জার্মানিতে পড়তে আসার আগে যা জানা জরুরী
প্রকাশিত : ০১:৪৭, ১১ মে ২০২০ | আপডেট: ০২:০৭, ১১ মে ২০২০
জার্মান হলো আইডিয়ার দেশ, যাকে বলে ল্যান্ড অব আইডিয়াজ। ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এটা স্বর্গরাজ্য। ব্যবসা-প্রশাসনের দিক থেকে ও এগিয়ে। বিশ্বে যত নামিদামি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আছে তার শাখা জার্মানে আছে। অপার সম্ভাবনার এই দেশটিতে প্রত্যেক বছর অনেক শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করে থাকে। যেখানে স্বপ্ন, যেখানে অপার সম্ভাবনা, সেখানে কিছু কঠিন বাস্তবতা থাকতেই পারে। কঠিন বাস্তবাত গুলি জানা থাকলে সফল হওয়া সহজ। যারা উচ্চ মানের শিক্ষার জন্য কিংবা কম খরচে উচ্চা মানের শিক্ষার জন্য জার্মান যাবেন, বিমানে চড়ার আগেই কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো। তাহলে আগে ভাগেই মানুষিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যায়। নিশ্চিত সফল হওয়া যায়।
ভিসা
উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পড়তে আসার জন্য ভিসা পাওয়াটা একটু জটিলই হয়ে থাকে। অনেক কিছুদিন সময় হাতে রেখে ভিসার আবেদন করতে হবে। এবং জার্মানিতে আসার পর মাঝে মাঝেই যেতে হয় ‘আউসলান্ডারবেহ্যোর্ডে’ বা বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত সরকারি কার্যালয়ে।
অনুদানের আবেদন
যথাযথভাবে অনুদানের আবেদন করতে হবে। এই দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অনুদান এবং ফেলোশিপের ব্যবস্থা রয়েছে । যে বিষয়ে আপনি পড়তে যেতে যেতে চান সে বিষয়ে আপনি যদি মেধাবী হন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য পরিশ্রমে আগ্রহী হন, ,অনুদানের জন্য আপনি আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে ‘জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস’ বা ডিএএডি । তবে অনুদানের আবেদনটা অবশ্যই প্রফেশনালদের মতো হতে হবে।
টিউশন ফি
জার্মানের প্রায় সব জায়গাতেই শর্তসাপেক্ষে পড়াশুনা করতে টিউশন ফি ছাড়াই পড়াশুনা করা যায়। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রোগ্রামে আবেদন করে পড়তে পারেন টাকা ছাড়াই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি ,সরকার ট্যাক্সের টাকায় ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এবং কোর্স আছে আছে যেখানে সরকার ভর্তুকি দেয় না। যেখানে পড়তে গেলে আপনাকেট টাকা দিয়েই পড়তে হবে এবং কিছু কোর্স আছে সেইগুলিও টাকা দিয়ে পড়ে হয়। তাই মনে রাখতে হবে ‘স্টাডি এবরোড’ প্রোগ্রাম এবং প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা কিন্তু ফ্রি নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি পনেশ ইউরোর কাছাকাছি, তাই সেখানে কাজ করে নিজের টাকায় টিউশন ফি জোগার করাটা কঠিন হয়ে দাড়াবে।
সেই সাথে মনে রাখা উচিত ফ্রি পড়াশুনার জন্য ফান্ডেড কোর্সে অ্যাডমিশন পাবার জন্য আপনার অ্যাকাডেমিক রেকর্ড ভালো থাকতে হবে। টিউশন ফি দিয়ে জার্মানিতে পড়তে যাওআটা রিস্ক নেওয়া নেওয়ার মতো হয়ে যায়। জার্মান যাওয়ার আগে ভালো ভাবে পড়াশুনা করে ভালো রোজাল্ট অর্জন করুন। যাওয়ার পরে পার্ট টাইম কাজ কারার জন্য মানুষিক ভাবে এবং শারিরিক ভাবে নিজেকে তৈরি করুন।
কাজ
একজন বিদেশি শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসায় আইনগতভাবে জার্মানিতে সপ্তাতে ২০ ঘন্টার অথবা ১২০ দিন পূর্ণ দিবস অথবা ২৪০ দিন অর্ধদিবস বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন। এর বেশি কাজ করলে ফাঁকি দেওযার সুযোগ নেই, কোথায় ভুল তথ্য দেওয়ার পশ্নই আসে না। যদি মনে করেন দেখার কেউ নেই তবে ভুল করবেন। হিতে বিপরীত হবে। যা কাজ করবেন সবই রেকর্ড হবে, বাদ যাবেনা এক মিনিটও । কাজ বেশি করলে ট্যাক্স অফিস , ইন্সুরেন্ট অফিস এমনকি ভিসা অফিসেও যাওয়া লাগতে পারে। হতে পারে ভিসার জটিলতা। আর সবচয়ে বেশি যেই ক্ষতিটা হবে সেটা হলো আপনার পড়াশুনার ক্ষতি। তাই বেশি কাজের মানুষিকতা রাখা যাবে না
জার্মানের যেখানেই আপনি থাকনে না কেনো দেখবেন আপনার আশপাশে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে গবেষণা সহকারি হওয়ার কিছু সুযোগ থাকে। শুধু সঠিকভাবে নক করতে পারলে আপনি ও সহকারী হতে পাবেন।
গাইড
আপনার কাছে মনে হতে পারে, জার্মানের সবাই রোবট গতিতে চলছে, সবাই অনেক ব্যস্ত। তাই জার্মানের বিমান বন্দরে নামার পর থেকেই আপনার স্ট্রাগল শুরু। এই ব্যস্ত লোকদের কাছ থেকেই আপনাকে জানতে হবে, কোথায়, কিভাবে যাওয়া কিংবা প্রয়োজনীয় যা কিছু, তখনই আপনি বুঝে যাবেন, জার্মানে থাকাকালীন সময়ে ক্লাস, পার্ট টাইম কাজ, মার্টেট সহ অন্যান্য বিষয়ে এই ব্যস্ত লোকদের থেকে জেনে নেওয়া কেমন হবে। নিজের গাইড নিজেই হতে হবে, নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে হবে। টেকনোলজি বেইজড জার্মানে হাতে একটা স্মার্ট ফোন আর তাতে যতি ইন্টান্যাট কানেকশন থাকে তাহলেই সমস্যা সমাধান। মোবইলের অ্যাপ এ নির্দিষ্ট করুন আপনি কোথা থেকে কোথায় যাবেন, সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পেয়ে যাবেন, কিভাবে যেতে হবে, কথন , কোথা থেকে, কত নম্বর বাস অথবা ট্রেনে আপনাকে উঠতে হবে আর টিকিট কিভাবে কোথা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আপনার গন্তব্য যদি কাছে হয় তবে তো হাটতে হাটতেই চলে যেতে পারবেন।
পড়াশুনা ও পরীক্ষা
প্রথম ক্লাসের দিনই আপনি অবাহ হয়ে যেতে পারেন, আপনার মনে হতে পারে আলোচ্চ কোর্সটা আজকেই সৃষ্টি হয়েছে যার প্রথম শিকার আপনি। আপনি মনে মরতে পারেন শিক্ষক ভাবছে আপনার কাছে এই সব কঠিন পড়া নগ্য বলে গন্য হচ্ছে। সেখানে পাশ করার জন্য পড়াশুনা করায় না, শেখার আগ্রহ তৈরি করতেই পড়ায়। নিয়মিত, বই , অনলাইন, জার্নাল পড়তে হবে। প্রথম সেমিস্টারের পর যখন সব স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকবে তখন বুঝবেন আপনি কি অর্জন করছেন। চেষ্টা করবেন গ্রুপ স্টাডি করতে, গ্রুপ স্টাডি বেশ কার্যকর উপায়।
জার্মানিতে পড়াশুনার পদ্ধতি অন্য দেশের থেকে সর্ম্পুন আলাদা রকমের। এই দেশে পড়াশুনার ব্যপারে আপনি স্বাধীন ।ক্লাসে কিংবা পরীক্ষায় যদি অনুপস্থিত থাকেন। কেও কিচছু বলবেনা, নির্দিষ্ট সময়ের পারে কর্তৃপক্ষ মনে করবে আপনি অন্য কিছুতে ব্যস্ত আছেন। যাওয়া না যাওয়া যেমন আপনার ইচ্ছে, ঠিক তেমনটি ভাবে আপনার প্রয়োজনে আপনাকেই দৌড়াতে হবে। এখানের ক্লাস, পরীক্ষা আলাদা সার্ভারের পদ্ধিতিসহ যাবতিয় বিষয়গুলো অরিয়েন্টশনের দিনই আপনাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, বুঝা না বুঝা আপনার দক্ষতা। এক কথায় মনে রাখতে হবে এখানের সাবই অনলাইন বেইজড, এবং এর সবই আপনার হাতে নিয়ন্ত্রিত। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের আগে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠান আপনার পাশ-ফেল ঘোষনা করে। অন্যথায় পরীক্ষা বাতিল বলে গন্য হবে, আবারও পরীক্ষা দিতে হবে। এই সব ঝামেলা থেকে বাঁচতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শুরুর দিন থেকেই প্রশ্ন করে হলেও সব জেনে নিতে হবে। এখানে পড়াশুনার ব্যপারে নিজেকে নিজেরই সহায়তা করতে হবে। কোথায় কোন ক্লাস হচ্ছে কিংবা কোন প্রোগ্রাম চলছে তার খোঁজ রাখার দায়িত্ব আপনার৷ কনফিডেন্স আপনার আছে। শুধু সাহস করে এগিয়ে যাওয়া। কাজেই শুরু থেকেই চেষ্টা করুন প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে। চাকরি বাকরির জন্য না হোক অন্তত অ্যাকাডেমিক কাজে আসবে।
কোথায় থাকবেন
এই দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্ষিার্থীদের আবাসনের ব্যাবস্থা রাখে, ঐব্যবস্থা আপনার পছন্দ না ও হতে পারে। আপনি সেখানে থাকবেন কি না আপনার ই্চেছ। সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে অনলাইনেই জেনে নিতে পারেন বাসার খোঁজ। যেখানেই থাকেন না কেন, যদি জার্মানদের সঙ্গে থাকনে তবে খুব তাড়াতাড়ি জার্মান ভাষা শিখতে পারবেন। শুধু মাথায় রাখতে হবে আপনি এখানে আসছেন সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিতে । অল্প কয়েকটা বন্ধু বানাতে হবে। মিশতে হবে অবশ্যই কোয়ালিটি বুঝে।
ভাষা
বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধমে পড়ার ব্যবস্থা করেছে, বড় শহড়ে জার্মান ভাষা ছাড়াও সব কাজই করা যায়। কিন্তু জার্মান ভাষা বলতে পারলে অনেক সুবিধা, যদি কিছুটা ভাষা জানেন তারপরও জীবনযান আরো সহজ হয়ে যায়। আর পড়া শেষ করে যদি জার্মানেই চাকড়ি করতে চান তাহলেতো জার্মান ভাষা জানা অত্যান্ত জরুরী। জার্মানিতে চলাচল জার্মান ভাষা জানাটা অনেক ভালো কাজে দিবে । যদি পার্ট টাইম জব করতে চান তাহলে সেটা আরো বিশি করে অনুভব করবেন। জার্মানের প্রায় সব ইউনিভার্সিটিতে পয়সা ছাড়াই ভাষা শিখতে পারবেন। ভাষার সার্টিফিকেট জার্মানির সব জায়গায় গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
কপি রাখুন
এখানে কাজের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে চিঠি। সেজন্য নিজের নামে একটা লেটার বক্স রাখতেই হবে। অন্যথায় কখন আপনার নামে ভিসা অফিসের ডাক চলে আসবে বলা মুশকিল। ইন্স্যুরেন্স থেকে শুরু করে যাবতীয় চিঠি যেমন- স্যালারি রিসিপ্ট,ব্যাংকের টাকা উত্তলনি কার্ড, ময়লার বিল- সব ধরণের লেটার জমা করাই শ্রেয়। কখন কোন কাজে দেখাতে হবে বলা মুশকিল। এখানে ছাত্র অবস্থায় নিয়মিত চিঠি পাবেন। সঠিক কাজ হবে সব চিঠি জমা করে রাখা, চিঠির উত্তর অবশ্যই দেওয়া। বাসার সামনে ময়লা রাখা যাবেনা এর জন্যও আপনি চিঠি পাবেন।
আপনি একা নন
শিক্ষার্থী হিসেবে জার্মানিতে পৌছার দিন থেকেই অনেক কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু মনে করবেন না আপনি একাই বুঝি এত পরিশ্রম করছেন। আর বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার আগেও অনেকই আপনার মতোই, কিংবা আপনার থেকেও বেশি পরিশ্রম করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাই আপানার সমস্যা নিজেই সমাধান করতে শিখুন। সমস্যা সমাধানে জন্য বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সহায়তা নিতে পারেন।
থাকবেন, নাকি চলে যাবেন?
প্রথম দিকে জার্মানে থাকা আপনার কাছে বেশ কঠিন মনে হতেও পারে, কিন্তু ধিরে ধিরে আপনি শিখে যাবেন, অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, জার্মানের উচ্চ শিক্ষা ভালোমানের চাকড়ি মোট কথায় নিরাপদ সুন্দর একটা জীবনের বিবেচনায় আপনি জার্মানে থেকে যেতে চাইবেন, সময় নিয়ে ধিরে সু্স্থে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ডিডাব্লিউ,
এস ইউ এ
আরও পড়ুন