২৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
একটাইতো শব্দ, যে শব্দ গোটা বিশ্বকে করেছে সহজলভ্য এবং সম্পর্কিত। ‘প্রযুক্তি’ শব্দটি দিয়ে হাতের মুঠোয় ধরা যায় পৃথিবী। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে এক মেলবন্ধন তৈরী হয়েছে। এতে যেমন কাজ হয়েছে সহজ তেমনি গবেষণার দিক হয়েছে প্রসারিত। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ যাত্রায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।
প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে বিশাল অংঙ্কের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যান। কানাডা তাদের বিশ্বসেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহজ শর্তে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনেই ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে।
আজ একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য কানাডার বৃত্তির (স্কলারশীপ) বিষয়ে অল্প বিস্তর তুলে ধরা হলো।
কানাডায় সেল্ফ-ফাইন্যান্সে পড়তে যাওয়াটা খুবই ব্যয়বহুল। তাহলে কী উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে? না আপনার এ ইচ্ছা থেমে থাকবে না।
প্রতিবছর কানাডিয়ান সরকার মোট ১৬৭টি বৃত্তি প্রদান করে থাকে এবং বছরের যে কোনো সময়েই বিভিন্ন কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ভ্যানিয়ার স্কলারশিপসহ মোট ৫০০ জনের মতো শিক্ষার্থী থাকে।
আপনাকে প্রথমে কানাডিয়ান কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে। এই বৃত্তির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার, যা পিএইচডি প্রোগ্রামের তিন বছর পর্যন্ত দেয়া হয়। যোগ্য হওয়ার জন্য একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, গবেষণার সম্ভাব্যতা এবং নেতৃত্ব গুণাবলি এই তিনটিকেই সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
প্রার্থীরা যে কানাডিয়ান ইন্সটিটিউশনে পড়তে চান, তাদের দ্বারা অবশ্যই মনোনীত হতে হবে। প্রতি বছর প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়, আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টরিয়া, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি এবং প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার জন্য এই বৃত্তি পেয়ে থাকে।
সর্বশেষ প্রকাশিত বিশ্ব-র্যাংকিং অনুযায়ী ৯০% এরও বেশী কানাডিয়ান রিসার্চ স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বনামধন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও ক্যারিয়ার গঠনে যা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিগ্রি আপনাকে চাকরির বাজারে অধিকতর যোগ্য বলে উপস্থাপন করবে। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা তাত্ত্বিক দক্ষতার পাশাপাশি প্রায়োগিক অভিজ্ঞতাকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন শিল্প ও পেশার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের কাজে নিয়োজিত। এসব নানাবিধ সুবিধা আপনাকে চাকরির জন্য যোগ্য করে তুলবে।
আর্থিকভাবে সচ্ছল শিক্ষার্থীরা কানাডাতে পড়ালেখা করার সুযোগতো পাচ্ছেই। সেই সাথে যারা অসচ্ছল তাদের জন্যও রয়েছে বিভিন্ন স্কলারশীপের ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক কারণে যেন কারো উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্থ না হয় সে ব্যাপারে কানাডার সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচেতন।
কানাডার মূল স্কলারশীপগুলো হল:
১. ভেনিয়ার কানাডা গ্রাজুয়েট স্কলারশীপ: কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় বৃত্তি এটি। কানাডার সরকার এ বৃত্তি দিয়ে থাকে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে বছরে ৫০০০০ কানাডীয় ডলার দেয়া হয়। মেয়াদ তিন বছর। সাধারণত পিএইচডি গবেষণার জন্য এ বৃত্তি দেয়া হয়। ভেনিয়ার কানাডা গ্রাজুয়েট স্কলারশীপ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিচের লিংক ব্রাউজ করুন –http://goo.gl/JgFnNx
২. আইডআরসি ডক্টরাল রিসার্চ এ্যাওয়ার্ড: এ বৃত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। প্রতিবছরই এ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য এ লিংক ব্রাউজ করুন- http://goo.gl/5EvIbc
৩. ভিজিটিং ফেলোশীপ ইন কানাডিয়ান গভমেন্ট ল্যাবরেটরীজ: এ ফেলোশীপ প্রো্গ্রাম উন্নয়নশীল দেশের তরুণ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদেরকে কানাডার গভমেন্ট ল্যাবরেটরীতে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়। এ সংক্রান্ত আরো তথ্যের জন্য এ লিংক ব্রাউজ করুন- http://goo.gl/13NVaB
কানাডায় পড়াশোনাবিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট:
১. কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা বিষয়ক তথ্যের ওয়েবসাইট: https://www.univcan.ca/
২. কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ওয়েবসাইট: https://www.ouac.on.ca/
৩. স্টুডেন্টবিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট: https://www.canada.ca/en/immigration-refugees-citizenship/services/study-canada.html
৪. উপকারী ওয়েবসাইট: https://www.studyincanada.com/ এবং http://immigrationandsettlement.org/
পড়াশোনার ভাষা : ইংরেজি ও ফরাসি দুটি ভাষাতেই কানাডার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করা যায়। তবে যে ভাষায় পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক সে ব্যাপারে আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতাও থাকতে হবে। ভর্তির শুরুতেই ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই করার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়া লাগে। যেমন- অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় TOEFL এ ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় নূন্যতম ৭৯ পেতে হয়। তবে ১০০-এর বেশি নম্বর পেলে ভালো। এছাড়া বিজনেসের শিক্ষার্থীদের GMAT টেস্টে ভালো স্কোর পেতে হয়।
শিক্ষাব্যবস্থা : কানাডায় একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে দুভাবে পড়াশোনা করতে পারে। ফুলটাইম অথবা পার্টটাইম পড়াশোনায় এখানে রয়েছে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ডক্টরাল, পিএইচডি কোর্স। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও রয়েছে কো-অপারেটিভ এডুকেশন, ডিসট্যান্ট লার্নিং, কন্টিনিউয়িং এডুকেশন এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মতো আরও অনেক কোর্স ও পদ্ধতি। এখানে শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্কশপ ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা রয়েছে এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে।
যে বিষয়ে পড়া যায় : কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনোমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনোমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, নৃবিজ্ঞান, উন্নয়ন বিষয়ক বিষয়াবলি, থিয়েটারসহ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার বিষয় এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় পড়তে পারবেন।
আবেদনের সময়: কানাডার অ্যাকাডেমিক বছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয়। বছরে দুটি সেমিস্টার থাকে। সেপ্টেম্বর অথবা জানুয়ারি সেমিস্টারে ভর্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আট মাস আগে শুরু করা ভালো।
এই বৃত্তি মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রতি সেমিস্টারে $২,০৪৫ দুই বছরের জন্য এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য প্রতি সেমিস্টারে $৪,০৪৯ তিন বছরের জন্য দেয়া হয়।
একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, যেটার ওয়েট ৩০-৫০ শতাংশ এবং একাডেমিক মার্কস, প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি, পুরস্কার এবং অনার্সের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। রিসার্চ এবিলিটি ও পটেনশিয়াল ইন প্রোগ্রাম স্টাডি, সম্মেলন, উপস্থাপনা এবং মৌলিকত্ব দ্বারা নির্ধারিত হয়।
কমিউনিকেশান ও লিডারশিপ এবিলিটি, এটার ওয়েট কম মাত্র ০-২০ শতাংশ এবং এতে প্রাসঙ্গিক স্বেচ্ছাসেবক, নেতৃত্ব এবং একাডেমিক কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হয়।
(এ অনুচ্ছেদটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ওয়েব সাইট, উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় অবস্থানকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তৈরী করা হয়েছে।)
এমএস/এসি
আরও পড়ুন