ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১৯:৩৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২০:২৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগটির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোট সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। তারা যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানোয়ার সিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

পরিষদটির জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষক হয়ে একজন ব্যক্তি এমন কাজ করেছে এতে আমরা লজ্জিত। শিক্ষকরা এধরনের কাজ করলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। এ বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়ার কোনও সুযোগ নেই। যৌন হয়রানির এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, নিপীড়িত হওয়াটা নারীর জন্য কোনও লজ্জা নয়, এটি নিপীড়কের জন্য লজ্জার। যেই শিক্ষক এই কুকর্মে অভিযুক্ত তার শিক্ষক হওয়ার কোনও যোগ্যতাই নেই। তিনি শিক্ষক নন, তিনি একজন লম্পট। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এ বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা জানিয়েছেন, অভিযোগটি ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে।

ওই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিভাগে গত এক বছর ধরে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে লড়ে আসছিলেন তিনি। কোনও বিচার না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন ভুক্তভোগী। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ২৬টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ‘আত্মহত্যার’ও চেষ্টা করেন তিনি। গুরুতর অবস্থায় তাকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। 

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড় দিয়েছে। পরে দুপুরে তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।

লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী জানান, ২০১৮ সালে তিনি তার তৃতীয় পর্বের একটি কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তিনি কোর্স শিক্ষক অভিযুক্ত সানওয়ার সিরাজের শরনাপন্ন হন। সে সময় ওই শিক্ষক ছাত্রীটির ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন এবং যে কোনও সমস্যায় যোগাযোগ করতে বলেন। 

পরদিন শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ নিজেই ওই ছাত্রীকে ফোন করে পরীক্ষা কেমন হলো তা জানতে চান। সেদিন রাতে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ ছাত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে ঘোরাফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, হঠাৎ করে তার এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে আমি বিভাগে গিয়ে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা, তা জানতে চাই। তখন তিনি নিশ্চিত করেন, আইডি হ্যাক হয়নি। তিনি নিজেই ওসব মেসেজ পাঠিয়েছেন।

ছাত্রী আরও বলেন, ওই শিক্ষক আমার প্রতি তার শারীরিক আকর্ষণের কথাও জানান। তিনি আমাকে তার সঙ্গে সময় কাটানো ও ঘোরাঘুরির প্রস্তাব দেন। তার এমন ধারাবাহিক আচরণে আমি খুব বিব্রত বোধ করি। ফলে আমি বারবার আমার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করি। কিন্তু তিনি অব্যাহতভাবে আমাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন।

ওই ছাত্রী বলেন, পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষক আমাকে জামা উপহার, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ও স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার বাসায় রাত যাপনের প্রস্তাব দেন। তিনি চরম আপত্তিকর কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি তার কোর্সে আমাকে কম নম্বর দেন। আমি তার ধারাবাহিক এসব অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হই।

বিভাগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে নিজের যৌন হয়রানির বিষয়টি উত্থাপন করায় বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম তার ওপর ক্ষিপ্ত হন বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। 

ছাত্রীর অভিযোগ, তৎকালীন সভাপতি ওই সেমিনারে তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘এটি পাবলিক ফোরাম। একজন ছাত্রীর যে অভিযোগ, তা বিভাগের মানসম্মানের সঙ্গে জড়িত। তথ্য-প্রমাণসহ তাকে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। অন্যথায় আমি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’ 

ওই ছাত্রী বলেন, আমি যৌন হয়রানির তথ্য-প্রমাণ বিভাগের তৎকালীন সভাপতির কাছে হস্তান্তর করি। তিনি আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে এসব ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন। আর অভিযোগের গোপনীয়তা রক্ষা না করে তিনি বিষয়টি শিক্ষকদের মাঝে ছড়ান।

এ বিষয়ে বিভাগের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম বলেন, আমাকে কোনও ধরনের লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। আমার নামে যা বলেছে, তা বানিয়ে বলছে। আমি আমার বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলিনি। বরং তার কথা শোনার জন্য ওই সেমিনারের পরে তাকে খুঁজেছি, তার বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজের মন্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার বিভাগে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। দুপুর ও বিকালে বিভাগে গিয়ে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার ফোন নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।

বিভাগের বর্তমান সভাপতি নাসরিন সুলতানা বলেন, আমি ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। সে কিছু তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে আমি ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে হস্তান্তর করি।

এ বিষয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আখতার বলেন, অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
 
এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি