যবিপ্রবিতে ন্যানো সার ও মৎস্য চাষে ন্যানো খাবার উদ্ভাবন
প্রকাশিত : ১১:৫৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
কৃষিকাজে ব্যবহৃত গতানুগতিক সারের বিকল্প ন্যানো সার এবং মৎস্য চাষে ব্যবহৃত বাজারের গতানুগতিক খাবারের বিকল্প ন্যানো খাবার উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একদল গবেষক।
কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাভেদ হোসেন খান ও তার শিক্ষার্থীরা এ গবেষণা করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং যবিপ্রবির নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ল্যাবরেটরি অব ন্যানো-বায়ো অ্যান্ড অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং (এনএএমই) গবেষণাগারে ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত সার ও মাছের খাবার মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগে সফলতা পেয়েছেন তারা।
ন্যানো সার ব্যবহারে বেশ কিছু সবজি চাষে যেমন ঢেড়স, মরিচ, লেটুস, বেগুন ন্যানো সার এবং বহুল পরিচিত তেলাপিয়া মাছসহ কিছু কার্প জাতীয় মাছে ন্যানো খাবারের ব্যবহার তাদের এই গবেষণায় সফলতা এনে দিয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জাভেদ হোসেন খান জানান, কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জন্য এক নতুন উদ্ভাবন যা আমাদের কৃষি ও মৎস্য শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
ন্যানো সার সম্পর্কে তিনি বলেন, বাজারের গতানুগতিক ব্যবহৃত ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশসহ যেসব সার কৃষকেরা জমিতে ব্যবহার করেন তার মূল সমস্যা হচ্ছে জমিতে অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ। যার ফলে পরিবেশের মাটি ও পানি দূষণ ঘটছে। অধিক ফলনের আশায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, সেই সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে অতিরিক্ত সার বৃষ্টির পানির সঙ্গে জলাশয়ের পানিতে মিশে পানি দূষণ ঘটায়। রাসায়নিক সারের পরিবেশগত এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে ন্যানো সার। আমাদের এই ন্যানো সার খুবই সামান্য মাত্রায় ফসলের জমিতে প্রয়োগ করলে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন পাওয়া যেতে পারে। ঢেড়স, মরিচ, লেটুস, বেগুনে খুব কম পরিমাণ সার যা বাজারের রাসায়নিক সারের তুলনায় খুবই কম প্রায় একশত ভাগের এক ভাগ জমিতে প্রয়োগ করলেই সমপরিমাণে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসল পাওয়া যায়।
যবিপ্রবির গবেষণাগারে উদ্ভাবিত এই ন্যানো সারে মূলত উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খনিজ উপাদানসমূহ যেমন লৌহ, জিংক, খনিজ লবনসহ উদ্ভিদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যা উদ্ভিদের গ্রহণ করার পর অতিরিক্ত পরিমাণ থাকলে সেগুলো যদি পনিতে গিয়েও মিশে তাহলেও পানির বাস্তুতন্ত্রের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না বরং এগুলো জলাশয়ের পানিতে মিশে মাছের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে কাজ করবে। আর ন্যানো সার প্রয়োগ করা উদ্ভিদের মধ্যে মানবদেহের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে।
ন্যানো সারের কণাগুলো অতি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে সারে কেন্দ্রে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং চারপাশ ঘিরে রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ অণু। মাঠ পর্যায়ে মরিচ গাছে ন্যানো সার প্রয়োগে করে উৎপাদিত মরিচের গুণগত মান ও পুষ্টিগুণ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ফসলের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ন্যানো সারের গাছের দৃঢ়তা অনেক বেশি হওয়ায় ঝড় বা বাতাসে নুইয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। তা ছাড়া স্ট্রবেরিতেও ন্যানো সার প্রয়োগ করে গবেষণা চলমান বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক।
মাছের ন্যানো পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার সম্পর্কে ড. জাভেদ হোসেন খান জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে মাছকে যেসব খাবার মূলত ট্যানারি শিল্প, হাস-মুরগির বিষ্ঠা ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় যাতে মাছের শারীরিক কাঠামো বৃদ্ধি হলেও আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে বিভিন্ন ভারি ধাতু যেমন লেড, মার্কারি, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ঢুকে পড়ছে। সম্প্রতি মাছের উচ্চ ফলনের আশায় অধিক পরিমাণে খাবার খাওয়ানোর ফলে মাছের গায়ে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত, দাগ ও শরীরের আকৃতির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যার অন্যতম কারণ হলো জেনেটিক বিশৃঙ্খলা। অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার খাওয়ানোর ফলে দেহে প্রয়োজনের চেয়েও অধিক পরিমাণ আমিষ জমা হচ্ছে যা আমাদের শরীরে প্রবেশের পর আমাদের শারীরিক পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করছে। কিন্তু উদ্ভাবিত ন্যানো ফিশ ফিড উল্লিখিত সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ দিবে এমনকি মাছ থেকে মানুষ অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও পাবে।
প্রকল্পের পরিচালক শিক্ষক ও গবেষক ড. মো. জাভেদ হোসেন খান আরও জানান, মাছের ন্যানো খাবার ও উদ্ভিদের ন্যানো সার আমরা মাঠ পর্যায়ে যদি ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে মাটি ও পানি দূষণও যেমন কম হবে, তেমনি খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ যেসব জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় তার থেকেও উপশম পাবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আনোয়ার হোসেন একজন বিশ্বমানের গবেষক মানুষ হওয়ায় তার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় আমাদের ন্যানো পর্যায়ের গবেষণা এগিয়ে যাচ্ছে।
একে//
আরও পড়ুন