ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

অব্যহতি দেয়া হচ্ছে রাবির সেই হল প্রাধ্যক্ষকে

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:৫২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক অধ্যাপকের বাসায় টিউশনি করাতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী।এঘটনায় সেই অধ্যাপককে অব্যহতি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান।

বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনের ভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে এই ঘোষণা দেন তিনি। 

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, তোমরা যে দাবি করেছো তা আমি দেখেছি। তোমাদের সেই দাবিগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে।আর যে ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার সঠিক বিচার করা হবে।এ সময় শিক্ষার্থীরা দুই ঘন্টার মধ্যে অধ্যাপক বিথীকা বণিকের পদত্যাগ দাবি করলে উপাচার্য বলেন,দুই ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রক্রিয়া আছে। সেই নিয়মানুসারে কাজ করা হবে। এ জন্য দুই-তিন দিন সময় দিতে হবে। 

এসময় শিক্ষার্থীরা না মানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হলো। কিন্তু এরজন্য একটু সময় দিতে হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেন।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আগামী রোববারের মধ্যে যদি অধ্যাপক বিথীকা বণিককে সব পদ থেকে অব্যাহতি না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

এর আগে সেই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।পরে বিক্ষোভ মিছিল করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সেখানে আন্দোরনরত শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের রুমে তালা লাগিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবর কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা, বিথিকা বনিকাকে প্রাথমিক স্টেটমেন্ট দেয়া, মেয়েটির পরিবারের কোন প্রকার চাপ না দেয়া, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার পদত্যাগ করা, কুরুচিপুর্ণ কথা বলেছে তার ক্ষমা চাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নেওয়া প্রতিটি হল, ডিপার্টমেন্ট সেল গঠন করা এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা লায়লা আরজুমান বানু বলেন, এ ঘটনার জন্য অভিযুক্তকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন।

আন্দোলনে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম তমাল বলেন, আমাদের এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছে। ওই মেয়ে সেই রাতে বিথীকা বণিকের বাড়িতেই ছিল। বিথিকা বণিক ওই হলের প্রাধ্যক্ষ। রাতে ম্যাম যখন হলে কোন একটা সমস্যার কথা বলে হলে আসতে চেয়েছে তখন ম্যাম তাকে নিয়ে আসেনি। একটা মেয়েকে যখন তিনি নিরাপত্তা দিতে পারেনি তাহলে হলের এতগুলো মেয়ের নিরাপত্তা কিভাবে দেবে? তাই আমরা অবিলম্বে বিথীকা বণিকের পদত্যাগ চাই। শুধু নিরাপত্তাই নয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উঠে এসেছে নানা অভিযোগ।

জানতে চাইলে আন্দোলনরত সেই হলের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিভিন্ন সময় ইলিগ্যালভাবে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা, হলের মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও বাজে মন্তব্য করাসহ অনেক অভিযোগ করে তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষর পদত্যাগ দাবি জানায় এবং সেই সাথে তার এহেন অসদাচারণের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।

এদিকে, প্রশাসন ভবনের সামনে অস্থান করে বিথীকা বণিকের পদত্যাগ দাবিতে দুই ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এসময় ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি করেন দুই ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে শাস্তি ও বিথীকা বণিকের পদত্যাগ চাই।

এর আগে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে স্লোগান দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করে। জোহা স্যারের পাঠশালায় ধর্ষকের ঠাই নাই ঠাই, ঘুমন্ত প্রশাসন জেগে উঠো, জেগে উঠো, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাগো রে জাগো মানুষ, মানুষ জাগো এমন স্লোগান দিতে থাকে।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগে শ্যামল বণিক নমের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর ধরমপুর এলাকার যোজক টাওয়ার থেকে অভিযুক্তকে আটকের পর নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় মামলা করেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা শেষে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়শোনা করেন। এদিকে শ্যামল বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শ্যামল বণিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক বিথীকা বণিকের ভাই।

ওসি হাফিজুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রী শ্যামল বণিকের আত্মীয়।মঙ্গলবার রাতে যোজক টাওয়ারের তৃতীয় তলায় শ্যামল বণিকের বোনের মেয়েকে পড়াতে যান ওই ছাত্রী। শ্যামল বণিকও ওই বাসায় থাকেন।আত্মীয়তার সূত্রে রাতে তিনি শ্যামলের বাসায় থাকেন। রাত ৩টার দিকে শ্যামল ভুক্তভোগীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।এসময় ভুক্তভোগী জাতীয় নিরাপত্তা সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

অধ্যাপক বিথীকা বণিকের দাবি, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। গত রাতে এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি হলে চলে আসি। বাসায় কী হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
কেআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি