হামলার ফুটেজ উদ্ধারে পুলিশের দারস্থ ঢাবি ভিসি
প্রকাশিত : ২২:১৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
ঢাবি ভিসি মো. আখতারুজ্জামান
ভিপি নুরের ওপর হামলার ঘটনায় ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) মো. আখতারুজ্জামান। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এদিন ঢাবিতে অধ্যয়নরত সন্তানদের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। স্মারকলিপি গ্রহণের পর তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন উপাচার্য। তবে ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থানের নিশ্চয়তা ও ছাত্রলীগের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে করা দুটি প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি তিনি।
এসময় ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা এ বিষয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি। একইসঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুরের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। এতে নুরসহ অন্তত ২৪ জন আহত হন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত নিজদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে গিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেন।
উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উপাচার্যের সামনে স্মারকলিপি পড়ে শোনান লেখক ও একটিভিস্ট রাখাল রাহা।
স্মারকলিপিতে ভিপি নুরের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করা হয়, আক্রান্ত ছাত্ররা আপনার প্রশাসনের সাহায্য প্রার্থনা করেছিল। কিন্তু আপনি ও আপনার প্রশাসন এ ঘটনা বন্ধ করার কোনওপ্রকার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো তাদেরই কটুকথা বলে বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে আক্রমণকারীদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। অতীতেও এ ধরনের নানা অভিযোগ আপনি ও আপনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হয়েছে, আপনি তার একটারও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করেছেন বলে আমরা দেখতে পাইনি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা হরহামেশাই বিভিন্ন প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু তারা আপনার কাছ থেকে কোনও প্রতিকার পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি সব শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকসুলভ নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক সর্বোচ্চ ও সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা। আমাদের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে আমাদের করের টাকায় আপনার বেতন-ভাতা সম্মানী পরিশোধ করা হয়। আমাদের সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনি আইনত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনেই আমরা আমাদের সন্তানদের আপনার অভিভাবকত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেছি। আপনি রাষ্ট্রীয় তহবিলের টাকায় বেতনভাতাপ্রাপ্ত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও কেন একটি দলীয় সরকারের কর্মকর্তার মতো আচরণ করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। দিনের পর দিন আপনার পক্ষপাতমূলক, অমানবিক আচরণে আমরা হতবাক, বিমর্ষ এবং উদ্বিগ্ন। আপনার এই আচরণ অপরাধীদের আরও অপরাধ করতে ধারাবাহিকভাবে উসকানি দিয়ে চলেছে বলে আমরা মনে করছি।
উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উপাচার্যকে বলা হয়, আমরা চলমান অবস্থার অবসান চাই এবং কেন আপনি ও আপনার প্রশাসন আমাদের সন্তানদের সঙ্গে এমন অশিক্ষকসুলভ আচরণ করছেন তার কারণ জানতে চাই।
স্মারকলিপি পড়া শেষে সাংবাদিকসহ উপাচার্যের কাছে নানা প্রশ্ন ও অভিমত জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ৷ উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীসহ অনেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে ছিলেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, সহকারী প্রক্টর বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলমসহ আরও কয়েকজন।
এনএস/
আরও পড়ুন