ফেসবুক কমেন্ট: ছাত্রলীগ দু`গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৫
প্রকাশিত : ১৯:৪১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ফেসবুকে কমেন্টকে কেন্দ্র করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে ৫ জন শিক্ষার্থী। আজ বুধবার বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘষের্র ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রলীগ কর্মী মারুফ হাসান ফেসবুকে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তামান্না দোলার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল রানার অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্যের ক্ষুদেবার্তার স্ক্রিনশট দিয়ে বিচার চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়।
তারই প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে ছাত্রলীগ কর্মী অন্তর দে শুভ ও তার অনুসারীরা জুয়েল রানার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে তাকে মারতে উদ্যত হয়। ছাত্রলীগকর্মী কামরুল হাসান শিহাব বাধা দিতে আসলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার উপরও হামলা করে শুভর অনুসারীরা। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে নিরাপদ দূরত্ব সরিয়ে দেন। জানা যায় জুয়েল রানা ও শিহাব শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের অনুসারী।
তখন থেকেই বিবাদমান দুই গ্রুপের অনুসারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন, ঘটনার কিছুক্ষণ পর আবার শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন রকির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মী ও পিইএসএস বিভাগের অন্তর দে শুভ (শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-১৭), পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের মারুফ হাসান (শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-১৭), ফিসারিজ ও মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের ইসমে আজম শুভ (শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-১৭), একই বিভাগের মাহমুদুল হাসান সাকিব পেট্রলিয়াম ও মাইনিং ইজ্ঞিয়ারিং বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক খন্দকারের (শিক্ষাবর্ষ ২০১৪-১৫) উপর হামলা চালায় এবং এতে তিনি আহত হন। তারপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
তবে পরিস্থিতি শান্ত না হতেই সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের অনুসারীরা আশিক খন্দকারের নেতৃত্বে রহিত সহ প্রায় পনের জন শির্ক্ষাথী শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ইলিয়াস হোসাইন রকির উপর লাঠিসোঠা নিয়ে উপর্যপরি হামলা চালায়, এতে তিনি গুরুতর আহত হন, পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আহতরা হলেন শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ও শারীরিক শিক্ষা ও ক্রিড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের শির্ক্ষাথী ইলিয়াস হাসান রকি (শিক্ষাবর্ষ ২০১২-১৩), একই বিভাগের কামরুল হাসান শিহাব (শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-১৭), পেট্রলিয়াম ও মাইনিং ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক খন্দকার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৪-১৫), গণিত বিভাগের জুয়েল রানা (শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-১৭), ইংরেজি বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস রহিত (শিক্ষাবর্ষ ২০১৩-১৪)।
পুরো ঘটনাতেই দায়িত্বরত পুলিশ প্রশাসনের নীরব ভূমিকা দেখা যায়, এবং ঘটনার শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে, এতে ছাত্রলীগকর্মী রুহুল কুদ্দুস রহিত গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এস আই মাহবুব হাসানের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি লাঠিচার্জের বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং উর্ধতন কর্মর্কতার কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবেই চলছে, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, এই সুষ্ঠ কার্যক্রমকে ব্যহত করার জন্য একদল বহিরাগত অছাত্র সন্ত্রাসী পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীর উপর যদি কোন বহিরাগত সন্ত্রাসী হামলা করে তার বিচার করা হবে। আর শিক্ষার্থীর সাথে যদি কেউ খারাপ ব্যবহার বা ইভটিজিং করে থাকে এবং এর কোন লিখিত অভিযোগ আমি পাই এবং এর যদি কোন সঠিক প্রমান থাকে তাহলে সেটা আমি অবশ্যই ক্ষতিয়ে দেখবো এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নেব।
শেষে উপাচার্য আরও জানান, সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অরাজকতা শুরু হয়েছে তারই ফলস্বরূপ কুরাজনীতির এক মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পায়তারা চালাচ্ছে, যা কখনও হতে দেয়া যাবে না। আজকের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি জানান।
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শেখ মিজানুর রহমান বলেন, অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে প্রক্টর দপ্তর থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ।
টিআর/
আরও পড়ুন