যেভাবে হারিয়ে গেলেন এই লাস্যময়ী
প্রকাশিত : ১২:২৯, ২১ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১২:৩২, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
আদর্শ মেয়ে থেকে কর্তব্যপরায়ণ পুত্রবধূ। ছোটপর্দায় সবরকম ভূমিকাতেই তিনি কৃতকার্য। সেখান থেকে বড় পর্দার নায়িকা হয়েছিলেন। কিছু ছবিতে অভিনয় প্রশংসিত হওয়ার পরেও কীভাবে যেন মিলিয়েই গেলেন লাস্যময়ী প্রাচী দেশাই।
প্রাচীর জন্ম গুজরাটের সুরাটে, ১৯৮৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। তাঁর বাবা নিরঞ্জন ছিলেন অধ্যাপক। মা, অনিতা শিক্ষিকা। প্রাথমিক পড়াশোনা সুরাটের স্কুলেই। তার পরের গন্তব্য ছিল পঞ্চগনির সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল।
বিএ পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন পুণের সিংহগড় কলেজে। কিন্তু অভিনয়ের কেরিয়ারের জন্য তাঁর কলেজপাঠ অসমাপ্তই থেকে যায়। কলেজে পড়ার সময় একটি অভিনয়ের ওয়ার্কশপে যোগ দেন প্রাচী। খবর পান, বালাজি টেলিফিল্মস অডিশন নিচ্ছে তাদের ধারাবাহিকের জন্য। তিনি অডিশন দেন এবং মনোনীত হন একতা কাপূরের ‘কসম সে’ ধারাবাহিকের জন্য।
‘কসম সে’ ধারাবাহিকে রাম কপূরের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন ‘বাণী’র চরিত্র। দর্শকদের খুব কাছের চরিত্র ছিল এটি। তবে ‘কসম সে’ ধারাবাহিকের মাঝপথে চিত্রনাট্যে একটা বড় পরিবর্তন হয়। বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয় চরিত্রদের। সে সময় প্রাচী ইউনিট ছেড়ে দেন। কারণ, ২০ বছর বয়সে তিনি চাননি পর্দায় ১৭-১৮ বছর বয়সি সন্তানের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে।
এর পর প্রাচীকে দেখা গিয়েছিল ‘ঝলক দিখ লা-যা’ শো-তে। সেখানে তিনি নিজের চেনা ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে অন্য চেহারায় ধরা দিয়েছিলেন। কেরিয়ারের প্রথম থেকে একতা কাপূরের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা। একতা কাপূরের পার্টিতে প্রাচী ছিলেন নিয়মিত মুখ।
ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় লাফ দেওয়ার সময় একতা কাপূরের হাতেই তাঁর গ্রুমিং হয়েছিল। একতার আত্মীয় অভিষেক কাপূরের ছবি ‘রক অন’-এ সুযোগ পান প্রাচী। তাঁর নাম প্রস্তাব করেন একতাই। ফরহান আখতার, অর্জুন রামপালের সঙ্গে ‘রক অন’-এ স্ক্রিন শেয়ার করেন প্রাচী। বক্স অফিসে সুপারহিট ছবিটি জাতীয় পুরস্কারও পায়। ছবির জগতে পরিচিতি পান প্রাচী। এর পর ‘লাইফ পার্টনার’ ছবিতে তিনি তুষার কাপূরের বিপরীতে অভিনয় করেন।
প্রাচীকে আবারও বড় ব্রেক দেন একতা। তাঁর হোম প্রোডাকশনের ছবি ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’-এ অভিনয় করেন প্রাচী। সাতের দশকের রেট্রো লুকে ইমরান হাশমীর বিপরীতে প্রাচীর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
এরপর অজয় দেবগণের সুপারিশে প্রাচী অভিনয় করেন ‘বোল বচ্চন’-এ। প্রতিটি ছবিতে নিজের ইমেজ ভাঙতে ভালবাসতেন প্রাচী। রোহিত শেঠী পরিচালিত এই কমেডি ছবির শ্যুটিংয়ের বড় অংশ ছিল রাজস্থানে। ছবিতে ছিলেন অভিষেক বচ্চন এবং আসিনও।
এই ছবির সময় প্রাচীর ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন রোহিত। সে সময় ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে রোহিতের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। শ্যুটিংয়ের বাইরে রাজস্থানে শুধু শপিং বা ডিনারই নয়। মুম্বাই ফিরেও একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন দু’জনে। তবে প্রকাশ্যে একসঙ্গে আসতেন না। সম্পর্ক লুকিয়ে রাখতেন সংবাদ মাধ্যমের কাছেও।
‘মেন্টর’ একতা কাপূরের বদলে প্রাচী পেয়ে গিয়েছিলেন ‘গডফাদার’ রোহিতকে। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরে একতার সঙ্গে প্রাচীর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়। ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’ ছবিতে প্রাচীর বদলে একতা নেন সোনালী বেন্দ্রেকে।
তবে বলিউডে কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে নারাজ ছিলেন রোহিত শেঠী। তাঁর উদ্যোগে ফের একতা-প্রাচী সম্পর্ক জোড়া লাগে। আবার এও শোনা যায় যে, নিজের স্বার্থেই একতার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করে নিয়েছিলেন প্রাচী। কারণ একতার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে তিনি ছবিতে সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
‘বোল বচ্চন’-এর পরে ‘আই মি অউর মেঁ’ এবং ‘পুলিশগিরি’ ছবিতে অভিনয় করেন প্রাচী। কিন্তু দু’টি ছবিই ব্যর্থ হয়। ‘সিঙ্ঘম রিটার্নস’-এ অবশ্য প্রাচীর অভিনয়ের কথা ছিল প্রথমে। কিন্তু এই ছবিতে অজয়ের সুপারিশে নেওয়া হয় করিনা কাপূরকে।
২০১৩ সাল নাগাদ রোহিত-প্রাচীর বিচ্ছেদ নিয়ে খবর আসতে থাকে। কারণ দু’জনের পরিবারে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল। এর পর রোহিত ফিরে যান স্ত্রী ও দুই সন্তানের কাছে। প্রাচী আবার ঘুরেফিরে চলে আসেন তাঁর আগের জায়গায়।
এবার ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য ভরসা ছিলেন একতা কাপূরই। তিক্ততা ভুলে আবারও একতা পাশে দাঁড়ান প্রাচীর। সুযোগ দেন ‘এক ভিলেন’ ছবিতে। এই ছবিতে একটি আইটেম নাচে অংশ নেন প্রাচী। তবে এই নাচে প্রাচীর লুক ছিল যথেষ্ট বিতর্কিত।
অভিযোগ, প্রাচীকে এই নাচের জন্য সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করতে বলেছিলেন কস্টিউম ডিজাইনাররা। শুনেই নাকি ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রাচী। রাগ করে নিজেকে বন্দি করে নেন ভ্যানিটি ভ্যানে। শেষে একতা কাপূর তাকে বোঝানোর পরে প্রাচী রাজি হন। তিনি বুঝতে পারেন- চিত্রনাট্য ও চরিত্রের দাবিতে তাঁকে ওই লুকে হাজির হতে হবে। ফলে ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ লুকের বাইরে লাস্যময়ী চেহারায় ধরা দিলেও প্রাচীর এই লুক চিহ্নিত হয় বিতর্কিত বলে।
এর পর প্রাচী ধীরে ধীরে নিজের লুক পাল্টে ফেলেন। স্বল্পবাসে সাহসী মেকআপে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন। শোনা যায়, সে সময় তিনি নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অস্ত্রোপচারও করিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাচী সে সব দাবি অস্বীকার করেন।
২০১৬ সালে একতা কাপূর ‘আজহার’ ছবিতে প্রাচীকে সুযোগ দেন। কিন্তু দর্শক এই ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন। ফলে ছবিতে প্রাচীর অভিনয় সকলের অগোচরেই থেকে যায়। এই সময় বোন এষা দেশাইকেও ইন্ডাস্ট্রিতে এনেছিলেন প্রাচী। কিন্তু ছবির মাঝপথেই অভিনয় ছেড়ে দেন এষা। তাঁর অভিযোগ ছিল, অভিনয় করলে তাঁর বিবাহিত সাংসারিক জীবনে ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।
২০১৬ সালে ‘রক অন টু’-এ অভিনয় করেন প্রাচী। কিন্তু এই ছবিটি সুপারফ্লপ হয়। ছবির নির্মাতার অভিযোগ, প্রাচী তাঁর অভিনীত চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেননি। এরপর ‘কার্বন’ নামে একটি শর্টফিল্মে অভিনয় করেছিলেন প্রাচী। তার পর বিনোদন দুনিয়া থেকে তিনি উধাও হয়ে যান।
গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ের চেষ্টা করছেন প্রাচী। কিন্তু সেখানেও তাঁর কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ থেকে সাহসী লুকে ধরা দেওয়ার পরেও তাঁর কেরিয়ারে বাড়তি কোনও গতি যোগ হয়নি। সাড়া জাগানো শুরুর পরেও বিস্মৃতির আড়ালেই চলে যেতে হলো নিষ্পাপ সৌন্দর্যের এই নায়িকাকে। সূত্র- আনন্দবাজার।
এনএস/