নেতৃত্বহীন সিকৃবি ছাত্রলীগ, এক কমিটিতে অর্ধযুগ পার
প্রকাশিত : ১৫:১৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ খ্যাত দেশের সব বিশ্বিবিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বিদ্যমান। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন হওয়াতে ছাত্রলীগের স্বর্ণ যুগ। অনান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। রাজনীতিতে জড়িত সব মেধাবীদের চাওয়া থাকে নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ‘পরিচয় বিহীন’ রয়েছে সিকৃবি ছাত্রলীগের কর্মীরা ।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ছাত্রলীগের ২ সদস্যের ১ম কমিটি ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। উক্ত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ছিলেন শামিম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঝত্বিক দেব। ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দুবার পরিবর্তন হয়েছে। এই কমিটি অর্ধযুগের বেশি সময় পার করলেও নতুন নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সিকৃবি ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রীয় অনুমোদনের পর জুন মাসে ১২১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কিমিটি ঘোষণা করেন সভাপতি - সেক্রেটারি। সঙ্গে সঙ্গে হলের ৪ টি কমিটিও ঘোষণা করা হয়। চারটি হল কমিটির সভাপতি- সম্পাদকদের মধ্যে শুধু এক হল সেক্রেটারি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয়, বাকি সবাই নিষ্ক্রিয়।
এই কমিটির সহসভাপতি ১৭ জনের বর্তমানে কেউ ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেই। অধিকাংশই চাকরি করে নতুবা ব্যবসা বানিজ্য করে। সহসভাপতিদের মধ্যে কামরুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসবে কর্মরত, দেবর্ষী ভট্রাচার্য অর্জুন মাৎস্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, জাহের আহমদ কীটতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং রাফাত আল ফয়সাল কৃষিতত্ত্ব ও হাওর বিভাগ লেকচারার।
৭ জন যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে গৌতমপাল বিসিএস ক্যাডার, সৌরভ ব্রত দাস ছাত্র কল্যাণ কর্মকর্তা, শিপলু রয় সেকশন অফিসার হিসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত।
৭ জন সাংগঠনিক সম্পাদককের মধ্যে সুদীপ্ত আহমদ শুভ প্রাইভেট জবে, অপু সরকার শিক্ষক, বাকিরাও বিভিন্ন চাকরি বা ব্যবসা বানিজ্যে জড়িত।
অর্থ সম্পাদক সোহানুর রাহমান সোহান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরে কর্মকর্তা, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক হাবিবুর রহমান রাজু বিশ্বিবদ্যালয়ে অডিট কর্মকর্তা, গ্রন্হনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম রাজিব বিশ্বিবদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
সদস্যদের মধ্যে যারা ছিলেন তারা গত বছরের সম্মেলন কেন্দ্রীক নিজ নিজ গ্রুপ নিয়ে ক্যাম্পাসে ভালোই শক্তি জানান দেয়, সম্মেলন যখন কর্মী সভায় রূপান্তর হয় তারপর থেকে তারা ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। সদস্য অনুপ চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন প্রাইভেট জবে কর্মরত।
দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা কর্মীদের নতুন নেতৃত্বের দাবির কারণে বেশ কয়েকবার সম্মেলন করার উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সোহাগ - জাকির কমিটি। এই নতুন কমিটি হচ্ছে, আসছে এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নতুন নেতৃত্ব আসার গুঞ্জন। অবশেষে জাকির হোসাইন ২০১৮ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সম্মেলন না করে কর্মী সভা করে নেতাকর্মীদের থেকে সিভি সংগ্রহ করা হয় তখন। সিভি সংগ্রহেই শেষ, এরপর নতুন কমিটি নিয়ে কোনও অগ্রগতি আর দেখা যায়নি।
এর মাঝে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পরেও পরিচয় না পাওয়াতে পদপ্রত্যাশী গ্রুপগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠে। সভাপতি ও সেক্রেটারির নিয়ন্ত্রন করা গ্রুপগুলো তাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। যার ফলশ্রুতিতে ক্যাম্পাসের সেক্রেটারি ঝৃত্তিক দেবকে যুগ্ম সম্পাদক শিপলু রয়ের গ্রুপ ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। এর ফলে দীর্ঘদিন সেক্রেটারি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন এবং তার গ্রুপ কোনঠাসা হয়ে পরে।
একইভাবে সভাপতিও ক্যাম্পাসের রাজনীতে তার গ্রুপ দ্বারা অবাঞ্চিত হওয়ার আগেই নিজে লোকচক্ষুর অন্তরালে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
এরই মধ্যে নতুন নেতৃত্বে আসে শোভন - রাব্বানী। এতে করে আসার আলো দেখে সিকৃবির ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নেতৃত্ব পাওয়ার পর গতবছর সিলেট শাহজালাল রহঃ মাজার জিয়ারত করতে এলে তখন তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর কমিটি দেওয়া হবে। কিন্তু এটা ঘোষণায় থেকে বাস্তবে রূপদিতে করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ক্যাম্পাসে আগের মতো কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে না। সর্বশেষ শোকের মাস আগস্টের প্রথম প্রহরে মোমবাতি প্রজ্জলনসহ বেশ কিছুদিন কোনও কর্মসূচিই পালনে দেখা যায় না এ ইউনিটের ছাত্রলীগের কর্মীদের।
এ বিষয়ে পদপ্রত্যাশী আলমগীর হোসাইন বলেন, মূল নেতৃত্ব নেই, বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত শাখার কর্মীরা, এক গ্রুপ বাস্তবায়ন করতে চাইলে অন্যদের অনাগ্রহের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ছাত্রদল - শিবিরের বিভিন্ন বাঁধা উপেক্ষা করে আমরা মাঠে ছিলাম, তখনো আমরা ছিলাম সংখ্যায় অল্প, এখন কর্মী অনেক বেশি। ময়দানের দীর্ঘদিন সময় দেওয়া একনিষ্ঠ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী যেন এ ইউনিটের নেতৃত্বে আসে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে সিকৃবি ছাত্রলীগরে প্রথম কমটিরি সভাপতি শামমি মোল্লা বলনে, নতুন কমিটি না আসাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরাও নতুন কমিটি চেয়েছি ২০১৮ সালে র্কমসভা করে সিভি সংগ্রহ করা হয়, সম্মলেনে বিদায়ী সভাপতি হিসেবে ভাষণও দেই। কিন্তু কেন নতুন কমিটি আসেনি সেটা কন্দ্র বলতে পারব।
কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আন নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমরা নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত হলাম মাত্র, যেসব ইউনিটে কমিটি নাই র্দীর্ঘদিন আমরা দ্রুত সময়ে কমিটি দিতে চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন