জবি ছাত্রী হলের উদ্বোধন নিয়ে শঙ্কা!
প্রকাশিত : ২০:০০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নির্মাণাধীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের কাজ সমাপ্তির মেয়াদ চার দফায় বাড়ালেও শঙ্কা দেখা দিয়েছে হলটির উদ্বোধন নিয়ে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হল হস্তান্তরের কথা থাকলেও নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না ঠিকাদারি কোম্পানি ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালে আটকে আছে একমাত্র ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, নির্মাণ কাজের তদারকি করছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ না, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করাচ্ছেও না। কাজ করছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। এখানে আমাদের কোনও হাত নেই। ডিসেম্বরে কাজ সমাপ্ত করে জানুয়ারি মাসে আমাদেরকে হলটি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। এখন আমরা জানুয়ারিতেই হল বুঝে পেতে চাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মন্থর গতিতে চলছে হল নির্মাণ কাজ। ১৬ তলা ভবনটির অভ্যন্তরীণ সিংহভাগ কাজ এখনও বাকি। পানির লাইন, স্যানিটেশন, ইলেকট্রনিক, লিফট, টাইলস, ভবনের বিভিন্ন কক্ষের রঙের কাজ সম্পূর্ণই বাকি আছে। বাকি রয়েছে অধিকাংশ ঝুলবারান্দার কাজ। ২য় থেকে ৬ষ্ঠ তলায় এখনও লাগানো হয়নি দরজা-জানালা।
দেখা যায়, মাত্র ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যেও কাজ করার তাড়া নেই। কেউ ঘুমাচ্ছেন, আবার অনেকে বসে আড্ডা দিচ্ছেন।
কর্মরত শ্রমিকরা জানান, পুরো ভবনে টাইলস ও রঙের কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কাজ এখনও অনেক বাকি রয়েছে। কোম্পানি আমাদেরকে সময়মত মালামাল সরবরাহ করে না, তাই আমরাও কাজ করতে পারছি না। কবে যে কাজ শেষ হবে সেই শঙ্কায় আছি আমরা। আমাদেরকে সময়মত মালামাল সরবরাহ করলে খুব দ্রুতই কাজ শেষ হয়ে যেত।
কনস্ট্রাকশন কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১৬ তলা ভবনের হলটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩৬ মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের ওপর। ১১১টি কক্ষবিশিষ্ট হলটিতে একটি লাইব্রেরি, একটি ক্যান্টিন, একটি ডাইনিং, প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট, আটটি গোসলখানা, ছাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য চারটি লিফট স্থাপন করা হবে।
এ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
দীর্ঘ এ সময়েও কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন আহমেদ দায় এড়িয়ে বলেন, আমাদের কাজের তদারকি করছে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। তাদের কাছে গত বছরের এপ্রিল মাসে এক্সটেনশন ফাইল পাঠিয়েছিলাম অথচ এখন পর্যন্ত কোন ফলাফল পাইনি। এ ফাইল পাশ না হলে কবে কাজ শেষ হবে সেটা বলা সম্ভব নয়। ফাইল পাশ হয়ে গেলেই আমরা কাজ শেষ করে ফেলব। আমরা যদি টাকাই না পাই তাহলে কাজ করব কীভাবে। টাকা পেলে লোকবল বাড়িয়ে মালামাল সরবরাহ করে তিন মাসের কাজ দুই মাসেও করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
এছাড়া কনস্ট্রাকশনের জন্য যে জায়গার প্রয়োজন হয়, সে পরিমাণ জায়গার অভাবে আমাদের কাজ শুরু করতে দেরী হয়েছে। টেন্ডার পরবর্তী সময়ে ডিজাইন পরিবর্তন করতে সময় লেগেছে। টেন্ডার মূল্য থেকে কনস্ট্রাকশন মূল্য বেশি হওয়ায় মন্ত্রাণালয় থেকে নতুন অনুমোদন আনতেও সময় লেগেছে। তবে নির্মাণ কাজ এবছর শেষ না হলেও আগামী বছরের শুরুতে শেষ হতে পারে বলে জানান।
এ বিষয়ে গত ডিসেম্বরে ছাত্রী হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম জানান, আমরা খুব দ্রুত কনস্ট্রাকশন কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি। কিন্তু ঠিকাদারি কোম্পানি তা আমলে নিচ্ছে না। এক্সটেনশন বাজেটের অজুহাতে কাজ না করে সময়ক্ষেপণ করছে তারা। আমাকে প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও কোন কাজ না করতে পেরে খুবই হতাশ। জানুয়ারিতে হলে ছাত্রী ওঠার কথা কিন্তু কাজের যে ধীরগতি তাতে এ সময়ে সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় আছি। কাজের শুরুতেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনিটরিং টিম কাজ করতো তাহলে হয়ত এমন দীর্ঘসূত্রিতা হত না বলেও জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার জানান, মূলত প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাজটা ধীরগতিতে চলছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হয়ে গেলেই দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই, কারণ এ প্রজেক্টটাই মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত। সাবস্টেশন, লিফটসহ অন্যান্য কাজেরও টেন্ডার হয়ে গেছে, প্রসেসিং চলছে। ফাইলটি অনুমোদিত হয়ে গেলে আমরা বেশি শ্রমিক নিয়োগ করে, রাত-দিন কাজ করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করব। আমরা আশাবাদি যে, ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে জানুয়ারিতে হলে ছাত্রী উঠাতে পারব।
এনএস/
আরও পড়ুন