নানামুখী সংকটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, দেখার কেউ নেই!
প্রকাশিত : ১৯:২৪, ২ নভেম্বর ২০১৯
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে চরম সংকটে পড়েছে। উপাচার্য, রেজিস্টার, ট্রেজারারসহ শীর্ষ ১০ থেকে ১২ পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক, প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
সাইন অথোরিটি না থাকায় আটকে আছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন। অর্থের অভাবে স্থগিত করা হয়েছে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষ স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষা। ঔষধ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং অর্থের অভাবে ঔষধ কিনতে না পারার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সেবা প্রায় বন্ধ হবার পথে। অর্থাভাবে বিআরটিসিকে সেপ্টেম্বরের বিল না দিতে পারায় নিয়মিত গাড়ি চলা নিয়ে সন্দিহান। সবমিলিয়ে উন্নয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এছাড়াও শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেমিস্টার ও ফাইনাল পরীক্ষা না হওয়ায় বাড়ছে সেশনজট। সংকট উত্তরণে সংশ্লিষ্টরা উপাচার্যসহ শীর্ষ পদে দ্রুত নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আন্দোলনের মুখে সাবেক উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক বিদায় নিলে গত পাঁচ মাসেও নিয়োগ হয়নি। কিছুদিন উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করা ট্রেজারার এ কে এম মাহবুব হাসান ৭ অক্টোবর মেয়াদ শেষ করেছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফজলুল হক ৩ অক্টোবর শেষ কর্মদিবস পার করেন। নারীঘটিত কারণে বরখাস্ত হওয়ায় রেজিস্ট্রারের পদও এখন শূন্য।
গত ৫ আগস্ট কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মাদ মুহসিন উদ্দিন মেয়াদ শেষ করেছেন। জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. হাসিনুর রাহমান তিন মাসের বেশি চিকিৎসা ছুটিতে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের একটিতেও এখন ডিন নেই। লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মাদ শাহাজুল ইসলাম চাকরি ছেড়েছেন।
এদিকে, চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৬টি অনুষদের অধীন ২৪টি বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা না হওয়ায় সংকট আরও প্রকট হয়েছে। আটকে রয়েছে সিলেবাস অনুমোদন দেওয়া, রেজাল্ট প্রকাশ, খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ, দ্বিতীয় পরীক্ষক ও বহিঃসদস্য নিয়োগসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এতে বছরের শেষ সময়ে প্রায় ৮০০০ শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এসব সংকটের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থী দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছেন। ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের ২০১৮ সালে মাস্টার্স শেষ করার কথা থাকলেও মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ কেবল অনার্স পরীক্ষা নিয়েছে। ফল কবে, তার ঠিক নেই। ২০১৪-১৫ সেশনেও একই অবস্থা।
সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, লোকপ্রশাসন, আইন, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগসহ অধিকাংশ বিভাগেই ছয় মাস থেকে এক বছরের বেশি সেশনজট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তর সূত্র জানায়, ৪৪ অধ্যাপকের ৪২টি এবং ৬৬ সহযোগী অধ্যাপকের সবকটি পদই শূন্য রয়েছে। ২৪১ প্রভাষকের জায়গায় আছেন মাত্র ৯৫ জন। আর সহকারী অধ্যাপক ৯৭ জন। প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য সবমিলে ১৯৪ শিক্ষক থাকলেও, তাদের ৪৪ জনই চিকিৎসা, মাতৃত্বকালীন ও শিক্ষা ছুটিতে। ফলে বর্তমানে উপস্থিত ১৫৬ শিক্ষক দিয়ে কোনওরকম খুঁড়িয়ে চলছে পাঠদান।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের নিজস্ব গাড়ি আটটি। পাঁচটি ডাবল ডেকার, দুটি একতলা গাড়ি বিআরটিসি থেকে ভাড়ায় চালানো হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের বিল দিতে পারেনি প্রশাসন। পরিবহন পুলের ব্যবস্থাপক মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘উপাচার্য না থাকায় বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মিত গাড়ি চালানো নিয়েই আমরা চিন্তায় আছি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর জানান, সাধারণত মাসের প্রথম দিন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়ে থাকে। কিন্তু উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া এখন কিছুই সম্ভব নয়। দায়িত্বে কেউ না থাকায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আটকে আছে। বর্তমান সংকটের বিষয়টি ইউজিসিকে অবহিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তানজীন হোসেন জানান, বর্তমানে মেডিকেল সেন্টারে সকল প্রকার ঔষধ শেষ হয়ে গেছে। উপাচার্য না থাকায় নতুনভাবে ঔষধ কেনার অর্থ পাচ্ছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান আবু জাফর মিয়া বলেন, এ সংকট চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার অগ্রগতি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। দ্রুত সংকট উত্তরণে উপাচার্যসহ শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এনএস/
আরও পড়ুন