ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

সড়কবাতির আলোয় শিশু শিক্ষার্থীর বিদ্যার্জন

আমিনুল ইসলাম তন্ময়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ১৩:১০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৩:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দারিদ্র্যতার কষাঘাতে বাবা-মায়ের জীবন-যাপন। টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ নেয়ার সামর্থ্য নেই তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুচিত্রার বাবা ঢাকায় রিক্সাচালক সুনীল কর্মকারের। কিন্তু পড়ালোখা করার আদম্য ইচ্ছে সুচিত্রার মধ্যে। আর তাই বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে জীর্ণ কুটিরে মায়ের সঙ্গে বসবাসরত পিদিমের আলো বঞ্চিত সুচিত্রা পিচঢালা সড়কের লাইটপোস্টের আলোয় আলোকিত করে চলেছে নিজেকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের চন্দনা-বিশুর মোড় এলাকায় মা রুপালী কর্মকারের সঙ্গে সুচিত্রা কুমারিকার বসবাস। বসবাসের স্থান বলতে এলাকায় সড়কের ধারে ঝুপরি ঘরে মা-মেয়ের জীবন-যাপন। বাবা সুনীল কর্মকার ঢাকায় রিক্সা শ্রমিক-দিনমজুর। তার (সুচিত্রা) একমাত্র বড় বোনের বিয়ে দেয়া হয়েছে আট মাস পূর্বে। বাড়ির পাশে যাদুপুর সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুচিত্রা।

সুচিত্রা কুমারিকা জানায়, পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছে তার। দিনের অধিকাংশ সময় স্কুল-ক্লাসে থাকতে হয় পড়ালেখার জন্য। সকাল-বিকাল অবশিষ্ট সময় পরিবারের কাজে মাকে সহযোগিতা করতে বেলা বয়ে যায়। পড়ালেখা করার সময় হয় না তেমন দিনের আলোয়। বাবা-মায়ের সামর্থ্যহীন সংসারে চেরাগ (পিদিম) বা হারিকেনের আলোর সুযোগ নেই তেমনটি। তিন/চার মাস পূর্বে সরকারি উদ্যোগে চন্দনা-বিশুরমোড় এলাকায় সৌর বিদ্যুতের একটি লাইটপোস্ট বসানো হলে দু’চোখে সে আশার আলো দেখে। সন্ধ্যার পর সেই আলোয় শুরু করে সুচিত্রা বিদ্যার্জন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-রহনপুর সড়কের চন্দনা এলাকাটি অনেকাংশে ব্যস্ততম। চলাচল করে বাস, ট্রাক, মটরসাইকেল, ভটভটি, নশিমন-করিমন, রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন। তথাপি ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়কের লাইটপোস্টের আলোয় চলে শিশু শিক্ষার্থী সুচিত্রার পাঠ গ্রহণ। সম্প্রতি সুচিত্রাকে অনুকরণ করে তার সঙ্গে সড়ক বাতির আলোয় পড়তে আসে আরও কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী।

মা রুপালী কর্মকার জানান, মেয়ের প্রবল ইচ্ছে পড়ালেখার। তাই তিনি আর বাধা দেননি সড়কবাতির আলোয় বই পড়তে। তবে যানবাহন চলাচলে তিনি থাকেন আতংকে। যদি কখনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়! কিন্তু সামর্থ্যহীন জীবনে মেয়ের ইচ্ছার কাছে পরাস্থ তিনি।

স্থানীয় প্রতিবেশি তুহিন রেজা শিশু শিক্ষার্থীটির প্রবল আগ্রহ আর বিদ্যার্জনের একগ্রতা দেখে অভিভূত। অনেক সময় যানবাহন থেকে রক্ষার্থে দূর থেকে সুচিত্রার দিকে নজর রাখেন। অপর প্রতিবেশি শরিফুল আলম জানান, সরকারের প্রতিশ্রুতি ঘরে-ঘরে বিদ্যুতের আলো বাস্তবায়ন হলে সুচিত্রাকে আর সড়কের লাইটপোস্টে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পড়ালেখা করতে হবে না। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বিশুর মোড় এলাকার বৃদ্ধ আব্দুর লতিফ বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগকে টাকা দিতে না পারায় এলাকার ১৫/টি ভূমিহীন পরিবার বিদ্যুৎ বঞ্চিত দীর্ঘদিন। আর তাই বাড়িতে আলোর অভাবে সুচিত্রা পড়ালেখা করে সৌর বিদ্যুতের সড়কবাতির আলোয়। শেষ বয়সে এসেও বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা আব্দুল লতিফের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা জানান, সড়ক বাতির অলোয় দরিদ্র শিশু সুচিত্রার লেখাপড়ার বিষয়টি সম্প্রতি তিনি জেনেছেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে চন্দনা-বিশুর মোড় এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে ন্যূনতম অর্থে বিদ্যুৎ সংযোগ সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর জোনের নেসকো বিদ্যূৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিদের্শনা বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সবরাহের প্রচেষ্টায় রয়েছেন তিনি। এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত নেসকো’র বিদ্যুৎ প্যাকেজ পাওয়ার পরপরই অচিরেই চন্দনা-বিশুরমোড়ের দরিদ্র পরিবারগুলোর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি