পর্যাপ্ত বাজেট ও লোকবল সংকটে কুবি`র শারীরিক শিক্ষা বিভাগ
প্রকাশিত : ২২:০৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
২০১০ সালে একজন সহকারী পরিচালক নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও একজন সহকারী পরিচালক ও একজন পিয়ন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম চলছে।যার ফলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে দায়সারাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলা চালানো হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
গেল বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘আন্ত:বিশ^বিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চ্যাম্প ১৯' প্রতিযোগিতায় একটি মাত্র ইভেন্টে অংশগ্রহণ ছাড়া বাজেটের অভাবে বাকী প্রায় ২৩ ইভেন্টের একটিওতে অংশগ্রহণ করেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
শারীরিক শিক্ষা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ সালে শারীরিক শিক্ষা বিভাগে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৫ লক্ষ টাকা।বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করতে চলে যায় প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। ফলে বাজেট স্বল্পতার কারণে ‘বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থা’ এ কোন ইভেন্টে বা দল পাঠায়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চ্যাম্প-১৯' এ ভলিবল টিম অংশগ্রহণ করলেও আর কোন দল বা ইভেন্ট পাঠানো হয়নি। যেখানে প্রতিবছর ‘বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থা ১৩টি ইভেন্ট ও ‘আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চ্যাম্প’ ১০টি ইলেন্ট আয়োজন করে থাকে।
২০১৯-২০ সালের জন্য ১৪ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খেলাধুলার জন্য ছয় লক্ষ টাকা ও ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় করার জন্য এক লক্ষ বাজেট দেয়। এই বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।
‘বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থা’ আয়োজিত হকি টুর্নামেন্টে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ পরপর দুইবার বোঞ্জ পদকের সাফল্য অর্জন করে হকি দল। ২০১৯ সালের প্রতিযোগিতার জন্য খেলোয়াড়রা দেড় মাস প্র্যাক্টিস করার পরও বাজেটের অভাবে দল পাঠায়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।হকি না গিয়ে ফুটবল দল পাঠানো হবে বলে দিলেও সেটাও যাওয়া হয়নি বাজেটের অভাবে। যার ফলে বাজেট বেশি না থাকায় পাঠানো হয় ভলিবল দল। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারাম ও দাবাতে সাফল্য থাকলেও সেই ইভেন্টগুলো ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে বাজেট ও সদিচ্ছার না থাকার কারণে। যেখাণে ক্যারাম চারবার অংশগ্রহণ করে সোনা, রৌপ্য ও বোঞ্জসহ তিনটি পদক অর্জন করে।দাবার অবস্থানও সম্মানজনক অবস্থায় ছিল।
হতাশা ব্যক্ত করে হকি দলের অন্তত দুই-তিনজন খেলোয়াড় বলেন, দেড় মাস প্র্যাক্টিস করার পর বলা হয় ‘আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে’ হকি দল যাবে না।বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করার জন্য এই হকি ভরসা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি হকি দল না পাঠায় অচীরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হকির ভবিষ্যত শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তাঁরা।
প্রতিবছর ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার স্বাধীনতা দিবস পালন ও জমকালোভাবে খেলাধুলার নানা ইভেন্ট আয়োজন করে। গেল তিন বছর চার-পাঁচটি ইভেন্ট দিয়ে দায়সারাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এতো উন্নয়নের ও আশ্বাসের কথা শুনি এই খেলাধুলায় এতো কম বাজেট কিভাবে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করার জন্য খেলাধুলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেলাধুলার পুরস্কার নিম্মমানের দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
ক্রীড়া পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন,‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল ও ভলিবল আয়োজন করে যাবো। মাঠের পাশে কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের প্রস্তাবনা দিয়েছি, অতিশিগগির এটা পেয়ে যাবো’। ২৬ মার্চের খেলাধুলায় ইভেন্ট বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কমিটি করে আয়োজন করে থাকে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন,শারীরিক শিক্ষা বিভাগে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে ও আগামী বছরে খেলাধুলার জন্য বাজেট বাড়ানো হবে।
কেআই/
আরও পড়ুন