আবরার হত্যার পরিকল্পনা হয় ‘আগেরদিন’
প্রকাশিত : ১২:৩৮, ১১ অক্টোবর ২০১৯
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্যাতনের পরিকল্পনা হয় আগেই। ঘটনার একদিন আগে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথন হয়। যেখানে আবরারকে পিটিয়ে হল ছাড়া করার নির্দেশ দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ও শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে গঠন করা ওই ফেসবুক গ্রুপে ঘটনার আগের দিন ৫ অক্টোবর (শনিবার) দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ১৬ তম ব্যাচকে মেনশন করে রবিন লিখেন, ‘১৭তম ব্যাচের আবরার ফাহাদকে মেরে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম, তোদের তো কোনো বিগার নাই। শিবির চেক দিতে বলছিলাম। দরকারে ১৬ ব্যাচের মিজানের সঙ্গে কথা বলিস। ও আরো কিছু ইনফো দিবে শিবির ইনভলমেন্টের ব্যাপারে।’ এ সময় ১৬তম ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনি ‘ওকে ভাই’ লিকে জবাব দেন।
পরদিন রোববার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে সবাইকে হল থেকে নিচে নামতে নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামন মনির। এই কথার সূত্র ধরে ইতিমধ্যে মিজানকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবররাকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান তানিম, বিল্লাহ, অভি, সাইফুল, রবিন, অনিক ও জিয়ন।
এরপর রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে মেসেঞ্জারের ওই গ্রুপে শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা লিখেন, ‘আবরার ফাহাদ কি হলে আছে? জবাবে শামসুল ও সজিব বলেন, ২০১১ তে আছে। এ কক্ষকেই থাকতেন অমিত সাহা।
রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকালের সঙ্গে অমিত সাহার একটি কথোপকথন পাওয়া যায়। যেখানে অমিত সাহা লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদরে ধরছিলি তোরা? জবাবে ইফতি লিখেন হ। পুনরায় অমিত প্রশ্ন করেন, বের করছস? জবাবে ইফতি পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘কী হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি? এবার অমিত লিখেন স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।
এবার ইফতি লিখেন, মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে। জবাবে অমিত সাহা লিখেন, ওওও. বাট তাকে তো লিগ্যালি বের করা যায়। পরে একটি ইমোজি পাঠান ইফতি। এরপর আর তাদের কোনো কথোপকথন পাওয়া যায়নি।
নির্যাতনের পর ভাইরাল হওয়া সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১২টা ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু ২০১১ নম্বর কক্ষের দিকে হেটে যাচ্ছিলেন। এর প্রায় ৭ মিনিট পর তিনি বেরিয়ে যান।
আবরারের ওপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, মনিরই পরে জেমি আর তানিমকে ফোন দিয়ে আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসতে বলে। এ সময় জেমি ও তানিম মোবাইলে আর মনির তার ল্যাপটপ আবরারের ফেসবুক প্রোফাইল চেক করে। সেখানে তারা দেখছিল কোথায় সে লাইক দেয়, কমেন্ট করে এগুলো বিষয়ে আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ভিতরে প্রবেশ করেই দেখি আবরার উপড় হয়ে শোয়ানো। তখন মনিরের কাছে জানতে চাই, কিভাবে এরকম হলো। তখন আকাশ উত্তর দেয়, অনিক ভাই একটু বেশি মারছে। তবে, আবরারকে নির্যাতনের খবর কেন কাউকে জানাননি, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি বিটু। তবে, হলে এরকম ঘটনা নতুন কিছু নয়, মাঝেমাঝে হয় বলে জানান ছাত্রলীগের এ নেতা।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে অমিতের সম্পৃক্ততা থাকা সত্যেও তাকে গ্রেফতার না করায় সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। পরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর চাপের মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার অমিতকে রাজধানীর সবুজবাগ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথনের প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। আমরা হত্যা সংশ্লিষ্ট সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি। কথোপকথনের বিষয়টিও যাচাই-বাছাই চলছে।
এদিকে, আটকদের মধ্যে ১৩ জন ১০ দিনের রিমাণ্ডে আছেন। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল অমিত সাহা ও আবরারের রুমমেট মিজানকে আটক করা হয়।
আটকদের ব্যাপারে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাউকে ছাড় নয়। অপরাধী যে দলেরই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আই/
আরও পড়ুন