ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘অন্তর জ্বালা’ মানুষের মনের জ্বালা মেটাবে: জয় চৌধুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২০:০১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

এফ আই মানিকের ‘এক জবান’ দিয়ে চলচ্চিত্রে পথ চলা শুরু করেন নায়ক জয় চৌধুরী। এরপর আজব প্রেম, হিটম্যান, ক্ষণিকের ভালোবাসা, চিনিবিবি, ভালোবাসি কতো বুঝাবো কেমনেসহ একের পর এক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। পরিশ্রমী এ নায়কের কাজের প্রতি রয়েছে সীমাহীন ভালোবাসা। ১৫ ডিসেম্বর রিলিজ হচ্ছে তার অভিনীত ছবি ‘অন্তর জ্বালা’। আলোচিত এ ছবির পেছনে ব্যয় করেছেন দীর্ঘ সময়। করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় জয় চৌধুরী। জানান, ছবির পেছনের গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আউয়াল চৌধুরী।    

ইটিভি অনলাইন: ‘অন্তর জ্বালা’র গল্পটা কি নিয়ে? কেন এত আলোচনা?

জয় চৌধুরী: ‘অন্তর জ্বালা’ হলো একটা পরিবারের ভালোবাসার গল্প। প্রত্যেকটা পরিবারেই দুঃখ কষ্ট ভালোবাসা থাকে। মা বাবা ভাই বোনের একটা ভালোবাসার বন্ধন থাকে। যা কেউ ভাঙতে পারে না। এই ছবির পরিচালক মালেক আফসারি একটি পরিবারের গল্পকেই তুলে এনেছেন। যেখানে ছোট বোন আছে, ভাই আছে, সংসারে আছে নানা টানাপোড়েন। একজন বাবার কষ্ট আছে যা তিনি কাউকে বলতে পারেন না। একজন মায়ের ভালোবাসা সন্তানের জন্য কতটুকু হতে পারে সেটাই দেখানো হয়েছে। একজন বাবা কতটা সৎ হতে পারে সেটাই দেখানো হয়েছে। এ ধরণের একটি পরিবারের আমি হলাম মেঝ ছেলে। আর জায়েদ ভাই বড় ছেলে। এই সিনেমায় দর্শক দেখতে পাবে একজন ভাইয়ের প্রতি আরেকজন ভাইয়ের অকৃত্তিম ভালোবাসার নমুনা।

ইটিভি অনলাইন: আপনারা ঢাকা এবং গ্রামের লোকেশনে টানা শুটিং করেছেন, সেখানে কোনো সমস্যার কি মুখোমুখি হয়েছেন?

জয় চৌধুরী: আমরা শুটিং এ কাজ করতে গিয়ে নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হই। যখন ফিরোজপুরে গ্রামের লোকেশনে কাজ করি, লোকাল জায়গা হওয়ায় সেখানে অনেক লোকজনের ভিড় থাকতো। এটা কাজের ক্ষেত্রে অনেক বড় সমস্যা। সেখানে চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে পুলিশ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না। এতো ঝামেলার মধ্যেও ফিরোজপুরে একটানা ৫২ দিন আমরা শুটিং করেছি। তারপর ঢাকায় এসে ৬২ দিনের মতো শুটিং করি।           

ইটিভি অনলাইন: …তাহলে শুটিং এ বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে?

জয় চৌধুরী: অভিজ্ঞতা আর কি বলবো। এই ছবির জন্য যা করেছি আগামী দিনে কোনো ছবির জন্য এত পরিশ্রম হবে কিনা সন্দেহ আছে। মালেক আফসারি সময় নিয়ে কাজ করেন। তিনি প্রত্যেকটা শট এর জন্যই সময় নেন। যতক্ষণ পারফেক্ট না হচ্ছে ততক্ষণ অপেক্ষা করেন। তার পছন্দ না হলে তিনি সিকোয়েন্স করেন না। এমনকি একটা শটও নেন না। পরিপূর্ণ এরেজমেন্ট ছাড়া তিনি কাজে হাত দেন না। তার কাছ থেকে আসলে অনেক কিছু শেখার আছে। শুটিং এর একটা অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। আমাদেরকে একটা ইটের ভাটায় কাজ করতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে পরিবেশটা আমাদের জন্য উপযুক্ত ছিল না। সেখানে অনেকে ব্যাথা পেয়েছে। আমিও পেয়েছিলাম। এরপর ঢাকাতে একটা ফাইটের দৃশ্যে শুট করতে গিয়ে আমি বেশ আঘাত পাই। মহাখালী টাঙ্গাইলের বাস স্ট্যাণ্ড এ শুটিং হয়। ওখানে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। একটানা পাঁচ দিন শট নিয়েছি। অনেক লোকজনের সমাগম ছিল। র‌্যাব পুলিশ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় ফাইটের একটা শট নিতে গিয়ে আমার পায়ের নখে মারাত্বক আঘাত পাই। পরে সেটা পঁচে পর্যন্ত গিয়েছিল। অনেক দিন এটা নিয়ে কষ্ট করতে হয়েছে।

ইটিভি অনলাইন: কাজের ক্ষেত্রে অন্য আর্টিস্টদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল?

জয় চৌধুরী: খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমার সহ-নায়িকা মৌমিতা মৌ পুরো ছবিতে অনেক কো-অপারেটিভ ছিল। এই ছবির গল্পে আমি একটু রগছটা টাইপের ছিলাম। এটা ছোটবেলা থেকেই। দেখা যায় সবাইকে আমি সমানে পিটাচ্ছি। এ জন্য মা বাবা বোন সবাই আমাকে ভয় পায়। ভাই জায়েদ আমাকে এ কারণে খুব ভালোবাসে। তার যে কোনো সমস্যায় আমি পাশে দাঁড়াতাম। এক কথায় সবাই দারুণ সহযোগি ছিল। সব কিছু মিলে এটা আমাদের গল্প। নিজেদের জীবনের গল্প। আশা করি দর্শকদের ভালো লাগবে।

ইটিভি অনলাইন: ‘অন্তর জ্বালা’ কি দর্শকদের মনের জ্বালা মেটাতে পারবে?

জয় চৌধুরী: আমি বিশ্বাস করি ‘অন্তর জ্বালা’ দর্শকদের মনের তৃপ্তি মেটাতে সক্ষম হবে। তাদের ভালো ছবির জন্য দীর্ঘ দিনের যে অপেক্ষা সে জ্বালা মেটাবে। আমাদের দেশে একটা পরিবারে যে ধরনের বন্ধন থাকে বা সিটিউশন ফিল করতে হয়। আমাদের ছবিতে সেটাই আছে। ছবির মূল বিষয়টাই হলো ভালোবাসা। পারিবারিক ভালোবাসাকেই আমরা তুলে ধরেছি। পুরো ছবিতে ভালোবাসার চিহৃ আছে। বলতে পারি এটা একটা সুন্দর পারিবারিক ছবি। একেবারে ন্যাচারাল ছবি। বাংলা ছবিতে এখন কিছু আইটেম সং থাকে যে কারণে পরিবারের সবাই মিলে দেখতে পারে না। এক্ষেত্রে বলবো ‘অন্তর জ্বালা’ একটি পারিবারিক ছবি। সবাই একসঙ্গে বসে দেখতে পারবে।       

ইটিভি অনলাইন: ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সম্পর্কে কিছু বলুন?

জয় চৌধুরী: ‘অন্তর জ্বালা’র মিউজিক অসাধারণ মিউজিক হয়েছে। মিউজিক করেছেন আলি আকরাম শুভ। টানা ৯০ দিন তিনি ছবির মিউজিক নিয়ে কাজ করেছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর তৈরি করেছেন। আমাদের দেশে যেখানে ৩ মাসে পুরো সিনেমাই সেন্সর হয়ে রিলিজ হয়ে যায়, সেখানে আমরা মিউজিকের জন্যই ৩ মাস সময় ব্যয় করেছি। একেবারে যত্নসহকারে এটা করা হয়েছে। এ মুহুর্তে বলতে গেলে বাংলা ছবির বাজার খুবই খারাপ। সবাই মনে করে বড় বাজেটের জয়েন্ট ভেঞ্চার ছবি হলেই ভালো ছবি হবে। এ জন্য আমরা একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। সবাই মিলে সর্বাত্বক ভালো করার চেষ্টা করেছি। বলতে পারি এটা আমাদের বেস্ট ছবি। এর চেয়ে ভালো ছবি মনে হয় আমরা আর কখনো বানাতে পারবো না।

ইটিভি অনলাইন: পরিচালক মালেক আফসারী বলেছিলেন ছবি না চললে আর সিনেমা বানাবেন না, এ সম্পর্কে কিছিু বলুন?

জয় চৌধুরী: পরিচালক মালেক আফসারী স্যার অসম্ভব ধৈর্য্যশীল একজন মানুষ। কাজের সময় তিনি খুবই কুল মাইন্ডে থাকেন। যদি তার কাছে কখনো মনে হয় শট হচ্ছে না, তখন তিনি একটু বিশ্রাম দেন। কাজের ব্রেক দেন। কারো কাজ ঠিক মতো না হলে বকা দেওয়া বা গালি দেওয়া এটা কখনো করেন না। পাঁচ মিনিট বা দশ মিনিটের জন্য সময় দেন। একটু ঘুরে এসে আবার শুরু করেন। রিলাক্স দেন। তার কনফিডেন্স এতটাই ভালো যে, তিনি বিশ্বাস করেন মুভিটা ভালো হবে এবং সবাই ভালো করবে।

এই ছবি যদি ভালো না হয় তাহলে তিনি আর ছবি করবেন না। এটা তার ফাইনাল ডিসিশন। আর আমারও ডিসিশন একই রকম। এই ছবি যদি ভালো না চলে তাহলে আমি আর ছবি করবো না। এই জগত ছেড়ে দেব। এটা আমার শেষ ছবি। এই ছবির জন্য আমরা পুরো একটা বছর প্রি প্রোডাকশনে কাজ করেছি। অন্য কোনো ছবিতে কাজ করতে পারি নাই। আমাদেরকে পরিচালক এই সময় ছবির জন্য তৈরি করেছেন। যা যা দরকার এক বছরের মধ্যে সব কিছু করেছি। এই ছবির পেছনে দুই তিনটা বছর পার করেছি।  অনেক কষ্ট হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কষ্ট আর কোনো ছবিতে করা হবে কিনা জানি না। এখন এই ছবির যদি ভালো রেজাল্ট আসে তাহলে অন্য ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা হবে। অন্যথায় এটাই শেষ ছবি। বলতে পারি এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

 

এসএইচ /

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি