ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনা সংকটে অনলাইনে শিক্ষকতা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

মো আশরাফুজ্জামান

প্রকাশিত : ২২:২২, ২৭ এপ্রিল ২০২০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (বিডিইউ) এ যোগদানের পরদিন দুপুরে বিভাগীয় হেড স্যার ডেকে বললেন, মাননীয় উপাচার্য স্যার শিক্ষকদের সাথে অনলাইনে মিটিং করবেন। আপনারা সবাই জুম সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে নিন। আমার দশ বছরের চাকুরি জীবনের প্রথম আনুষ্ঠানিক অনলাইন মিটিং দিয়ে নতুন চাকুরি জীবন শুরু করলাম। এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত উপাচার্য স্যার আমাদের সাথে অনলাইনে এবং অফলাইনে মিটিং করে দিক-নির্দেশিনা প্রদান করছেন। এরকম একটি মিটিং এ স্যার আমাদের পরামর্শ দিলেন, যদি সম্ভব হয় একটা, দুটো করে সব কোর্সের লেকচার ভিডিও করে আমাদের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) এ ক্লাসের পূর্বে দেয়া দেয়া যায় কিনা? সেই সাথে আমাদের জিস্যুট আপ্লিকেশন ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন, যেটি আমাদের মাননীয় উপাচার্য  অধ্যাপক ড মুনাজ আহমেদ নূর স্যার, আমাদের ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আনলিমিটেড স্পেসসহ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছেন। সেই সাথে আমাদের জন্য সপ্তাহব্যাপী জিস্যুট আপ্লিকেশন ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে দিলেন। 

আমরা এলএমএস এ ক্লাসের পূর্বে কন্টেন্ট, লেকচার ও রিসোর্সসমূহ আপলোড করে ক্লাসে পাঠদান করছিলাম। ঠিক এরকম সময়ে সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে স্কুল, কলেজ এবং বিশবিদ্যালয়সমূহ বন্ধ ঘোষনা করা হল। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যাতে চলমান থাকে সেজন্য বন্ধের এক সপ্তাহের মাথায় আরেকটি অনলাইন মিটিং এ উপাচার্য স্যার আমাদের নির্দেশনা দিলেন, জিস্যুট এর গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করে গুগল মিট এ ক্লাস নেয়ার জন্য এবং তা রেকর্ড করে যারা মিস করবে তাদের সহ সকল শিক্ষার্থীকে রেকর্ডিং লিংক দিয়ে দেয়ার জন্য, যাতে শিক্ষার্থীরা পরে যেকোন সময় তা দেখে নিতে পারে। সেই সাথে ভিসি স্যার আমাদের সকল শিক্ষকের একটি করে ক্লাস ও দেখবেন বলে আশস্থ করলেন। 

প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অনলাইন ক্লাসে যে টপিক আলোচনা করব সে টপিক এর কন্টেন্ট গুগল ক্লাসরুমে আপলোড করে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিলাম। গুগল ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে ইনভাইট করলাম আমার ইন্ট্রোডাকশন টু এডুকেশন কোর্সের শিক্ষার্থীদের।  আমার দশ বছরের শিক্ষকতা ও গবেষনা জীবনের প্রথম অনলাইন ফুল ফরম্যাট এ আনুষ্ঠানিক ক্লাস শুরু হল এক চমৎকার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হল ৪৭জন শিক্ষার্থী। কিছু ওয়ার্মআপ সম্পন্ন করে এবং ক্লাস রেকর্ডিং এর অনুমতি নিয়ে সকাল ১১ টায় আমাদের ক্লাস শুরু করলাম একজন শিক্ষার্থীর করোনাকালীন অভিজ্ঞতা এবং এই সময়ে তার দায়িত্তসমূহ জানার মধ্য দিয়ে। তারপর একজন শিক্ষার্থীকে ফেস-টু-ফেস ক্লাসে সর্বশেষ যে টপিক আলোচনা করেছিলাম সে সম্পর্কে বলতে বললাম। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী যে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করেছে তাকে উপস্থাপন করতে বললাম। শিক্ষার্থীদের চমৎকার উপস্থাপনার পর তাদেরকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সোট অ্যানালিসিস সম্পর্কে আলোচনা করলাম। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরা বুজতে পারছে কিনা তা জানার জন্য প্রশ্ন করছিলাম। পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করে তাদেরকে অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে যে কলেজ থেকে পড়ালেখা সম্পন্ন করেছে সে কলেজের সোট বিশ্লেষন করতে বললাম নিজেদের পর্যবেক্ষন এবং ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তত্থ্যের ভিত্তিতে যেহেতু এখন বাইরে যাওয়া বা সাক্ষাৎকার নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রথম অনলাইন ক্লাস শেষ করলাম দারুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে। ক্লাস শেষে পুরো ক্লাস রেকর্ডিং শেয়ার করে দিলাম সকল শিক্ষার্থীর সাথে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট জমা প্রদান করে গুগল ক্লাসরুমে, যা সত্যিকার অর্থেই অভাবনীয়।   

সবচেয়ে আকর্ষনীয় ছিল দেশের সকল প্রান্ত থেকে (রাঙ্গামাটি, রংপুর, খুলনা, বগুড়া, ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে) সংযুক্ত হয়েছিল শিক্ষার্থীরা, আমি সংযুক্ত হয়েছিলাম টাঙ্গাইল থেকে। তবে মিস করছিলাম শিক্ষার্থীদের সাথে আই কন্টাক্ট করা। এছাড়া আরেকটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কিছু শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট এবং  বিদ্যুতের সমস্যার জন্য ক্লাস থেকে মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যদিও আবার কিছু সময় পর তারা জয়েন করেছে। নেট বাফারিং হওয়ার কারনে অনেকের কিছু সময় শুনতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সুবিধা হলো পরবর্তিতে যে কোন শিক্ষার্থী যে কোন জায়গা থেকে যে কোন সময় ক্লাসের ভিডিওটি দেখে নিতে পারবে। আরেকটি প্রতিবন্ধকতা ছিল শিক্ষার্থীদের নেট কেনা, পরের মিটিং এ উপাচার্য স্যার তার সমাধানও করে দিলেন। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান ইন্টারনেট ক্রয়ের অর্থ পদান করবেন বলে জানালেন এবং এই মিটিং এ উপাচার্য স্যার আমাদের আরেকটি পরামর্শ দিলেন, পরবর্তী ক্লাশে গুগল ডক এ কোলাবোরেটিব ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন আরো বাড়ানোর জন্য। পরের পর্বে অনলাইন ক্লাসের এই কোলাবোরেটিব ব্যবহার ও শিক্ষার্থীদের প্রেজেন্টেশনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। সবশেষে ধন্যবাদ দিতে চাই, মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড মুনাজ আহমেদ নূর স্যারকে আমাদের সার্বক্ষনিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে দেশের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করার জন্য। 

মো আশরাফুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।

আরকে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি