ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অটল শিক্ষার্থীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

টানা তিন দিনের আন্দোলনের মুখে গতকাল শুক্রবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বন্ধের মধ্যেই আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সঙ্গে বিমাতা সূলভ আচরণ করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামিয়ে দিতে নানা রকম চেষ্টা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রহমত ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন থামিয়ে দিতে শুরু থেকেই প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হল, এখন আবার ক্যাম্পাসই বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যত যাই করুক না কেন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ করলেও আমরা ক্যাম্পাস ছাড়বো না। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারির অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করতে জেলা পুলিশ সুপারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ মোতায়ন থেকে শুরু করে যে কোন ব্যবস্থার মধ্যেই আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, উপাচার্যের প্রত্যক্ষ নির্দেশে তার বাহিনী এবং বহিরাগত সন্ত্রসীরা এই হামলা চালিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় ৪০-৫০ জনের একটি দল তাদের ওপর রামদা, হকিস্টিক এবং লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিশারিজ দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর মাথা ইট দিয়ে ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলায় অহত শিক্ষার্থীদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা চলছে তবে যানবাহন সংকটের কারণে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, উপাচার্য ড. খোন্দকার মো. নাসিরউদ্দিন স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছেন। সরকার তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দিলেও তিনি তার মর্যাদা রাখেননি। তার আচরণও শিক্ষকসুলভ নয়। এর আগেও একবার তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। তখনও তিনি সব দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে তা কার্যকর হয়নি। একদিকে দাবি মেনে নেয়ার কথা বলছেন অন্যদিকে উপাচার্য তার অনুগতদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, গোপালগঞ্জের এ বিশ্ববিদ্যালয়টির  প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল আলম খান। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে তার মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোঃ নাসিরউদ্দিনকে উপাচার্য হিসেবে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে সরকার। বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব আছেন ড. খোন্দকার মোঃ নাসিরউদ্দিন। দীর্ঘদিন যাবৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে আসীন থেকে নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে তিনি ‘গুন্ডাবাহিনী’ হিসেবে ব্যবহার করেন। এর ফলে উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননা।

উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিষয়ে দেশ ব্যাপি সমালোচনা হলে গত বুধবার সন্ধ্যায় তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় প্রশাসন। তবে বুধবার রাতেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে বুধবার রাতেই ১৪টি সমস্যার সমাধান করার কথা উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তিও দেয়া বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন।

জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, নারী কেলেঙ্কারী, ভর্তি ও নিয়োগ দুর্নীতি, প্রকল্প দুর্নীতি, বাকস্বাধীনতা হরণ, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারা, আবাসন সংকট, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন খাতের মাধ্যমে অর্থ লোপাট, গুন্ডাবাহিনী তৈরিসহ নানা বিষয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

নিজের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মো. নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করলেও ওপাশ থেকে কেউ না তোলায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এমএস/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি