ভারতে পদ্মাবতী ছবির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
প্রকাশিত : ২৩:০০, ১৩ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৪:২৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৭
ভারতে ৭০০ বছর আগের চিতোরের রানী পদ্মিনীর জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে `পদ্মাবতী`। এ চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তুমুল প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
আগামী ১ ডিসেম্বর ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে এই ছবির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতারাও এই দাবিতে গলা মিলিয়েছেন।
রাজপুতানার ইতিহাস থেকে জানা যায়, দিল্লির শাসক আলাউদ্দিন খিলজীর কবল থেকে রক্ষা পেতে রানী পদ্মিনী ১৬,০০০ নারীকে নিয়ে চিতায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কিন্তু পদ্মাবতী সিনেমায় তাঁর সেই মর্যাদা ও আত্মত্যাগকে খাটো করা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি।
বলিউডের নামী পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানশালীর বিগ বাজেট ছবি পদ্মাবতী মুক্তি পাওয়ার কথা দিন-কয়েক বাদেই - কিন্তু ইতোমধ্যেই এই ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রাজস্থানের গণ্ডী ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের নানা প্রান্তে।
রোববার গুজরাটের সুরাট-গান্ধীনগরে লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হয়েছে পদ্মাবতীর বিরুদ্ধে, হরিয়ানাতে বিজেপির ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা বলছেন, এই ছবি মুক্তি পেলে রাজ্যে সমস্যা হবে।
রাজপুত কার্নি সেনা নামে যে সংগঠন এর আগে ছবির শুটিংয়েও বাধা দিয়েছিল, তাদের প্রতিষ্ঠাতা লোকেন্দ্র সিং কালভি জানাচ্ছেন, "যে কোনোভাবে এই ছবির মুক্তি রুখতে চাই আমরা। ইতিহাসকে বিকৃত করার যে কোনো চেষ্টা আমরা আটকাব, আমরা বেঁচে থাকতে আমাদের মেয়ে-বোনদের অমর্যাদা কিছুতেই হতে দেব না।"
গুজরাটে ভোট আসন্ন, সেই রাজ্যের রাজপুত ভোটারদের কথা মাথায় রেখে বিজেপিও উসকানি দিচ্ছে পদ্মাবতী-বিরোধী এই বিক্ষোভে।
এই সিনেমাটি নিয়ে প্রধান আপত্তি হল, সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর সঙ্গে রানী পদ্মিনীর মুখোমুখি কখনও দেখাই হয়নি - অথচ ছবিতে নাকি তাদের মধ্যে একটি স্বপ্নদৃশ্য রাখা হয়েছে।
এক্ষেত্রে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালির সাফাইয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
মি বানশালি ভিডিও বার্তা পোস্ট করে পর্যন্ত বলেছেন, "ভুল বোঝাবুঝির প্রধান কারণটাই হল এই তথাকথিত স্বপ্নদৃশ্য - অথচ আমি বারবার বলেছি, লিখিত প্রমাণও দিয়েছি যে এমন কোনো দৃশ্য ছবিতেই নেই। বিশ্বাস করুন, ছবিটা আমি খুব দায়িত্ববোধ নিয়ে বানিয়েছি, রাজপুতদের মান-মর্যাদার দিকে দৃষ্টিও দিয়েছি।"
এদিকে ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্রের `ঘুমর` গানটি - কিন্তু সেখানেও কেন রানীকে ঘোমটা ছাড়া দেখা যাচ্ছে, তা নিয়েও নতুন করে আপত্তি তুলছেন অনেকে।
জয়পুরের রাজকন্যা ও বিজেপি নেত্রী দিয়া কুমারী যেমন পরিষ্কার বলছেন, "বানশালির কথায় আমাদের আস্থা নেই, যদি একটি কমিটি তৈরি করে তাদের আগাম ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলেই কেবল তার কথা আমরা বিশ্বাস করব। রানী পদ্মিনীকে অন্যভাবে দেখানো হলে, কোনো ফ্যান্টাসি করা হলে তা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।"
বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি অবশ্য এই বিতর্ককে কিছুটা লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
তার যুক্তি ছিল, "আমি ফিল্মকে ফিল্মের মতো করেই দেখি, ইতিহাসের দৃষ্টিতে বড় একটা দেখি না। আমি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়েও ছিলাম, আমি বিশ্বাস করি যেটা পছন্দ সেটা দেখলেই হল, যেটা পছন্দ হচ্ছে না সেটা না দেখলেই হয়।"
কিন্তু ভারতে পদ্মাবতীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এখন এই সরল যুক্তি আর মানতে প্রস্তুত নয়।
সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিটিকে রুখে দেওয়া এখন রাজপুত মর্যাদা রক্ষার সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে গুজরাটের আসন্ন নির্বাচন।
সূত্র:বিবিসি বাংলা।
এম/ডব্লিউএন